শত ফুল ফুটতে দিন

মুহাম্মদ নূরে আলম
  প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর ২০২১, ১৩:৫৬
অ- অ+

এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন মুহাম্মদ জাকারিয়া যিনি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। তাকে নিয়ে কোচিং সেন্টারের টানাটানি নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদ্রাসায় পড়ুয়াদের আধিক্য বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামালের একটি পুরানো বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। এর আগেও মাদ্রাসা পড়ুয়ারা ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন কিন্তু বিদ্বেষমূলক আলোচনা কমই হয়েছে। আমি কখনো মাদ্রাসায় পড়িনি, তবে মাদ্রাসায় শিক্ষিতদের কিছু বিড়ম্বনা প্রত্যক্ষ করেছি। একটি কোমলমতি শিশু যখন মাদ্রাসায় যায় তখন থেকেই হুজুর, মোল্লা ইত্যাদি বিশেষণ দেওয়া হয়। তাদের সকল কাজে সবার নজর থাকে, সামান্য পান থেকে চুন খসলেই বিপদ। শুনতে হয় নানা কথা। নিজেরা যাই করুক, সবাই তাদের দেখতে চায় পঙ্কিলতা মুক্ত। সেজন্য সমাজ তাকে সম্মানও দেয়। তবে, মসজিদের বাইরে আর তাকে কেউ কেউ দেখতে চান না। তাই চাকরির সাক্ষাতকারেই নানা নেতিবাচক কথা শুনতে হয় তাদের। এমনকি বিসিএস পরীক্ষার ভাইভাতেও অনেকে নেতিবাচক প্রশ্ন শুনেছেন, কারও এই নিয়ে বিস্তর অভিযোগও আছে। একজন মাদ্রাসা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পাস করলেও কারও কারও দৃষ্টিতে তিনি মাদ্রাসার ছাত্রই থেকে যান। অথচ অন্যদের ক্ষেত্রে তা হয় না।

মাদ্রাসা নিয়ে রাজনীতি হয়েছে, হচ্ছে এবং আরও হবে। এক সময় মাদ্রাসা স্তরের দাখিল ও আলিমে ১০০ নাম্বারের বাংলা ও ইংরেজি পড়ানো হতো। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পড়ুয়ারা ইংরেজি এবং বাংলায় কম গুরুত্ব দিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজিতে অনেক ভালো করলেও তাদের ইংরেজি ও অনেক ভালো বিষয়ে পড়তে দেওয়া হতো না। কারণ হিসেবে বলা হতো তারা ২০০ নাম্বারের বাংলা ও ইংরেজি পড়েনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতো। এইসব সমস্যা তৈরির ক্ষেত্রে আওয়ামী ও বাম ঘরানার শিক্ষকদের দায়ী করা হলেও ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় আসলেও এ সমস্যা নিরসনে তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরঞ্চ বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের একটি গ্রুপ এর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন। বৈষম্যের বিষয়টি আদালতেও গড়ায়। পরে এ নিয়ে কাজ শুরু করেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ২০১৩ সালে মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে ও ২০১৪ সালে দশম শ্রেণিতে ২০০ নাম্বারের বাংলা ও ইংরেজি কোর্স চালু করেন। এসব শিক্ষার্থীরা ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত দাখিল পরীক্ষায় ২০০ নাম্বারের বাংলা ও ইংরেজি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ধারাবাহিকভাবে ২০১৭ সালে আলিম পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজিতে ২০০ নাম্বারের পরীক্ষা চালু করা হয়। এখন মাদ্রাসা শিক্ষা এবং মূল ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে মৌলিক তেমন কোনো পার্থক্য নেই। বরং মাদ্রাসায় পড়ুয়ারা অন্যদের চেয়ে দাখিল ও আলিম উভয় স্তরে ২০০ নাম্বারের কোর্স বেশি পড়েন।

সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি দৃশ্যমান বৈষম্য নিরসন করেছেন শেখ হাসিনার সরকার। আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিলেন এবং আওয়ামী সরকারই এর নিরসন করেছেন। অথচ এই সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীলরাই মাদ্রাসা পড়ুয়াদের এগিয়ে যাওয়াকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করছেন। কিছু ক্ষেত্রে কেউ কেউ উস্কে দিচ্ছেন। অথচ এই সফলতার পুরো কৃতিত্বের দাবিদার সরকার।

বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তবুদ্ধির চর্চা কেন্দ্র বলা হলেও এখানকার অনেকের মস্তিস্ক বাইরে বন্ধক রেখে আসার কারণে তাদের কাছে বৈচিত্র ভালো লাগে না। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলো যেখানে বৈচিত্রকে গুরুত্ব দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের ওইসব দেশে পড়াশুনার সুযোগ করে দিচ্ছে, সেখানে আমরা নিজ দেশেই একটি গোষ্ঠীকে পরবাসী করে দেওয়ার প্রচেষ্টায়রত। মেধার পরীক্ষায় জিতে আসা সবাইকে স্বীকৃতি দেয়া উচিত। নতুন করে বৈষম্য তৈরি করা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমাদের ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না যে, হাত দিয়ে সূর্যের আলো রুখা যায় না।

লেখক: সাংবাদিক ও সাবেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাস, ঢাকা।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
খুলনায় যৌথ অভিযানে অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবাসহ আটক ১
বিএনপির বিরুদ্ধে চিহ্নিত গোষ্ঠী অপপ্রচার চালাচ্ছে: ড্যাব
প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধন হচ্ছে সোমবার
জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে : মির্জা ফখরুল 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা