সার্চ কমিটি
ফখরুল নিরাশ, তবে আশা দেখছেন মওদুদ
নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য নাম সুপারিশ করতে গঠন করা সার্চ কমিটি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের তেমন কোনো আশা নেই। এই কমিটি নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করতে পারবে বলে মনে করেন না তিনি। তবে একই দলের আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা মওদুদ আহমদের ভাবনা ভিন্ন। তিনি এই কমিটি নিয়ে বেশ আশাবাদী।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা এ কথা বলেন। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনে জাতীয় সংলাপের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে এই গোলটেবিলের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল।
মওদুদ বলেন, ‘কেউ কেউ সার্চ কমিটি নিয়ে কোনো আশা না করলেও আমি আশাবাদী। আশা করি তারা এমন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করবেন যারা অতীতে কোনো দলের সঙ্গে জড়িত নন।’
সার্চ কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা এমন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করবেন তাদের জ্ঞান, বুদ্ধি, সাহস ও ব্যক্তি চরিত্রকে প্রাধান্য দেবেন। কোনো দলীয় স্বার্থে এজন্য সার্চ কমিটির কাছে তার প্রত্যাশা তারা যেন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই এমন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করবেন।’
তবে মওদুদ আহমদের এই বক্তব্যের কিছুসময় আগে যুবদলের এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সার্চ কমিটি কি কাজ করবে তা স্পষ্ট। তাই তাদের কাছ থেকে নতুন কোনো আশার আলো দেখছি না।কারণ যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে গত ২৫ জানুয়ারি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছ সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। সার্চ কমিটির সদস্যরা আজ প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসেছে।
মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সার্চ কমিটি নিয়ে আমাদের যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো ঠিক তার উল্টো হয়েছে। বলেছিলাম, যাদের নিয়োগ দেয়া হবে তারা হবেন অবসরপ্রাপ্ত এবং সরকারি কোনো লাভজনক পদে নেই।এটাই ছিলো মূল সুপারিশ। আমরা কারো নাম দেইনি। শুধু নীতিটার কথা বলেছিলাম। কিন্তু দেখা গেলো হয়েছে উল্টোটা।’
সার্চ কমিটির সদস্যদের মধ্যে কেবল একজনের বিষয়ে আপত্তি নেই জানিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। বাকিদের সম্পর্কে দলীয়ভাবে বলা হয়েছে। নতুন কিছু বলার নেই।’
সার্চ কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে মওদুদ বলেন, ‘এমন কাজ করুন যাতে মানুষের আস্থা জন্মায়। যাতে মানুষ মনে করে আপনারা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য সুপারিশ করছেন। এটা আপনাদের উপর নির্ভর করছে। আপনারা যদি এমন মানুষদের নাম সুপারিশ করেন যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দলীয় বা কোনো বিশেষ দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, এমনকি আমাদের দলেরও সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের নাম সুপারিশ করাও উচিত হবে না। আমরা এটা চাই না।’
‘সেজন্য আশাবাদী তারা এমন ব্যক্তিদের সুপারিশ করবেন যাদের কোনো ধরণের দলীয় স্বার্থ ও সম্পৃক্ত নয় তাদের নাম। তাহলে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব হবে সেখান থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন করা।’- বলেন মওদুদ।
রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই এমন দাবি করে মওদুদ বলেন, ‘বিএনপি শেষ সময় পর্যন্ত সমঝোতার চেষ্টা করে যাবে। সেই সমঝোতা হতে হবে সরকার ও সত্যিকারের বিরোধী দলের মধ্যে। তা হবে নির্বাচন নিয়ে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করবো, আশা করি সরকার এগিয়ে আসবে। অন্যথায় আন্দোলনের কোনো বিকল্প থাকবে না।’
পুলিশের সাংবাদিক পেটানোর সমালোচনা
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের প্রতিবাদে জাতীয় কমিটির ডাকা হরতালে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়ে মওদুদ বলেন, ‘রামপাল এখন জাতীয় নয়, গ্লোবাল ইস্যু। সারা দুনিয়ার মানুষ এখন এটা নিয়ে আলোড়ন শুরু হয়েছে। সব জায়গায় এর বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছে। কিন্তু সেই হরতালে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশ আক্রমণ করলো অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন কিছু হয়নি। একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। মোট কথা হলো- কোনো দ্বিমত থাকতে পারবে না। সরকারের কাজের কোনো বিরোধীতা করা যাবে না। কিন্তু এটা তো সাংঘাতিক ব্যাপার। সরকারের বোঝা উচিত এই সরকারই শেষ সরকার নয়।’
(ঢাকাটাইমস/২৮জানুয়ারি/বিইউ/ডব্লিউবি)