নিঃশব্দ ভালোবাসার ফক্স

আমাদের বিড়ালের নাম ছিলো—ফক্স,
শব্দহীন পদচারণায় ঢুকে পড়ত
আমাদের গল্পে, ঘরের প্রতিটি আড্ডায়।
ওর দোলানো লেজে থাকত আনন্দের ইশারা,
চোখের গভীরে—নিঃশব্দ ভালোবাসার আশ্বাস।
.
মাহিব, মাহির আর ছোট্ট আভা—
তাদের কোমল হৃদয়ের দোলনায়
ফক্স ছিল এক অনন্য সাথি।
তিনজোড়া মায়াভরা হাতে যত্নে আগলে রাখা,
আর ফক্সও বুঝত—
এই ঘর, এই ভালোবাসাই তার ঠিকানা।
.
কিন্তু এক সকালে
নেমে এলো নীরব এক ঝড়—
বেলকোনি পেরিয়ে হঠাৎই নিচে পড়ে গেল সে।
রক্তাক্ত, নিস্তব্ধ, বুকের ভিতর যেন কাঁপন ধরে এলো।
রক্তে ভেজা শরীরে, কাঁপা কাঁধে ছুটে গেলাম হাসপাতালে
তখনো বিশ্বাস ছিলো—ফক্স ফিরবে,
নিশ্চয়ই ফিরবে কিছুটা আহত শরীরে।
.
স্যালাইন চলছিলো…
কিন্তু ডাক্তার চোখ নামিয়ে বললেন—
“আর কিছু করার নেই, আমরা দুঃখিত…”
ঠিক তখনই ফক্স—
ক্ষনিকের তরে চোখ মেলে চিরতরে নিথর হলো।
.
চারপাশে নেমে এলো শোকের নীরবতা,
মাহিব কাঁদে—অবিরাম নয়নে,
মাহির ঠোঁটে শুধু ফিসফিস, “ফক্স কেন গেলো?”
আভা চুপচাপ, চোখের জলে বলে—
“কিটেলও তো কিছুদিন আগেই হারিয়ে গেলো বাবা…”
.
দুটি প্রাণ,
দুটি নিঃশর্ত ভালোবাসা,
দুটি শূন্যতা বয়ে গেলো—
আমাদের ঘরের প্রতিটি কোণে
মমতার ছায়া ফেলে চিরতরে হারিয়ে গেল ফক্স।
.
আর আমি?
আজও চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই—
অফিস শেষে ঘরে ফিরতেই ছুটে আসতো ফক্স,
পায়ের পাশে বসে মুখ ঘষে বলতো মায়ায়—
“তুমি ফিরেছো—এই তো আমার দিন শেষ।”
.
সকালে অফিসে যাবার সময়,
ওর দৃষ্টিতে থাকত এক নিরব অনুরোধ—
ঠিক মাহিব, মাহির আর আভার মতো করে বলতো,
“আজ কিন্তু দেরি কোরো না বাবা…”
.
ওর অভিমান ছিলো নীরব,
আদুরে দাবি ছিলো স্পষ্ট—
বিছানায় জায়গা দখল,
কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়া…
সে এক অসাধারণ ভালোবাসা—
যে ভালোবাসা শব্দ ছাড়াই হৃদয় ছুঁয়ে যেত।
.
আজ ফক্স নেই,
তবু মনে হয় খাবার টেবিলের পাশে সে বসে আছে,
সন্ধ্যার নরম আলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে—
আমরা এখনও খুঁজি, সেই নরম পায়ের শব্দ।
.
কি আজব এই পৃথিবী—
কতো মানুষই আসে, আবার নিরবে চলে যায়,
স্মৃতি ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যায়,
তবু ফক্স…
সে থেকে গেছে এক নিঃশব্দ সঙ্গী হয়ে,
আমাদের জীবনের এক অমোচনীয় স্মৃতি হয়ে।
.
আজও মনে হয় ফক্স আছে—
ওদের চোখের জলে, স্মিত হাসিতে,
ভালোবাসার দীর্ঘ নিঃশ্বাসে।
.
ফক্স ছিলো—হয়তো অনেকদিন থাকবে,
শুধু একটি বিড়াল হয়ে নয়—
বরং এক পরিবারের নিখাদ ভালোবাসা হয়ে,
চিরন্তনের সঙ্গী হয়ে।

মন্তব্য করুন