কিডনি ও লিভার সুরক্ষিত রাখে ভেষজ লেবু, ক্যানসার রোধে কেমোথেরাপির চেয়ে কার্যকরী

বাংলাদেশে লেবু পরিচিত ফলগুলোর মধ্যে একটি। গরমে খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখা জরুরি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে এই ভিটামিন। ভিটামিন সি এর চমৎকার উৎস হচ্ছে লেবু। এটি যেমন আমাদের হাইড্রেটেড থাকতে সহায়তা করে, তেমনি হজমেও সাহায্য করে। পানীয়তে মিশিয়ে খেতে পারেন লেবু, সালাদের উপরেও দিতে পারেন ছিটিয়ে। ভিটামিন সি-এর একটি সমৃদ্ধ উৎস হলো এই লেবু। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত লেবু খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
সাধারণত প্রতি ১০০ গ্রাম লেবুর রসে থাকে- ১২ কিলোক্যালরি, পানি ৯৬ শতাংশ, ফাইবার ১.৮ গ্রাম, সুগার ৩ গ্রাম, ভিটামিন সি ৪০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি ১০.০৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি ৬০.০৪ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন বি-ই ০.৪ মিলিগ্রাম। লেবুর রয়েছে নানা জাত ও নাম। সব লেবুর উপকারিতা একই রকম না হলেও মানব শরীরের জন্য সব লেবুই উপকারী। বাংলাদেশে লেবুর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কাগজি, এলাচি, গোড়া, জারা, ঝোটা, চায়না, বীজশূন্য শরবতী ও চট্টগ্রামী লেবু।
লেবু শরীরকে সতেজ রাখার পাশাপাশি ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে। নিশ্চিত করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। জেনে নিন লেবুর স্বাস্থ্য উপকারিতা-
ইলেক্ট্রোলাইট প্রদান করে
লেবুতে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো ইলেক্ট্রোলাইট থাকে যা সঠিক তরল ভারসাম্য এবং পেশীর কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। ঘামের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রোলাইট পুনরায় পূরণ করতে সাহায্য করে লেবু।
আর্দ্রতা বজায় রাখে
গরমে প্রশান্তি লাভেরও অন্যতম উপায় লেবুর শরবত পান করা। লেবুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, শরীরের পিএইচের সমতা রক্ষা করতে পাতিলেবুর রস দেওয়া শরবতের জুড়ি মেলা ভার। লেবুর শরবত শরীরে খনিজের অভাব পূরণ করতে না পারলেও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখে। আর্দ্রতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে। তৃষ্ণা মেটাতে লেবুর শরবতের তুলনা নেই।
বিষাক্ত পদার্থ নিষ্কাশন
পানির মাধ্যমে শরীরের ক্ষতিকর পদার্থ বের হয়ে যায়। লেবু হচ্ছে প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক। তাছাড়া লেবুর সিট্রিক এসিড পাকস্থলি পরিষ্কার রেখে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ করে
লেবু ‘ভিটামিন সি’ এর ভালো উৎস। ভিটামিন সি অ্যান্টিআক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া নানাবিধ পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি মোকাবেলা করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ভালো রাখে। সিট্রাস গোত্রের ফল যেমন লেবু, বাতাবি লেবু বা কমলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অসকর্বিক অ্যাসিড। ভিটামিন সি ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে এবং অসকর্বিক অ্যাসিড শরীরে আয়রন গ্রহণে সহায়তা করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
শরীরের ওজন কমায়
ওজন কমাতে প্রায় প্রত্যেক পুষ্টিবিদ সকালে খালি পেটে এক গ্লাস লেবু পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন। এটা শরীরের হজমশক্তি বাড়ায়। এছাড়া শরীর থেকে সব ধরনের টক্সিন বের করতে সাহায্য করে, কোষ্টকাঠিন্য কমায়।
হজমে সাহায্য করে
দিনের শুরুতে পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। অন্যদিকে লেবু পাকস্থলি পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে আর বর্জ্য নিষ্কাশনে সহায়তা করে।
কিডনি ভালো রাখে
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু কিডনিতে পাথর জমা হতে বাঁধা দেয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত লেবু পানি পান করলে কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
লিভার সুস্থ থাকে
নিয়মিত লেবু পানি পান করলে লিভার সুস্থ থাকে। এতে চর্বি জমতে বাঁধা দেয়। এছাড়া লিভারের বিভিন্ন অসুখ বিসুখের ঝুঁকি কমায়।
ক্ষারের সমন্বয়
শরীরে হাইড্রোজেনের পরিমাণের উপর অনেকাংশে সুস্থতা নির্ভর করে। সর্বমোট পিএইচ বা পাওয়ার অফ হাইড্রোজেন স্কেল হল ১ থেকে ১৪। মানবদেহে ৭ মাত্রার পিএইচ থাকা স্বাভাবিক। এর থেকে কম বা বেশি হলে শরীরে রোগের বিস্তার হতে পারে। অ্যাসিডিক বা ক্ষারীয় ফল হলেও লেবু মানবদেহে পিএইচ’য়ের মাত্রা সমন্বয় করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যারা বেশি মাংস, পনির বা অ্যালকোহল গ্রহণ করেন তাদের জন্য লেবু সবচেয়ে বেশি উপকারী।
শক্তি বর্ধক
পানি এবং লেবুর রস শরীরে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং রক্তে অক্সিজেন যুক্ত করে। ফলে শরীরে শক্তি সঞ্চার হয়।
ত্বক সুন্দর করে
দীর্ঘক্ষণ পানিশূণ্য থাকলে ত্বক ম্লান দেখায়। সকালে লেবুর শরবত খেলে এর ভিটামিন সি ত্বক সুস্থ রাখে। আর লেবুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
দীর্ঘ পরিশ্রমের পর শরীরে লবণের ভারসাম্য আনতে সাহায্য করে। প্রচণ্ড গরমে লেবুর শরবত পান করুন নিজেকে সতেজ রাখুন এবং আরো বেশি কর্মদ্যোমী হয়ে উঠুন।
পানি ধারণ কমায়
লেবু প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক। এর মানে এটি আপনার শরীরকে অতিরিক্ত পানি থেকে মুক্তি দিতে এবং পিএইচ মাত্রার ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এর যার ফলে শরীরে ফোলার সমস্যা কমে যায়। তাই এ ধরনের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চাইলে নিয়মিত লেবু খেতে হবে।
ক্যানসার প্রতিরোধ করে
মরণব্যাধি হিসেবে পরিচিত ক্যান্সার রোধে কেমোথেরাপির চেয়ে হাজার গুণ ভালো কাজ করে লেবু মিশ্রিত গরম পানি। গবেষকদের মতে, ক্যান্সার কোনো মরণব্যাধি নয়। মানুষ এই রোগে মারা যায় শুধুমাত্র উদাসীনতার কারণে। মাত্র দুটি উপায় অনুসরণ করলেই সে সব মানুষ বাঁচতে পারবে ক্যানসার থেকে। তার মধ্যে একটি হলো- চিনি খাওয়া ছেড়ে দেওয়া। কারণ, শরীর চিনি না পেলে ক্যানসার সেলগুলো প্রাকৃতিকভাবেই বিনাশ হয়ে যায়। দ্বিতীয় উপায়টি হলো- এক গ্লাস গরম পানিতে একটি লেবু চিপে মিশিয়ে নিতে হবে, টানা তিন মাস সকালে খাবারের আগে খালি পেটে সেই পানি পান করতে হবে। তাতেই উধাও হয়ে যাবে ক্যানসার।
(ঢাকাটাইমস/২২ এপ্রিল/আরজেড)

মন্তব্য করুন