পরিচর্যা ছাড়াই বিচি কলার চাষ

ময়মনসিংহের সর্বত্র রাস্তার পাশে, গৃহস্থের বাড়ির আঙ্গিনায় সারি সারি যে কলাগাছ শোভা বর্ধন করে থাকে- তার অধিকাংশই বিচি কলা বা বাইশ্যা কলার গাছ। প্রচলিত আছে- ‘কাঁদিতে বাইশ হালি কলা ধরে বলে এর নাম বাইশ্যা কলা।’ এ কলার চারা একবার রোপণ করলে বংশ পরম্পরায় ভিটের জমি ও সড়কের দুই পাশ আঁকড়ে থাকে। কোন প্রকার সেবা-পরিচর্যা ছাড়াই বারো মাস ফল দেয়।
ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিভিন্ন জাতের কলার মধ্যে বিচি কলা সবচাইতে বড় এবং ওজনে বেশি। এটি অন্য কলার চাইতে বেশি মিষ্টি। বিচির কারণে অনেকেই এই কলা পছন্দ করেন না। কিন্তু দরিদ্রদের মধ্যে এটি খুবই প্রচলিত। মায়েরা পাকা কলা চটকিয়ে চালনিতে চেলে বিচি ছাড়িয়ে শিশুকে খাওয়ায়। লক্ষ্য করা যায়, দুধপোষ্য শিশুর চাইতে কলা খাওয়া শিশুদের স্বাস্থ্য কোন অংশেই কম নয়।
বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিখ্যাত কলার পিঠা ‘বাইশ্যা কলা’র রস থেকে তৈরি হয়ে থাকে। দুধ-ভাতের সাথে এই কলা বিশেষ স্বাদ-গন্ধ আনে বলে অনেক গৃহস্থের বাড়িতে এটির বিশেষ কদর রয়েছে। এই কলার মোচা বা থোড় তরকারি রান্নায় সুস্বাদু বলে বাজারে এর দাম বেশি। দরিদ্র শিশুদের মধ্যে কলা তেতুলে ভর্তা করে খাবার প্রচলন দেখা যায়।
এক সময় গৃহস্থের বাড়িতে এ কলা গাছের খোল রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ক্ষার তৈরি করা হতো। এই ক্ষার দিয়েই প্রতিমাসের কাপড়-চোপড় ধোয়া হতো। বিভিন্ন পার্বনে কলার পাতা ও খোলে দাওয়াত খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। শুকনো কলার পাতা দিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় বেড়া দেয়ার প্রচলন এখনও গ্রামাঞ্চলে দেখা যায়।
বিগত এক দশক ধরে আধুনিক উন্নত ও হাইব্রিড জাতের কলার চাষ হলেও পরম্পরার সাক্ষী হয়ে আঙ্গিনায় আজও টিকে আছে ‘বাইশ্যা কলা’।
(ঢাকাটাইমস/১ নভেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

মন্তব্য করুন