ভিকারুননিসা নূন স্কুলে হচ্ছেটা কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৭ জুলাই ২০২১, ২১:৫৬| আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২১, ২২:০১
অ- অ+

রাজধানীর নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সময় নানা কারণে আলোচিত হয়েছে। সম্প্রতি অধ্যক্ষ কামরুন নাহার মুকুলের একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নতুন করে আলোচনায় আসে।

অভিভাবক ফোরামের একজন নেতার সঙ্গে যে অকথ্য ভাষায় অধ্যক্ষ কথা বলেছেন, সেটা কোনোভাবেই তার পদ ও অবস্থানের সঙ্গে যায় না বলে মনে করছেন সচেতন মানুষেরা। এমনকি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা পর্যন্ত এই ফোনালাপে হতবাক। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, একজন অধ্যক্ষের ভাষা এতটা নিম্নমানের হলে তার কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে!

রাজধানীর প্রথম সারির এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আগেও নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। ২০১৮ সালে অরিত্রী অধিকারী নামে প্রতিষ্ঠানটির নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। পরে জানা যায়, পরীক্ষা চলার সময় অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পাওয়ার গিয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে সে নকল করেছে এমন অভিযোগ তুলে ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবককে ডেকে পাঠায় ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষ। অরিত্রীর মা-বাবাকে কর্তৃপক্ষ অপমান করে বলে অভিযোগ ওঠে। তাকে ছাড়পত্র নিয়ে যেতেও বলা হয়। অপমানে বাড়ি এসে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেয় এই শিক্ষার্থী।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সেই ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি এখনও বিচারাধীন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

গত ঈদুল আজহায় কলেজ প্রাঙ্গণে গরুর হাট বসিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে ১৯ জুলাই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অভিভাবকরা অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করে সংবাদ সম্মেলনও করেন।

সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই অধ্যক্ষ কামরুন নাহার মুকুলের অকথ্য ভাষার একটি ফোনালাপ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও অধ্যক্ষ দাবি করছেন, ফোনালাপটি সুপার এডিট। একটি চক্র তাকে বিতর্কিত করতে ষড়যন্ত্র করছে।

জানা গেছে, আলোচিত ফোনালাপটি ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ ও অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর মধ্যে হয়েছে। অধ্যক্ষের সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়টি মীর সাহাবুদ্দিন টিপু স্বীকার করেছেন। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার কয়েকবার অধ্যক্ষ কামরুন নাহার মুকুলের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এদিকে অধ্যক্ষ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে দাবি করেছেন, ওই অডিওটি এডিট করা। এটি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। অভিভাবক ফোরাম ও পরিচালন পর্ষদ এই ষড়যন্ত্র করছে বলেও দাবি করেন তিনি।

ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘যারা স্বার্থে আঘাত লাগার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে আমার পেছনে লেগে আছেন, কিছু না পেয়ে এডিট করে তারা একটি অডিও ছেড়েছেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।’

চার মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের অডিওতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ ও অভিভাবক ফোরামের কাউকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে শোনা যায়।

অডিওতে নারী কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে, ‘আমি কিন্তু গুলি করা মানুষ। রিভলবার নিয়া ব্যাগের মধ্যে হাঁটা মানুষ। আমার পিস্তল বালিশের নিচে থাকত।’ তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে ‘দা’ দিয়ে কোপানোর হুমকির কথাও শোনা গেছে ওই অডিও ক্লিপে।

ফোনালাপের বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসার অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপু জানান, গত ১০ জুন তার সঙ্গেই অধ্যক্ষের এই কথোপকথন হয়েছে। টিপু বলেন, ‘১০ জুন অধ্যক্ষকে ফোন করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে নানা কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে গভর্নিং বডির কয়েকজন সদস্যকে উদ্দেশ্য করে গালাগালি করেন।’

অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মজিদ সুজন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘একজন অধ্যক্ষের মুখের ভাষা এরকম হতে পারে? আমরা বিব্রত, খুবই মর্মাহত। শুরু থেকেই উনার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ। জানুয়ারিতে যোগদান করেছেন। তারপর থেকেই কলেজের বাসভবনে থাকেন। কিন্তু তিনি কখনো নিজ অফিসে বসেন না। অভিভাবকরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি দেখা করেন না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলেন।’

এদিকে ঢাকার নামি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের এমন ব্যবহারে হতবাক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। একই সঙ্গে এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুশীল সমাজের সদস্যরা।

একজন অধ্যক্ষের এমন ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনিস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কিছু মানুষ বাদে বাকি মানুষের মধ্যে একটা চেষ্টা থাকে, নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা। এটা সে ধরনেরও কোনো চেষ্টা হতে পারে। তবে নেতিবাচক না ইতিবাচকভাবেও নিজেকে তুলে ধরা যায়। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। আমাদের সেই চেষ্টাটাই করা উচিত। গালিগালাজ তো শিক্ষকতার পর্যায়েই পড়ে না।’

আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যখন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিই, তখন বলি, নিজের খাসলত ঠিক করুন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো খারাপ মানুষকে শাস্তি দিয়ে যতটা না ঠিক করা যাবে, তার চাইতে তাকে ভালো কাজের উৎসাহ দেওয়া বা ভালো কাজের উদারহণ দিয়ে তার সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। ভালো ব্যবহারটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’

(ঢাকাটাইমস/২৭জুলাই/কারই/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এবার এনসিপির পছন্দের ‘কলম’ ও ‘মোবাইল ফোন’ মার্কা নিয়েও টানাটানি
সৌদিতে বিদেশি পর্যটক ও ভ্রমণকারীদের জন্য নতুন ড্রাইভিং নির্দেশনা
ঢাকাসহ ১৩ জেলায় ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস
গাজায় ত্রাণ নিতে আসা ৮৩৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরায়েল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা