সেই পুলিশ কনস্টেবল সোহানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২১, ২১:১০ | প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর ২০২১, ১৯:২৫
ফাইল ছবি

ফেসবুকে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক করে এক ছাত্রীর ব্যক্তিগত ছবি নেওয়া এবং পরে তা ফাঁসের ভয় দেখিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের চেষ্টা মামলায় পুলিশ কনস্টেবল খালিদ হাসান সোহানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। সম্প্রতি খুলনা আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা খালিশপুর থানায় পৌঁছেছে।

খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামাল ঢাকাটাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

পুলিশ কনসটেবল সোহান ঝিনাইদহ জেলা পুলিশে কর্মরত ছিলেন। অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনসে রাখা হয়েছিল। বর্তমানে তিনি ছুটিতে রয়েছেন।

খালিশপুর থানার ওসি জানান, ‘আমরা সোহানের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কাগজ হাতে পেয়েছি। তাকে গ্রেপ্তারে আমরা সব করছি। জানতে পেরেছি উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিন নিয়েছেন, তবে এ-সংক্রান্ত কোনো কপি এখনো থানায় আসেনি।’

এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারটির অভিযোগ, ‘গ্রেপ্তারি পরোয়ানার খবর পেয়ে পুলিশ লাইনস্ থেকে ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে গেছেন পুলিশ সদস্য সোহান। অভিযুক্ত হয়েও তার এই ছুটিতে আসায় আমরা আতঙ্কে আছি।’

প্রয়োজনে কনস্টেবল সোহানের ছুটি বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ। তারা বলছে, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের শেষ পর্যায়ে। তবে সম্প্রতি অসুস্থতার সার্টিফিকেট দিয়ে ছুটি নিয়েছেন সোহান। প্রয়োজনে তার ছুটি বাতিল করা হবে।’

ঝিনাইদহ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমিনুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি সে ছুটি নিয়েছে। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়েছে। তবে আত্মগোপনে গেছে কি না সেটা জানা নেই।’

সোহানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘দ্রুতই তার বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগ শেষ করা হবে। কয়েকজন সাক্ষী হাজির না হওয়ায় তদন্ত আটকে আছে।’

পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তার (সোহান) বিরুদ্ধে যদি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকে, অবশ্যই তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হবে।’

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে স্কুলশিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়ার (ছদ্মনাম) সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় পুলিশ সদস্য খালিদ হাসান সোহানের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক। সেই সুবাদে ফেসবুকে চ্যাটিং ও ভিডিও কলে কথা হতো তাদের। বিভিন্ন সময় পুলিশ সদস্য সোহান স্কুলছাত্রীকে তার কিছু নিরাবরণ ছবি দিতে বলেন। সোহানের পীড়াপীড়িতে একসময় কিছু ছবি দেয় ওই ছাত্রী। এরপরই পুলিশ সদস্য সোহান তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাপ দিতে থাকেন। না হলে তার (সোহান) কাছে থাকা ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন।

ভীতসন্ত্রস্ত ওই ছাত্রী তার পরিবারকে সব খুলে বলে। পরিবারের লোকজন অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের কাছে এসব বিষয় জানতে চাইলে তাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। পরে ভুক্তভোগী পরিবারটি সোহানের বিরুদ্ধে মামলা করেন খুলনার একটি আদালতে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ কনস্টেবল সোহানের মা ওই ছাত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করেন এবং তার ছেলের নামে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেন। বর্তমানে মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন।

গত ৪ অক্টোবর ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর মা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি সোহানকে বলেছিলাম প্রয়োজনে আমার মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দিব, তবুও যেন তার কাছে থাকা সব ছবি ডিলিট করে দেয়। কিন্তু সোহান শোনেনি সে কথা।’

উল্টো তার দুই ছেলেকে হত্যার হুমকি দেন সোহান- এমন অভিযোগ করে ওই নারী বলেন, ‘তাদের (ছেলে) একাধিকবার মারধরও করে। খুলনার বিএল কলেজের পেছনে নিয়ে আমার ছোট্ট ছেলেকে মারধরের ঘটনায় সোহানের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় একটি মামলা করি। স্থানীয় থানার পুলিশ তদন্ত শেষে চার্জশিট জমা দিয়েছে আদালতে। মারধরের ঘটনায় সোহানের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।’

ভুক্তভাগী ওই ছাত্রী ঢাকা টাইমসকে জানান, তার ভাইকে মারধরের ঘটনায় সোহানসহ অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা করা হয়। এই মামলার পর সোহানের মা শামীমা ইয়াসমিন তার (ছাত্রীর) মা ও দুই ভাইদের নামে সন্ত্রাস ও মাদক আইনে মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাদের অভিযোগের সত্যতা পায়নি। বর্তমানে সেই মামলাও আদালতে বিচারাধীন।

ওই ছাত্রী বলেন, ‘এরপর সোহান ও তার বন্ধ্রুা আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করতে থাকে। মানসম্মানের ভয়ে আমরা বাড়ির বাইরে যেতে পারি না। পরে গত বছর নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করি। মামলাটি তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/১৮অক্টোবর/এসএস/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :