‘অস্তিত্ব সংকটের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: জো বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশ এখন এক অন্ধকার সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে নির্বাহী শাখা যেন ‘সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে’।
শিকাগোয় ন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের ১০০তম বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘১৯৬০-এর দশকের পর এই প্রথম মার্কিন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এত বড় আক্রমণের মুখে পড়েছে।’
১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন কৃষ্ণাঙ্গ আইনজীবী, বিচারক ও প্রফেসরদের সংগঠন। বাইডেন তার বক্তব্যে কৃষ্ণাঙ্গ আইনজীবীদের নাগরিক অধিকার আন্দোলনে ভূমিকার কথা তুলে ধরেন এবং বলেন, ‘এই উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আজ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইতিহাস, সমতা এবং ন্যায়বিচারের ধারণাকেই মুছে দিতে চাচ্ছে। আইনজীবী প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন রাজনৈতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করছে। ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ানোর বদলে তারা ক্ষমতার কাছে মাথা নিচু করছে। এটা হতাশাজনক।
বাইডেন বলেন, ‘এই প্রশাসন যা করছে, তা শুধু নিজেরাই করছে না; তাদের পাশে রয়েছে এমন এক কংগ্রেস, যারা চুপ করে বসে থাকে। আর সর্বোচ্চ আদালত যেন সবকিছুকে বৈধতা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে। তারা যা রায় দিচ্ছে, আমার ঈশ্বর!’
তিনি ‘এই লোকটা’ বলে ইঙ্গিতে ট্রাম্পকে উল্লেখ করেন এবং বলেন, ‘দেশ যে চাপে আছে, সেই চাপ অভূতপূর্ব। আমেরিকানরা এখন নতুন করে বুঝতে পারছে সংবিধান, আইন এবং বিচার ব্যবস্থার গুরুত্ব কী।’
বাইডেন অভিযোগ করেন, ‘অনেক নামকরা আইনজীবী প্রতিষ্ঠান এখন রাজনৈতিক চাপে মাথা নিচু করছে। তারা ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে না। এটা হতাশাজনক।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু রাজনীতিক অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নিষ্ঠুর নীতিকে যেভাবে উল্লাসের সঙ্গে গ্রহণ করছেন, তা ভয়ানক।’
ভাষণে নিজের বয়স নিয়েও রসিকতা করেন বাইডেন। বলেন, ‘আমি আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে নির্বাচিত হওয়া সিনেটর, আবার সবচেয়ে বেশি বয়সে নির্বাচিত হওয়া প্রেসিডেন্টও! বুঝতেই পারছেন, একই বয়সে দুইবার ৪০ হওয়াটা কেমন!’
বর্তমানে প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছেন বাইডেন। হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর থেকে তিনি অধিকাংশ সময় কাটাচ্ছেন ডেলাওয়ারের নিজ বাড়িতে এবং জনসমক্ষে খুব কমই দেখা যাচ্ছে তাকে। মাঝে মাঝে ভাষণ দিচ্ছেন এবং নিজের নতুন বই নিয়ে কাজ করছেন।
ভাষণের শেষাংশে বাইডেন আমেরিকানদের সাহসিকতার সঙ্গে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এটা এমন ক্লায়েন্টের পক্ষে দাঁড়ানো, যে বড় চেক লিখতে পারে না, কিন্তু তার অধিকার রক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। সংবিধানবিরোধী হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামা, মতপ্রকাশ করা, প্রতিষ্ঠানের পক্ষে লড়াই করা— এসব আমাদের করতে হবে দেশের আত্মাকে রক্ষার জন্য।’
উল্লেখ্য, এই ভাষণের কয়েকদিন আগেই বাইডেনের মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের একটি তদন্ত শুরু হয়েছে।
বাইডেনের এই বক্তব্য দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে তার স্পষ্ট অবস্থান নতুন করে মার্কিন রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়িয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২ আগস্ট/আরজেড)

মন্তব্য করুন