রাজনৈতিক দলের পেটোয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করতে চাই না: সাতক্ষীরা পুলিশ  

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা:
 | প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট ২০২৪, ২২:২৩

সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্সে ১১ দফা দাবিতে পুলিশ সদস্যদের কর্মবিরতি ও শোক র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার বিকালে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্সে সমন্বয় কমিটির দেওয়া ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন পুলিশ সদস্যরা। তবে কবে নাগাদ তারা কাজে যোগ দেবেন সে বিষয়টি এখনও ‘অজানা’।

বিক্ষোভ ও কর্মবিরতির এই কর্মসূচিতে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অন্যায়ের কথা তুলে ধরে তাদের শাস্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা কারো শত্রু বা প্রতিপক্ষ না। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করি। আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত হই। আমরা জনতার পুলিশ হতে চাই। আমরা কোনো রাজনৈতিক নেতা বা দলের পেটোয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করতে চাই না। আপনারা যারা পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় বা পুলিশের ওপর আক্রমণ করছেন, তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমাদের এভাবে আর আক্রমণ করবেন না। আমরা আপনাদেরই সন্তান, আপনাদেরই ভাই। আমরা রাস্তায় বের হতে পারি না। আমাদের সহকর্মীদের বিভিন্নভাবে হত্যা করা হচ্ছে। হত্যা করে তাদের লাশ ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে, পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছি।

এসময় পুলিশ সদস্যরা আরও বলেন, আমরা কারো শত্রু বা প্রতিপক্ষ না। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করি। আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত হই।

পুলিশ সদস্যদের দাবি গুলো হলো- স্বাধীন কমিশন গঠন, পুলিশ বাহিনীকে সংস্কার করে দলীয় প্রভাব মুক্ত জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত করা, যে রঙের ইউনিফর্ম পরিধান করে কলঙ্কিত হয়েছে সেই পোশাকের রং পরিবর্তন করে কনস্টবল থেকে আইজি পর্যন্ত একই ড্রেসকোড নির্ধারণ করা।

সকল পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, একই সঙ্গে যে সকল সিনিয়র অফিসাররা ক্ষমতা লোভী এবং যাদের কারণে শতশত পুলিশ সদস্য ও সাধারণ ছাত্র-জনতা মৃত্যু বরণ করেছেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বিচার করাসহ তাদের অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।

চলমান সহিংসতায় যে সকল পুলিশ সদস্য আহত ও নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে, যে সকল সদস্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জানমালের নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার বিভাগীয় ব্যবস্থা অথবা হয়রানি করা যাবে না।

সকল পুলিশ সদস্যদের অন্যান্য সংস্থার চাকুরির মতো শ্রম আইন অনুযায়ী ৮ (আট) ঘণ্টা কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যদি ৮ (আট) ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয় তাহলে ওভার টাইম হিসেবে গণ্য করতে হবে।

ইন্সপেক্টর থেকে ৬০% এবং ৪০% এএসপি পদে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে। পদোন্নতির জটিলতা নিরসনের জন্য সকল পদে পদোন্নতির জন্য সুপার নিউমারারি চালু করতে হবে এবং ন্যূনতম পুলিশ সুপার পর্যন্ত পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। অধস্তন পুলিশ সদস্যদের টিএ/ডিএ বিল যথা সময়ে প্রদান করতে হবে ও সোর্সমানি প্রদান করতে হবে। ঝুঁকি ভাতা বেসিক এর ৭০% দিতে হবে এবং ফ্রেশমানি পুলিশ সদস্যের ব্যাংক হিসাবে দিতে হবে।

আমাদের সকল পুলিশ সদস্য ও পরিবারের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং তার পাশাপাশি ব্যক্তিগত চিকিৎসা করা হলে তাহার ভাউচার অনুসারে কল্যাণ তহবিল থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

বিভাগীয় পদোন্নতির ক্ষেত্রে একবার পরীক্ষায় পাশ করার পরে পর্যায়ক্রমে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা এবং অধস্তনদের পদোন্নতি বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনে সুপার নিউমারারি পদ সৃজন করতে হবে।

ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিগত ১৫ (পনেরো) বছরে যারা সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের দায়িত্ব দিতে হবে এবং ওসি হিসেবে ২ (দুই) বারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না এবং ৫৪ (চুয়ান্ন) বছরের বয়সের সীমাবদ্ধতা তুলে দিতে হবে।

অধস্তন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে পিআরবি অনুসারে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতে হবে এবং ব্যক্তিগত কাজে কোনো সদস্যকে ব্যবহার করা যাবে না। একইসঙ্গে কনস্টেবল থেকে সকল পর্যায়ের অফিসারদের পোস্টিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।

সার্জেন্ট এবং সাব-ইন্সপেক্টরদেরকে পিএসসির অধীনে একই নিয়োগের মাধ্যমে সকল ইউনিটে পদায়ন করতে হবে এবং বর্তমানে কর্মরত সার্জেন্টদেরকে তদন্ত ক্ষমতা দিতে হবে ও এটিএসআইকে এএসআই (নিরস্ত্র) হিসেবে সমন্বয় করতে হবে। জনগণের স্বার্থে এবং সুষ্ঠু ট্র্যাফিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ট্রাফিক বিভাগের অবৈধ রেকার বাণিজ্য বন্ধ করা এবং মামলার টার্গেট প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে।

কমিউনিটি ব্যাংক এবং সকল কল্যাণ তহবিলের সুস্পষ্ট হিসাব প্রতিবছর সকলকে প্রদান করতে হবে এবং লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার ৬% এর নিচে নিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে সমন্বয় করতে হবে।

নবম গ্রেড থেকে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে ৬ষ্ঠ গ্রেড নিশ্চিত করতে হবে এবং একই পদে সর্বোচ্চ ৬ (ছয়) বছরের মধ্যে পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে।

ইন্সপেক্টর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাকুরি হারালে সকলেই পেনশন সহ সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা পায় কিন্তু কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত এই সুবিধা দিতে হবে এবং সারা বাংলাদেশে যে সকল সদস্যদের বরখাস্ত করে রাখা হয়েছে তাদেরকে মানবিক কারণে বিবেচনা করতে হবে।

প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে প্রতি বছর ২০ (বিশ) দিন অর্জিত ছুটি বাধ্যতামূলক ভোগ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রত্যেক পুলিশ সদস্য নিজ রেঞ্জে পর্যায়ক্রমে পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অধস্তন পুলিশ সদস্যদের ১০০% আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

পুলিশের সকল সদস্য সকল ইউনিটে চাকুরি করার সুযোগ রাখতে হবে। কোনো (স্বায়ত্বশাসিত এবং টেকনিক্যাল) ইউনিট থাকবে না। সবাইকে সব ইউনিটে বদলির সুযোগ থাকতে হবে। পুলিশ সুপারের নিচে বডিগার্ড, অডার্লি নিয়ম বন্ধ করতে হবে।

আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশ না করলে সমগ্র বাংলাদেশে পুলিশের কর্মবিরতি চলমান থাকবে বলে জানান বিক্ষোভকারী পুলিশ সদস্যরা।

ঢাকাটাইমস/০৯আগস্ট/পিএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

সাতক্ষীরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সভা ভন্ডুল

বগুড়ায় আ.লীগ নেতাকর্মী ও সাংবাদিকসহ ১২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

যোগদান করেই আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিলেন চাঁদপুরের ডিসি

সোনারগাঁয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জশনে জুলুস 

লক্ষ্মীপুরে চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীর ওপর হামলার অভিযোগ 

বাগমারার আলোচিত সাবেক এমপি এনামুল গ্রেপ্তার

জেলখানার ভাইদের কথা শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি: সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল 

সাতক্ষীরায় টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন, ভেসে গেছে হাজারও মৎস্য ঘের 

সদরপুরে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আলোচনা সভা  

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :