সিলেটের ‘জঙ্গি আস্তানা’য় তৃতীয় দিনেও চলছে অভিযান

সিলেটের সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চলছে এখনও। তবে আস্তানায় এখনও ঢুকতে পারেনি সেনা-কমান্ডোরা। ভেতরে শক্তিশালী বিস্ফোরকের মজুদ থাকার আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
শুক্রবার ভোরের আগে আগে আতিয়া মহল নামে বাড়িটি ঘেরাও করে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। সঙ্গে যোগ দেয় সিলেট মহানগর পুলিশের একটি দল। পরে ঢাকা থেকে যায় পুলিশের বিশেষ ইউনিট সোয়াট।
সোয়াট গেলেই অভিযান শুরু হবে- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা এমনটি জানালেও জঙ্গিরা ভেতর থেকে সোয়াট পাঠানোর চ্যালেঞ্জ দেয়। এরপর অভিযানে পাঠানো হয় সেনাবাহিনীর কমান্ডো দলকে।
শুক্রবার রাতে ঘেরাও করে রাখা বাড়িটিতে অভিযান শুরু হয় শনিবার সকাল নয়টায়। এর নাম দেয়া হয় অপারেশন টোয়াইলাইট (গোধূলী)। প্রথমেই তারা জোর দেন বাড়িটিতে আটকে নিরীহদেরকে নিরাপদে বের করে আনার বিষয়টিতে।
সন্ধ্যায় সেনা সদর দপ্তরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান ব্রিফিং করে জানান, তারা ৭৮ জনকে বের করে আনতে পেরেছেন।
দিনভর অভিযানেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গোলাগুলি চালিয়ে যায় আস্তানার ভেতরে থাকা জঙ্গিরা। তারাও গুলি ও গ্রেনেড দিয়ে জবাব দিতে থাকে।
সন্ধ্যার পরপর এই আস্তানার অদূরে দুটি বোমার বিস্ফোরণে দুই ছাত্রলীগ নেতা, দুই পুলিশ সদস্যসহ নিহত হয় ছয় জন। আহত হয় ৫০ জনেরও বেশি। এদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান আবুল কালাম আজাদকে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।
মধ্যরাত সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে কয়েক দফা গুলির শব্দ শোনা যায়। তবে সকালে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আর গোলাগুলি হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, বাড়িটি থেকে আটকে সাধারণ মানুষদের উদ্ধারের পর ওই বাড়ির পানি-বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন কেটে দেয়া হয়েছে। এতে সন্দেহভাজন জঙ্গিদেরকে পরাস্ত করা সহজ হবে বলে আশা করছে তারা।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ভেতরে চারজন সন্দেহভাজন জঙ্গি থাকার বিষয়টি তারা নিশ্চিত। তবে ভেতর থেকে যেভাবে প্রতিরোধ করা হচ্ছে তাতে এই সংখ্যাটা এখন বেশি বলেও মনে হচ্ছে। আর ভেতরে শক্তিশালী বিস্ফোরক থাকার আশঙ্কা রয়েছে তাদের। এ কারণেই সেখানে ঢুকতে সতর্কতার আশ্রয় নেয়া হচ্ছে।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যেসব আস্তানায় অভিযান হয়েছে, সেগুলোতে এই আস্তানার মতো এত প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়নি। আবার অভিযান চলাকালে বাইরে জঙ্গিদের হামলার ঘটনায় মনে হচ্ছে এই আস্তানাটির একটি গুরুত্ব রয়েছে জঙ্গিদের কাছে। এ কারণেই তারা ‘মরণকামড়’ দিয়েছে।
সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, শনিবার সন্ধ্যার ব্রিফিংয়ে জানান, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ঘটনাটি দেখে সোয়াটকে ডেকেছিল কিন্তু সোয়াট এসে দেখে এই অভিযান চালানো তাদের পক্ষে সম্ভবপর নয়। তখন তাদের সহায়তা চাওয়া হয়।
সোয়াট শুরুতে এই অভিযানের নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন স্প্রিং রেইন’। কিন্তু সেনাবাহিনী নেতৃত্ব নেওয়ার পর অভিযানের নাম বদলে হয় ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরুল কায়েস।
শনিবার রাতের বিস্ফোরণের পর ওই আস্তানার আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করেছে র্যাব-পুলিশ। এলাকাবাসী ও সাংবাদিকদেরকে আগেই ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে সাধারণ মানুষের জড়ো হতে বাধা দেয়া হয়নি। কিন্তু এখন আর কাউকে সেখানে জড়ো হতে দেয়া হচ্ছে না।
ঢাকাটাইমস/২৬মার্চ/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

মন্তব্য করুন