পুলিশ কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে গতি হলো গোয়ালঘরে থাকা মায়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:০০| আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:২৪
অ- অ+

প্রায় দুই বছর ধরে গোয়ালঘরে একটি ভাঙা চৌকিতে শুয়ে দিন পার করছিলেন শমলা বিবি। নিজের সন্তানরাই রেখেছিল এই নোংরা পরিবেশে। বৈদ্যুতিক বাতি তো দূরে থাক, অন্ধকার প্রকোষ্ঠের মতোই গোয়ালঘরে দিন-রাত কাটছিল ৯০ বছরের এই বৃদ্ধার। গোয়াল ঘরের গোমূত্রের গন্ধ, আবর্জনা আর মশার অসহনীয় উৎপাতকে সঙ্গী করে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুকেই নিয়তি হিসেবে ভেবে নিয়েছিলেন এই জনমদুখী মা। ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায়।

তবে একজন তরুণ পুলিশ কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে এমন দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্তি মিলল শমলা বিবির। যে সন্তানরা এতদিন গর্ভধারিনী মাকে গোয়ালঘরে রেখেছিলেন তারাই ঘরে তুলে নিতে রাজি হয়েছেন। শমলা বিবির জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদা ঘর তৈরি করে দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিনে দেয়া হয়েছে আসবাবপত্র।

পুরো কাজটি করেছেন হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী। সঙ্গে ছিলেন হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

পুলিশ কর্মকর্তা সোনাহর আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃদ্ধা শমলা বিবির বাড়ি হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল বড়বাড়ি। তার চার ছেলে ও চার মেয়ে। চার মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তারা রয়েছেন স্বামীর সংসারে। চার ছেলেই মোটামুটি সচ্ছল। রয়েছেন স্বামীও। কিন্তু তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করায় খোঁজ নেন না শমলা বিবির। ৯০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধার নামে দুই শতক জায়গা ছিল। সেটিও লিখে দিয়েছেন ছোট দুই ছেলে হেলাল উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিনের নামে। এরপর থেকে ছেলেরাও আর তার কোন খোঁজ নেয় না। স্বামী-সন্তান থেকেও যেন কেউ নেই শমলা বিবির।

স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ছেলেরা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন আর পরিপাটি সুন্দর ঘরে বসবাস করেন। কিন্তু মায়ের স্থান হয়নি তাদের সঙ্গে। অগত্যা পরিত্যক্ত মালামালের মতো তারও ঠাঁই হয়েছে বাড়ির গোয়ালঘরে। গোয়াল ঘরের এক কোণে মাথা গুঁজে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছিল শমলা বিবির।

গত দুই বছর ধরে গোয়ালঘরে গরুর পাশাপাশি নোংরা পরিবেশের মধ্যে একটি ভাঙা চৌকিতে শুয়ে দিন পার করছিলেন।

শমলা বিবির এই অসহায়ত্ব পীড়া দেয় ঢাকা থেকে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে আসা মেয়ে নূরজাহান বেগমকে। ভাই হেলাল উদ্দিনকে তার বৈদ্যুতিক মিটার থেকে মায়ের থাকার ঘর গোয়ালঘরে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ দিতে বলেন। কিন্তু মাস শেষে তার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল বহন করতে হবে বলে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান হেলাল। মায়ের দুর্ভোগ আর দুর্দশা সইতে না পেরে স্বামী মানিক মিয়াকে হোসেনপুর থানায় অভিযোগ দিতে পাঠান নূরজাহান।

শনিবার দুপুরে মানিক মিয়া অভিযোগ নিয়ে হোসেনপুর থানায় গেলে বিষয়টি জানতে পারেন হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী। অভিযোগ দেখে হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী সেই মাকে দেখতে হোসেনপুর থানার ওসি শেখ মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও অফিসার ফোর্সসহ বিকালেই ছুটে যান উপজেলার শাহেদল বড়বাড়িতে। এরপরই পাল্টে যায় চিত্র। গোয়ালঘর থেকে ঘরে জায়গা হলো শমলা বিবির।

শমলা বিবির অবস্থা সরেজমিন দেখে স্থানীয় দুই ইউপি সদস্যকে ডেকে আনা হয়। ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে শমলা বিবিকে ছোট ছেলে নিজাম উদ্দিনের ঘরে তুলে দেয়া হয়। তার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন দ্বিতীয় ছেলে ইমান উদ্দিনের ব্যবসায়ী ছেলে ওমর ফারুক। এছাড়া চার ছেলে গিয়াস উদ্দিন, ইমান উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিন দশ দিনের মধ্যে নতুন ঘর নির্মাণ করে দেয়ার লিখিত অঙ্গীকার করেন। তবে অঙ্গীকার তারা রাখবেন কি না এই সংশয় থাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে তারা একটি নতুন ঘর করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন ঘর নির্মাণ করে দেয়া ছাড়াও এই মায়ের থাকার জন্য যাবতীয় বেডিং এর জিনিসপত্রের ব্যবস্থাও করে দেয়া হবে পুলিশের পক্ষ থেকে।

পুলিশ কর্মকর্তা মো. সোনাহর আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, দুই বছর ধরে তিনি গোয়ালঘরে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। সারাদিন গোয়ালঘরে একবারও কেউ তার খোঁজ নিতে আসে না। এই বয়সটাই যেন তার কাছে এক বিরাট অভিশাপ। এটি আমাকে খুব ব্যথিত করেছে। এ কারণেই তার জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি মাত্র।

ঢাকাটাইমস/১৫সেপ্টেম্বর/বিইউ/ইএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
‘ধামাকা শপিং’-এর চেয়ারম্যান এম আলীকে ধরে থানায় দিল জনতা
তারেক রহমানকে শরণখোলা বিএনপির নেতাদের চিঠি, কাউন্সিলে আঞ্জুমান আরার প্রার্থীতা বাতিলের দাবি
সনাতনী জনগণের মাঝে বিএনপির বার্তা পৌঁছে দিলেন কাজী আলাউদ্দিন
বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের মাধ্যমেই দেশ পুনর্গঠন করতে হবে: নাহিদ ইসলাম
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা