কৃষিজমিতে বালু উত্তোলন, অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার নেই!
শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে ব্যক্তিমালিকানাধীন কৃষিজমি থেকে জোরপূর্বক অবৈধভাবে বালু তুলছে একটি প্রভাবশালী মহল। প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা পাইপ টেনে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে আবাদি জমি নষ্ট হয়ে জলাশয় সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
এ নিয়ে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক, উপজেলা ভূমি অফিস ও বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও স্থানীয় এলাকাবাসী। কিন্তু এখনো কোনো প্রতিকার মেলেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাগেরপাড়া ইউনিয়নের হলইপট্টি গ্রামে ঢালীবাড়ি মসজিদের পাশে ও বালিকুঁড়ি ব্রিজের পশ্চিম পাশে কৃষিজমি থেকে বেলায়েত তালুকদার, তামিম, নাসিরসহ কয়েকজন তাদের লোকজন নিয়ে কৃষিজমি দখল করে সেখানকার ১০ শতাংশ জমি থেকে বালু উত্তোলন করছেন।
এ নিয়ে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দেয়া হলেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বালখেকোরা। এতে হুমকির মুখে পড়েছে আবাদি জমি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢালীবাড়ি মসজিদ ও বালিকুড়িঁ ব্রিজের পশ্চিম পাশ থেকে ফসলি জমির মাঝখানে তিনটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এতে ওই কৃষিজমির মাঝখানে জলাশয়ের মত খাদের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে কৃষি জমির পাড়গুলোতে। এ ছাড়া ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২০টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিনিয়ত বালু তোলা হয়।
স্থানীয় একাধিক কৃষকের অভিযোগ, নাগেরপাড়া এলাকার ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত বেলায়েত তালুকদার, তামিম, নাসির হোসেন বেআইনিভাবে কৃষিজমি থেকে বালু তুলছেন। সেই বালু নাগেরপাড়া এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছেন তারা। অনেকবার নিষেধ করার পরও তারা নিবৃত্ত হয়নি।
নিরুপায় হয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করাসহ কৃষিজমি রক্ষায় সরকারি বিভিন্ন দফতরে লিখিত আবেদন করা হয় জানিয়ে কৃষকরা বলেন, কিন্তু তাতে কোনো প্রতিকার মেলেনি এখনো।
একই এলাকার কৃষক আবুল কালাম, মনসুর আহমেদ ও আরিফ সরদার বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন কৃষিজমি বিনষ্ট করে লাখ লাখ টাকা খরচ করে দুই কিলোমিটারের বেশি পাইপ টেনে মেশিন বসিয়ে বালু তুলছেন বেলায়েত তালুকদার ও তামিম। এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ডিসি, ইউএনও ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছেন তারা। লিখিত দরখাস্তও দিয়েছেন তারা। কিন্তু প্রভাবশালী বেলায়েত তালুকদার ও তামিমের লোকেরা বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে কৃষকদের।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ড্রেজার মালিক তামিম হোসেন বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করে কাজ করি। কার কী ক্ষতি হলো সেটা আমার দেখার বিষয় নয়! এটা প্রশাসন দেখবে। আপনি ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলেন। আমি একা এই কাজ করি না। এই এলাকায় আরও ২০টা ড্রেজার আছে, সেগুলো আগে বন্ধ করেন।’
এ বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, এ ধরনের কাজে সম্পৃক্তদের ছাড় দেওয়া হবে না। দ্রুতই অভিযান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/৩ডিসেম্বর/মোআ)
মন্তব্য করুন