গোবিন্দগঞ্জের ঘটনা গণহত্যা: ফখরুল

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের নামে অধিগ্রহণ করা জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদের নামে সরকার গণহত্যা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, পুলিশ সরাসরি তাদেরকে গুলি করেছে। এটা গণহত্যা।
দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনায় ফখরুল এ কথা বলেন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের মুক্তি দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবক দল।
গত ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জে গত ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ আখ খামারের নামে অধিগ্রহণ করা জমিতে উচ্ছেদ অভিযানের সময় সাঁওতালদের সঙ্গে চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় প্রভাবশালী ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে তিনজন সাঁওতাল নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। পুলিশের উপস্থিতিতেই সেদিন লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয় শতাধিক বাড়িতে। এরপর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি সমান করে দিয়েছে।
ঘটনাটি সারাদেশে আলোড়ন তোলার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলও এলাকা পরিদর্শন করেছে। তারা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান এবং সন্তানদের পড়ালেখার উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি উচ্ছেদ অভিযানের নামে কোনো অন্যায় হলে শাস্তি দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
এর একদিন পর শিল্পসচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে অবশ্য উচ্ছেদ অভিযানের নামে কোনো নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ওই অভিযানের ঘটনায় তিনজন মারা গেলেও এতে উচ্ছেদের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেছেন সচিব। সচিবের দাবি, যে দুইজন মারা গেছে তাদের একজন মারা গেছেন ধানক্ষেতে পড়ে, আর অপরজন হাসপাতালে। বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করেন সচিব।
তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গোবিন্দগঞ্জে যারা নিহত হয়েছেন তাদেরকে মারা হয়েছে গুলি করে।’ তিনি বলেন, ‘সাঁওতালরা সবচেয়ে নিরীহ। তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। বাড়ি থেকে বের করে আগুন দিয়ে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কী অমানবিক! এটা গণহত্যার শামিল।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারের আমলে কোনো মানুষ নিরাপদ নয়। কোনো ধর্মের লোকও নিরাপদ নয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একটি অসভ্য সরকারের আমলে বাস করছি। এরা দেশকে জঙ্গলে পরিণত করেছে। মানুষকে এদের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।’
নাসিরনগরে হিন্দু ধর্মালম্বী ও গাইবান্ধার সাঁওতালদের ওপর হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ জড়িত বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা।
মির্জা ফখরুল সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, সরকারের চরিত্র হলো গ্রামের মোড়লদের মতো। কোনো জনপ্রিয়তা নেই। এদের কাজ হলো একজনকে অন্যজনের সঙ্গে লাগিয়ে দেয়।পরে মামলা করার পরামর্শ দেয়। এরপর সেখান থেকে কিছু টাকা পকেটে ভরে। সরকারও বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হওয়ায় মামলা-মোকাদ্দমা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে মোকাবেলা করছে।’
সরকারি দলের নেতা ও মন্ত্রীরা বিএনপিকে নিয়ে বিষোদগার করছে, মিথ্যা বলছে বলেও দাবি করেন দলটির মহাসচিব। এটাই তাদের প্রধান কাজ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘সরকার বলছে দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। হ্যাঁ প্রবৃদ্ধি বাড়ছে তবে তা আপনাদের দলের (আওয়ামী লীগ) নেতাদের। বিদেশে টাকা পাচার করা হচ্ছে, বিভিন্ন দেশে বাড়ি করছে। ’
গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে ফখরুল জানান, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিনাবিচারে অথবা বিচার চলাকালে ১৫১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের দলের অনেক নেতাকর্মী কারাগারে মারা যাচ্ছেন। এই হলো দেশের অবস্থা।
কোথাও ন্যায় বিচার পাওয়া যায় না এমন দাবি করে তিনি বলেন, ‘যখন প্রধান বিচারপতি নিজে বলেন বিচার বিভাগ স্বাধীন নয় তখন আমরা কোথায় যাবো।’
তিনি সরকারকে দেশে রাজনৈতিক সংকট কাটাতে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করার পরামর্শ দেন। ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশা করবো সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। আপনারা যেখানে আছেন সেখান থেকে নেমে পড়ুন। বিস্ফোরণের আগে সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।”
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর সভাপতিত্বে বিএনপি নেতাদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন রুহুল কবির রিজভী, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, ইয়াসিন আলী, গোলাম সরোয়ার, সাদরুজ্জামান,সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, লিটন মাহমুদ প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/১৪নভেম্বর/বিইউ/ডব্লিউবি/জেবি)

মন্তব্য করুন