কারাগারে বসে মোটরসাইকেল পোড়াল দুই ছাত্রদল নেতা!

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:২৫ | প্রকাশিত : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:১৫

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার বহুদিন ধরে জেলে। দুই সপ্তাহ আগে রাজধানীর হাইকোর্ট এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা মামলায় কারাগারে রয়েছে ছাত্রদলের আরেক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। জেলে থেকেও পুলিশের নাশকতা মামলার আসামি হয়েছেন ছাত্রদলের এই দুই নেতা।

১১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের সামনে তিনটি মোটরসাইকেল পোড়ানোর মামলায় বিএনপি এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ১৩৫ জন নেতাকে আসামি করে মামলা করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। এর মধ্যে একটি মামলার ২৩ নম্বরে নাম রয়েছে মোস্তাফিজুর রহমানের, আরেকটি মামলার ৫২ নম্বরে ইসহাক সরকারের নাম।

বুধবার বিকালের ঘটনার পর রাতে যখন মামলা করা হয় তখনো এই মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুরিশ। আজ শুক্রবারও কেউ গ্রেপ্তার নেই এই মামলায়।

আগে থেকে জেলখানায় আটক ছাত্রদল নেতার আসামি হওয়া নিয়ে পুলিশের দুই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে। একটি মামলার বাদি পুলিশের একজন উপপরিদর্শকের (এসআই) দাবি, যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের এই ঘটনায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি পাওয়া গেছে। আর জেলে থাকা যাদের নাম এসেছে তারা সেখান থেকে বসে নির্দেশ দিয়েছেন। তাই তাদের নাম এজাহারে রাখা হয়েছে।

রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান জানান, বিষয়টি তারা যাচাই করে দেখবেন।

জেলে থেকে ছাত্রদলের দুই নেতা কীভাবে মোটরসাইকেলে আগুন দিলেন- এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, `তারা কি কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে গাড়ি পুড়িয়েছেন? তিনটি মোটরসাইকেল পোড়াতে ১৩৫ নেতার প্রয়োজন পড়ল?’

হাইকোর্টের সামনে মোটরসাইকেল পোড়ানো সরকারের বিশেষ বাহিনীর পরিকল্পিত কাণ্ড বলে দাবি রিজভীর। বলেন, ‘বুধবার মধ্যরাতে সরকার তাদের খয়ের খাঁ পুলিশকে দিয়ে আমাদের ১৩৫ জন নেতাকে আসামি করে মোটরসাইকেল পোড়ানোর উদ্ভট দুই মামলা করেছে। হাইকোর্ট এলাকায় বেওয়ারিশ দুই মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা। এটি বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ার জন্য সরকারের বিশেষ বাহিনীর পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ।’

গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির দিন। তার আগের দিন বুধবার বিকালে হাইকোর্টের সামনে তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় কে বা কারা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পানি ও বালু ছিটিয়ে আগুন নেভায়। ক্ষতিগ্রস্ত মোটরসাইকেল তিনটির কোনো মালিক পুলিশের কাছে অভিযোগ না করায় শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক শামছুর রহমান ও ইদ্রিস আলী বাদি হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। তাতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৩৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে তাদের আসামি করা হয়।

জেলে থাকা ব্যক্তিকে মামলার আসামি করার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইদ্রিস আলী বলেন, তারা যোগসাজশ করেছে বলে নাম দেওয়া হয়েছে। ঢাকা টাইমসের এই প্রতিবেদক এজাহার দেখেছেন কি না প্রশ্ন করে এসআই ইদ্রিস বলেন, ‘আমার এজাহারে কি লেখা আছে তারা বাইরে থেকে অপরাধ করেছে? আমি এজাহারে লিখেছি তারা যোগসাজশ করে এই ধরনের অপরাধ করেছে। তারা তো জেলখানায় থেকেও যুক্তিবুদ্ধি করতে পারে!’

মোটরসাইকেল পোড়ানোর ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। জেলখানায় বসে কেউ জড়িত থাকতে পারে কীভাবে জানা গেছে জানতে চাইলে মামলার বাদী বলেন, ‘তারা ওখানে (জেলখানা) থেকে কারও সঙ্গে শলাপরামর্শ, যুক্তিবুদ্ধি করে বিভিন্ন জিনিস ঘটাতে পারে। সবাইকে যে ঘটনার সময় প্রেজেন্ট থাকতে হবে তা তো না। কারণ জেলে থেকেও তারা এ ধরনের নির্দেশ দিয়ে থাকতে পারে।’

মামলার বিবরণীতে বলা হয়, ‘ঘটনার দিন ওয়্যারলেসের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় বার কাউন্সিলের নির্মাণাধীন ভবনের প্রধান গেটের সামনে তিনটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দিয়েছে। পরে ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নেভানো হয়। আগুনে পুড়ে যাওয়ায় মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর বোঝা যাচ্ছিল না। উপস্থিত সবার সঙ্গে কথা বলে ও গোপন সংবাদে জানতে পারি, ১২ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির রায়কে প্রভাবিত করা এবং বিচার বিভাগের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য আগুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’

দুটি মামলার এজাহারে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের ডাকসু প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানকে আসামি করা হয়। ইসহাক সরকার ছাত্রদলের আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

মোস্তাফিজুর রহমানকে ২৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সামনে গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। এর অনেক আগে থেকে কারাগারে আছেন ইসহাক সরকার।

জেলে থাকা দুই ছাত্রদল নেতার আসামি হওয়ার বিষয়টি যাচাই করা হবে বলে জানিয়েছেন রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান। বলেন, ‘আমরা তাদের ব্যাপারে যাচাই করে দেখব। তবে এখানে আইনের বিভিন্ন ধরনের বিষয় আছে। উনাদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে আমরা চেকব্যাগ করে দেখব।’

(ঢাকাটাইমস/১৩ডিসেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

দুর্নীতি ও ভোটাধিকার হরণ ছাড়া আ.লীগের আর কোনো অর্জন নেই : এবি পার্টি

‘দেশে ইসলামবিদ্বেষী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে’

ক্ষমতাসীনদের কেউ ভালো নেই: গয়েশ্বর

সিন্ডিকেটকে কোলে বসিয়ে বিরোধীদলের ওপর দায় চাপাচ্ছে সরকার: গণতন্ত্র মঞ্চ

ইফতার পার্টিতে আল্লাহ-রাসুলের নাম না নিয়ে আ.লীগের গিবত গায়: প্রধানমন্ত্রী

বাংলার মাটি থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার সাধ্য কারো নেই: ওবায়দুল কাদের

দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বন্ধু রাষ্ট্রের সহযোগিতা চাইলেন মঈন খান

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী: আ.লীগের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

জবি শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় চরমোনাই পীরের উদ্বেগ 

শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বস্তরে কুরআনের শিক্ষা চালু করতে হবে: মুজিবুর রহমান

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :