শ্রীলঙ্কা: লাখো নিখোঁজ মানুষের দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:৩৭ | প্রকাশিত : ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:১৮

প্রায় এক দশক হয়েছে শ্রীলঙ্কাতে গৃহযুদ্ধের অবসান হয়েছে। কিন্তু অনেক পরিবারের জন্য দীর্ঘ এই লড়াই কখনো শেষ হবে না। গৃহযুদ্ধ চলাকালীন দেশটির উত্তরাঞ্চলে হাজার হাজার সংখ্যালঘু তামিল সম্প্রদায়ের মানুষ ‘নিখোঁজ’ হয়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ধারণা, গৃহযুদ্ধের সময় কমপক্ষে ৬০ হাজার তামিল নাগরিক ‘নিখোঁজ’ হয়। তবে এর প্রকৃত সংখ্যাটা এক লাখের বেশি হতে পারে।

নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার এখনো জানে না, তাদের মেরে ফেলা হয়েছে নাকি সরকার বন্দি করে রেখেছে। নিখোঁজের সময় অধিকাংশই তামিল বাসিন্দারাই ছিল কিশোর অথবা তরুণ।

চলতি বছরের শুরুর দিকে মোইজেস সামান নামে স্পেন বংশোদ্ভূত মার্কিন এক ফটোগ্রাফার শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চলে ঘুরতে যান।

অদৃশ্য হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর অনুপস্থিতিই ছবিতে তোলে ধরার চেষ্টা করেছেন এই আলোকচিত্রী। নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্মৃতি খুঁজে বেড়াচ্ছে তাদের। নিখোঁজদের বাড়ির খালি কক্ষ, শূন্য আঙিনা, বাড়ির ধ্বংসাবশেষ কিংবা অশোয়া বিছানায় আপনি হয়তো তাদের খুঁজে পাবেন।

শ্রীলঙ্কার উপকূলীয় গ্রাম মুল্লিভাইকালে বাইরে খোলা মাঠে দীর্ঘদিনের পুরনো কাপড়ের স্তূপের নিচে তারা নিশ্চয়ই নির্মমভাবে পড়ে আছেন। তামিল নাগরিকদের জন্য ‘নিরাপদ অঞ্চল’ ছিল এই এলাকাটি। যখন তামিল গেরিলারা(এলটিটিই) সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন স্থানীয়দের বলা হয়েছিল নিরাপদে সরে যেতে। ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধে অন্তত এক লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটে।২০০৯ সালে রক্তক্ষয়ী এই সংগ্রামের সমাপ্তি হয়।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, লড়াইয়ের শেষ মাসে আনুমানিক ৪০ হাজার বেসামরিক নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল।

তামিলদের বিবর্ণ পোশাকই বলে দেয় তাদের হারানোর কথা। বাবা, মা, ভাই, বোন, ছেলে এবং মেয়ের নুয়ে পড়া কাঁধ ও কোটরে চলে যাওয়া চোখে নিখোঁজদের খুঁজে পাবেন ফটোগ্রাফার সামানের ছবিতে।

যুদ্ধের বাস্তবতা এবং যুদ্ধপরবর্তী অবস্থা এত কাছ থেকে সামানের মতো আর কেউ পর্যবেক্ষণ করেনি।

২০১০ সালে ম্যাগনাম নামে একটি সংস্থায় কাজ করার আমন্ত্রণ পান ফটোগ্রাফার সামান। প্রায় ২০ বছর বিশ্ব জুড়ে সংঘটিত বিভিন্ন যুদ্ধ তিনি সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করেন।

মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্কার, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এবং হিউম্যান রাইটসসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।

২০০৩ সালে তিনি ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন এবং তারপরের দীর্ঘদিনের চিত্র তার ক্যামেরায় বন্দি করেন। আরব বসন্তের পর সিরিয়া, মিশর এবং লিবিয়ার যুদ্ধের ছবি তোলেন। এরপর তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাদের অত্যাচার-নির্যাতন এবং জোর করে দেশ থেকে বের করে দেয়ার চিত্রও তুলে ধরেন।

নিউইয়র্ক নিজের বাসা থেকে ফোনে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকাকে মোইজেস সামান জানান, শ্রীলঙ্কায় তোলা ছবিগুলোতে তার কাজের উন্নয়নশীল থিম প্রকাশ করে। যুদ্ধের দীর্ঘদিন পরে তামিলদের হৃদয়ে দীর্ঘদিনের দগদগে ক্ষত বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করছে।

‘আমি আশ্চর্য হই এই ভেবে যে, কত সহজে এখন উত্তরাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে যাওয়া যাচ্ছে। মানুষ তাদের অব্যক্ত কষ্টগুলোর কথা বলছে।’

সামান বলেন, ‘অন্যান্য গল্পগুলোর মতো শুরুতে এটা স্পষ্ট ছিল না সময় কতটা কঠিন ছিল। তবে আমি সত্যের সাহায্য পেয়েছি। বর্তমানে সেখানে নিখোঁজ হওয়ার ব্যক্তিদের মায়েরা তাদের সন্তানদের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা জানার জন্য বিশাল আন্দোলন করছেন। মানুষজন যখন মুখ খোলা শুরু করেছে, তখনই আমি ঠিক সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলাম।’

এটা সত্য শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চলে এখনো সেনাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা। এখানের অনেক বাসিন্দাই পুলিশ ও সেনাদের ভয় পায়। তবে সরকারি পর্যায়ে বিষয়টি মিটমাটের কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

তবে সামান মনে করেন, নিখোঁজ মানুষদের কেন্দ্র করে তৈরি এই পরিস্থিতির সমাধান অসম্ভব এবং জড়িতদের খুবই কম আইনের মুখোমুখি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বে অনেক কিছু ঘটছে যা মানুষ ভুলে যাচ্ছে। এখন মানুষ শ্রীলঙ্কার কথা ভাবলে সম্ভবত দেশটির গৃহযুদ্ধের কথা মনে পড়ে না। মনে পড়ে দেশটির পর্যটন, সমুদ্র সৈকতের কথা। শ্রীলঙ্কা আসলেই অনেক সুন্দর দেশ। কিন্তু দেশটির অনেক ঐতিহাসিক স্মৃতিও রয়েছে।’

জাতিসংঘসহ আরো কিছু সংস্থা আসলে কি ঘটেছিল তা জানতে চেয়েছিল। তবে তার জন্য রাজনৈতিক ইচ্ছা খুব কম। এই বিষয়ে খুব কম সংখ্যক মামলা বিচারাধীন। তবে প্রকৃত সত্যটা অনেক বেশি নির্মম।

তিনি বলেন, ‘যা দেখেছি তার সঙ্গে বিষয়গুলো যুক্ত করতে আমি অনেকটা সময় ব্যয় করেছি। ভিকটিম ও অপরাধীদের মধ্যে সম্পর্কের অস্পষ্টতা রয়েছে। নিজে নিজে এর উত্তরণ কিভাবে সম্ভব?’

(ঢাকাটাইমস/১৬অক্টোবর/এসআই)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :