স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত মেয়র চেয়ারম্যান কাউন্সিলর সদস্যদের জন্য দুঃসংবাদ
সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিতদের জন্য দুঃসংবাদ আসছে। দেশের সিটি করপোরেশন-পৌরসভা, জেলা-উপজেলা পরিষদে প্রশাসক বসানো শুরু করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
প্রবল গণআন্দোলনের মধ্যে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। ওইদিন থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপিসহ দলের অন্যান্য নেতারাও আত্মগোপনে চলে যান।
ক্ষমতার পালাবদলের পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের অন্য সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও ধারাবাহিকভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচিত মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কর্মস্থলে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। আবার জনগণও সেবা বঞ্চিত হচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে গত ১৪ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর, জেলা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যরা কোথায় আছেন জানতে চাওয়া হয়।
একইদিনে স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি আদেশ জারি করে। আদেশে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে পূর্ণ আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করার কথা বলা হয়।
ওই আদেশের পর রবিবার চট্টগ্রামের হাটহাজারি পৌরসভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম মশিউজ্জামানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর মধ্য দিয়ে সিটি করপোরেশন-পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ শুরু হলো, যা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জন্য দুঃসংবাদ বটে।
অবশ্য এর আগে শনিবার (১৭ আগস্ট) স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ এবং প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে চারটি আইন সংশোধন করে দুটি করে নতুন ধারা যোগ করা হয়।
আইনগুলো হচ্ছে, ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯; স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯; জেলা পরিষদ আইন ২০০০ এবং উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮।
সংযোজিত দুটি ধারার একটিতে যুক্ত করা হয়, সরকার বিশেষ পরিস্থিতিতে এসব সংস্থার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করতে পারবে। অন্য একটি ধারায় বলা হয়, এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলী সম্পাদনের উদ্দেশে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে।
সরকারের একাধিক সূত্রে ঢাকা টাইমস জানতে পেরেছে, দেশের বর্তমান পটপরিবর্তনের মধ্যে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান যেন জনগণকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান করা ও সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখার পাশাপাশি জনস্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে চারটি অধ্যাদেশ সংশোধন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে করার চল শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এ জন্য সংসদের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আইনের সংশোধন করা হয়। এর ফলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন নিয়ে দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রার্থীরা ভোটের লড়াইয়ে নামতেন। তবে গত সাড়ে ১৫ বছরে স্থানীয় সরকারে জনপ্রতিনিধিদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত।
(ঢাকাটাইমস/১৯আগস্ট/ডিএম)