রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবৈধ পাঁচ লাখ সিম!

সৈয়দ ঋয়াদ
  প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:২২
অ- অ+
ফাইল ছবি

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থ্রিজি এবং ফোরজি মোবাইল সেবা বন্ধের পর ক্যাম্পে অন্তত পাঁচ লাখ সিম অবৈধভাবে বিক্রির তথ্য মিলেছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের তথ্য থাকার পরও সিম তুলতে নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় তথ্যাগারের সঙ্গে গ্রাহকদের আঙ্গুলের ছাপ মিলতে হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো এত নিয়ম কানুনের ফাঁক গলে রোহিঙ্গারা কীভাবে পেল বাংলাদেশের সিম।

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের কাছে মোবাইল সিম বিক্রি ও বিতরণের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ বেশ কিছু বিধি আরোপ করে বাংলাদেশ সরকার। তবে সে সময় রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ করে দেয় বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা। তবে এখন চিত্র পাল্টেছে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি পরিবারেই আছে একাধিক মোবাইল ফোন।

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার ছাড়ার দুই বছর পূর্তির দিন সমাবেশ করতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়েছিল মহিবুল্লাহর নেতৃত্বাধীন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস নামের সংগঠন। কিন্তু কোনো রকম লিখিত অনুমতি না থাকা স্বত্বেও শুধু মাত্র ফোন ও ইন্টারেনট ব্যবহারের অবাদ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিরাট সমাবেশ করে মিয়ানমার রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গারা সিম পাওয়ার বিষয়টি উখিয়ার বাসিন্দা ও স্থানীয় সাংবাদিক মোছলেম উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখানকার স্থানীয়দের এনআইডি কার্ড এবং আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে মোবাইল অপারেটরদের এজেন্ট ও ডিলারদের মাধ্যমে হাজার হাজার সিম তুলে রোহিঙ্গারা ব্যবহার করছে।’

‘স্থানীয় সিম রিটেইলার ও সাধারণ মানুষ নিজেদের নামে সিম তুলে একেকটি সিম এক হাজার থেকে শুরু করে ১০ বা ২০ হাজার টাকাতেও বিক্রি করছে।’

মোছলেম জানান, রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। আর ৭০ সালের পর যে রোহিঙ্গার এদেশে এসেছে তাদের একটি বড় অংশ গোপনে বাংলাদেশের পরিচয়পত্র ব্যবহার করেছে। সুযোগ পেলে তারা মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও পারি দিচ্ছে। তার ভাষ্য এসব কাজে তাদের সহযোগিতা করছে স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও তাদের দালালরা। টাকার বিনিময়ে তারা রোহিঙ্গাদের এসব সুযোগ করে দিচ্ছে।

কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্প এলাকায় যেসব মোবাইল অপারেটরদের ডিলার রয়েছে, তারা স্থানীয়দের নামে নিবন্ধিত সিম রোহিঙ্গাদের কাছে বিক্রি করছে। এতে রোহিঙ্গা খুব সহজেই হাতে পাচ্ছে বিভিন্ন অপারেটরদের সিম কার্ড।’

‘এসব ক্যাম্পে বাংলাদেশিদের নামে যেসব নিবন্ধিত সিম রয়েছে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হোক। আর নতুন করে সিম বিক্রির প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে দেওয়া হোক।’

সম্প্রতি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্যবহৃত সব অবৈধ সিম বন্ধ করে দিতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি।

বিটিআরসির গণসংযোগ কর্মকর্তার জাকির হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বৈধ কাগজপত্র ছাড়া সিম বেচা কেনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সম্প্রতি বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেলে নিয়ম বহির্ভূত এসব সিম সম্পর্কে জানতে পেরে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’

পুলিশের দেওয়া তথ্য ও কয়েকটি বেসরকারি জরিপে উল্লেখ করা হয় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি ক্যাম্পে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। যারা ব্যবহার করছে বাংলাদেশি বিভিন্ন অপারেটরের ৫ লাখের বেশি সিম। এক সপ্তাহের মধ্যে সিম বিক্রি বন্ধ না করা হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন।

কামাল হোসেন বলেন, ‘বিটিআরসি থেকে মোবাইল অপারেটদেরকে রোহিঙ্গাদের মোবাইলসেবা বন্ধের নির্দেশনা এসেছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এইগুলোর বিরুদ্ধে যে আইনগত ব্যবস্থা আছে, আমরা তা প্রযোগ করতে বাধ্য হব।’

মোবাইল সিম কীভাবে ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের কাছে গেল- জানতে চাইলে মোবাইল টেলিকম অপারেটরদের সংগঠন এমটব এর মহাসচিব এস এম ফরহাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘উদ্বাস্তুরা কীভাবে নিবন্ধিত সিম পেল সে ব্যাপারে আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য নেই। যাদের নামে ওইসব সিম নিবন্ধন করা আছে তাদের খুঁজে বের করলেই হয়ত এর জবাব পাওয়া যাবে।’

বাংলাদেশে ২০১৫ সাল থেকে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে সিম নিবন্ধন ব্যবস্থা শুরু হয়। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, তারাই কেবল সিম কিনতে পারেন। একজন সর্বোচ্চ ১৫টি সিম কিনতে পারেন। তবে এখনো অনিবন্ধিত লাখ লাখ সিম চালু থাকার খবর প্রায়ই আসে গণমাধ্যমে। যদিও মোবাইল ফোন অপারেটররা এই অভিযোগ স্বীকার করতে চান না।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবৈধ মোবাইল সিমের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলালিংক এর করপোরেট কম্যুনিকেশন ম্যানেজার অংকিত সুরেকা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এককন মানুষ নিজের এনআইডি ছাড়া কোনোভাবেই বাংলালিংক সিম ব্যবহার করতে পারবে না। আর উখিয়া টেকনাফে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর থেকে আমার সেখানে আমাদের সিম বেচা কেনার কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি।’

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
‘ধামাকা শপিং’-এর চেয়ারম্যান এম আলীকে ধরে থানায় দিল জনতা
তারেক রহমানকে শরণখোলা বিএনপির নেতাদের চিঠি, কাউন্সিলে আঞ্জুমান আরার প্রার্থীতা বাতিলের দাবি
সনাতনী জনগণের মাঝে বিএনপির বার্তা পৌঁছে দিলেন কাজী আলাউদ্দিন
বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের মাধ্যমেই দেশ পুনর্গঠন করতে হবে: নাহিদ ইসলাম
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা