যেভাবে অবসর কাটাচ্ছেন প্রণব

ব্যক্তিগত সংগ্রহের বই ছাড়া রাইসিনা হিল থেকে আর কিছুই নিয়ে যাবেন না, সেটা আগেই জানিয়েছিলেন ভারতের সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখ্যার্জী। তার নতুন ঠিকানা দশ নম্বর রাজাজী মার্গ।

প্রণবের নতুন বাসায় লাইব্রেরি হিসাবে চিহ্নিত ঘরটি ভরে গিয়েছে, প্রায় সব কক্ষেই রাখতে হচ্ছে বই। পাঁচ দশকের রাজনৈতিক এবং মন্ত্রিত্বের জীবন থেকে অবসর নিয়ে এরই মধ্যে বিপুল সংগ্রহের দেখভাল শুরু করেছেন তিনি।

নতুন ঠিকানায় কেমন লাগছে জানতে চাইলে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ভবন ছেড়ে এসেও যেন সেখানকারই গন্ধ পাচ্ছি। ওখানেও তো প্রত্যেক ঘরেই বই ছিল।’

অবসর জীবন কেমন ভাবে কাটাবেন জানতে চাইলে বলেন, এখনো কোন স্থির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এ পি জে আব্দুল কালাম আমাকে প্রায়ই বলতেন, তুমি যতো পড়ো, ততো লেখো না। এবার সেই দুর্নাম দূর করতে হবে।

জানালেন, দুই-একদিনের ছুটি কাটিয়ে লেখার কাজ শুরু করবেন।

নিজের লেখা ‘দ্য ড্রামাটিক ইয়ার্স– দ্য ইন্দিরা গান্ধী’ এর বাংলা অনুবাদের পান্ডুলিপিটি ইতিমধ্যেই হাতের কাছে রেখেছেন। সেটির সম্পাদনা শুরু করবেন। এই বছরেই সেটি প্রকাশিত হওয়ার কথা।

পাশাপাশি একটি বিশুদ্ধ আত্মজীবনী লেখার ইচ্ছা রয়েছে প্রণবের। যেখানে থাকবে তার ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক জীবনের অনেক অজানা তথ্য। রাষ্ট্রপতি ভবনের জীবন নিয়েও কলম ধরবেন অবিলম্বে।

নতুন এই জীবনে সবচেয়ে বেশি মিস করবেন কাকে? এমন প্রশ্নে জবাবে প্রণব বললেন, ‘অবশ্যই ফাইল। বহু যুগ পরে এই প্রথম আমার সামনে কোনও ফাইল থাকছে না।’

বিরোধী দলে থাকার সময়েও দলীয় বিভিন্ন কাগজপত্র, প্রস্তাব, সংসদের প্রশ্নোত্তর তৈরি, খসড়া তৈরির কাজ করতে হয়েছে। আর মন্ত্রী হিসাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ফাইলও দেখতে হয়েছে। সুচিত্রা মিত্র ও কণিকার গাওয়া ‘কোন খেলা যে খেলবো কখন, ভাবি বসে সেই কথাটাই...’ এই গানটি শুনেও সময় কাটাচ্ছেন রবীন্দ্রভক্ত প্রণব।

কোনও রকম রাজনৈতিক উপদেষ্টা বা পরামর্শদাতার ভূমিকায় যে তিনি থাকবেন না তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। লেখালেখির পাশাপাশি একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক গঠন করে রাষ্ট্রীয় নীতি সংক্রান্ত আলোচনাচক্র এবং প্রকাশনা তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সেটিও সরাসরি নিজের নামে করতে আপত্তি রয়েছে প্রণবের।

একটি বিষয়ে অবসর জীবনের প্রথম দিনই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন প্রণব। সেটি হলো, ‘বহু ঘোরাঘুরি হয়েছে, কিছু দিন বাড়ির বাইরে পা ফেলবো না। আগে তো বটেই, রাষ্ট্রপতি হয়েও গত পাঁচ বছর গোটা দেশ চষে বেড়িয়েছি।’ বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুইপা ফেলতেও আপাতত ক্লান্ত লাগছে গত পাঁচ দশকে লাগাতার ভ্রমণকারী প্রণবের।

(ঢাকাটাইমস/২৭জুলাই/জেএস)