বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন ও জাতীয় রূপরেখা ঘোষণায় সমর্থন জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। একই সঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কারের একটি রূপরেখা হাজির করেছে রাষ্ট্র সংস্কারের স্লোগানে জন্ম নেওয়া এই দলটি। শনিবার রাতে দলীয় প্যাডে এক বিবৃতিতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে একটি রূপরেখা উপস্থাপন করেছে ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের বিবৃতি:
প্রিয় দেশবাসী,
আপনারা জানেন, চলমান কোটাসংস্কার আন্দোলনে বিগত ১৬ই জুলাই থেকে দেশব্যাপী সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণের ওপর বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন এক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। রাষ্ট্রের সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনী ও সরকারী দলের সন্ত্রাসীসের বহুমুখী আক্রমণের মুখেও শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষও আজ তাদের সকল সামর্থ্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতি গণঅভ্যুত্থানের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে।
শহীদ আবু সাঈদসহ শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন আজ পুরো বাংলাদেশ রাষ্ট্রেরই সংস্কার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
৩রা আগস্ট শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের জাতীয় রূপরেখা নির্মাণের যে ঘোষণা দিয়েছে তারই প্রেক্ষাপটে আমরা এই রূপরেখা তাদের কাছে এবং একইসাথে আন্দোলনরত সকল দল, সংগঠন, ব্যক্তিসহ বাংলাদেশের সকল নাগরিকের কাছে উত্থাপন করছি।
১) সরকারের পদত্যাগ/অপসারণ
ক) সর্বস্তরের মানুষের ওপর গণহত্যা পরিচালনার জন্য দায়ী প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে সংবিধানের ৫৭ (১)(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
খ) প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৫৭ (১)(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকারী শক্তিকে সাথে নিয়ে তাকে অপসারণে বাধ্য করা হবে।
২। রাষ্ট্রপতির কাজ:
ক) দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই রাষ্ট্রের সর্বস্তরের নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
খ) দায়িত্ব গ্রহণের ৭ দিনের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালীন সময়ে আটককৃত সকল শিক্ষার্থী, নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
গ) দায়িত্ব গ্রহণের ১০ দিনের মধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আন্দোলনরত সকল শক্তির সাথে আলাপের ভিত্তিতে সর্বজন গ্রহণযোগ্য কিছু ব্যক্তির নামের তালিকা প্রস্তুত করবেন, যাদের মধ্য থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে একজনকে দায়িত্ব প্রদান করা হবে।
ঘ) সংক্ষিপ্ত তালিকার মধ্য থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিগণ একজনকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে মনোনীত করবেন, এবং তাকেই রাষ্ট্রপতি উক্ত দায়িত্বে নিয়োগ দেবেন।
ঙ) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ সকল আন্দোলনকারী দল ও সংগঠনের সাথে সংলাপের ভিত্তিতে ১০ থেকে ১৫ জনকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দেবেন। উল্লেখ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানসহ কোনো উপদেষ্টা পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
৩। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ
ক) জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালীন গণহত্যার পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা এবং নির্দেশ পালনকারীদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসবেন।
খ) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা এবং ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সড়ক ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিসমূহ বাস্তবায়ন করবেন।
গ) চলমান আন্দোলনে জনগণের মধ্যে দানা বাঁধা ‘রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট বিভাগ/প্রতিষ্ঠান/আইন-কানুন/সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাস্কফোর্স গঠন এবং গণ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
ঘ) টাস্কফোর্স দ্বারা প্রস্তাবিত এবং গণ-আলোচনার মাধ্যমে উত্থাপিত প্রস্তাবসমূহের সমন্বয়ে ‘সংবিধান সংস্কারের ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরি করবেন। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার যাতে সেই ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকে তার ব্যবস্থা করবেন।
ঙ) সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন সৃষ্টি করবেন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয় সংস্কার করবেন।
চ) সংবিধান সংস্কার এবং সরকার গঠনের জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবেন এবং নির্বাচন শেষে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
৪। নির্বাচিত সরকারের প্রথম কাজ
ক) দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত ‘সংস্কার ফ্রেমওয়ার্ক’ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন।
খ) গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার করা সংবিধান চূড়ান্তভাবে পাশ করবেন।
গ) গণভোটে পাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত সরকারের রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
ঘ) গণভোটে সংস্কারকৃত সংবিধান পাসের পর সেই সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।
এদিকে রবিবার বেলা সাড়ে ১২টায় দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
দলের মিডিয়া ও প্রচার সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন স্বাক্ষরিত পৃথক বিবৃতিতে জানানো হয়, পল্টনে মেহেরবা প্লাজার দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুমসহ জাতীয় ও নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
(ঢাকাটাইমস/০৪আগস্ট/এসআইএস)