সুন্দরী, স্মার্ট, বহু তরুণের স্বপ্ন, তবু বিয়ে করলেন না টেনিস তারকা লিনু!

রূপে-গুণে কোনো দিকেই কম ছিলেন না জোবেরা রহমান লিনু। যেমনি দেখতে, তেমনি চলাফেরাতেও সুরুচিশীলা। অন্যদিকে টেনিসের কথা উঠলেই দ্যুতি ছড়ায় লিনুর ক্যারিয়ার। ১৬ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে নাম লিখিয়েছেন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। সাইক্লিংয়েও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। মাত্র বার বছর বয়সে টেনিসে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ হয়ে সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। বহু তরুণের হৃদয়ের স্বপ্ন ছিলেন রূপে-গুণে অনন্যা লিনু। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে একাই রয়ে গেলেন এখনো। বিয়েই করলেন না এই টেনিস তারকা!
লিনুর ভক্তরা তো বটেই, তাঁর ঘনিষ্ঠদের অনেকেরই এখনো প্রশ্ন কেন বিয়ে করলেন না তিনি? তবে কি সংসার জীবনে আগ্রহী নন তিনি? নাকি বিয়ে বা সাংসারিক বন্ধনকে ক্যারিয়ারের অন্তরায় বলে মনে করতেন? যদিও কখনো এসব প্রশ্নের খোলাখুলি কোনো উত্তর দেননি লিুন। একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ছেলে ইয়াদ আলাভির জন্য জীবনও বাজি রাখতে পারেন তিনি। ইয়াদ আসলে তাঁর ভাইয়ের ছেলে। তাঁকে ঘিরেই জীবন আবর্তিত তার।
প্রায় ষাটের দুয়ারে নিঃশ্বাস ফেলা জোবেরা রহমান লিনু দীর্ঘদিন নেই কোনো আলোচনাতেও। টেনিস ছেড়ে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে সক্রিয় ছিলেন দীর্ঘসময়। যথাযথ মূল্যায়ন, মর্যাদা নিশ্চিত হচ্ছে না অভিযোগে, গুটিয়ে নিয়েছেন নিজেকে। করোনা মহামারিতে ঘরবন্দি সময় কাজে লাগিয়েছেন লেখালেখিতে। লিখেছেন আত্মজীবনী। যদিও প্রকাশ হয়নি কখনো। অনিয়মিত হলেও কবিতাও লেখেন তিনি।
১৯৭৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ১৬ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন জোবেরা লিনু। একটা খেলায় এত দীর্ঘ সময় আধিপত্যের ঘটনা বিরল। টেবিল টেনিসে লিনুর এই কীর্তি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ঠাঁই করে নিয়েছে। বাবার চাকরি সূত্রে সিলেটের শাহজীবাজারে তাঁর বেড়ে ওঠা। ইঞ্জিনিয়ার বাবার সঙ্গে বড় বোন মুনিরা মোর্শেদ হেলেন ক্লাবে গিয়ে টেবিল টেনিস খেলতেন। লিনু একদিন তাঁর সঙ্গী হয়েই প্রেমে পড়ে যান খেলাটার।
মাত্র আট বছর বয়সে ১৯৭৩ সালে জোবেরা রহমান লিনু প্রথম টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। সে বছর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাব ওপেন টেবিল টেনিস টুর্নামেন্টে লিনু বড়দের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে রানারআপ হন। চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তার বড় বোন মুনিরা মোর্শেদ। পরের বছর একই প্রতিযোগিতায় তিনি রানারআপ হন।
১৯৭৪ সালে প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেন, হেরে যান বড় বোন হেলেনের কাছেই। হেলেন লিনুর চেয়ে আট বছরের বড় ছিলেন। ১৯৭৭ সালে লিনু যখন প্রথম চ্যাম্পিয়ন হলেন, তত দিনে খেলা ছেড়ে দিয়েছেন তাঁর বড় বোন। ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে হেরেছেন তিনি খুব কমই।
১৯৭৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মাত্র ৩৭ বছর বয়সে ১৬ বার মেয়েদের টেবিল টেনিসে চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ গেমসের অধীনে টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় লিনু ১৯৮৮, ১৯৯২ ও ১৯৯৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হন। তিনি ১৯৭৮, ১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালে জাতীয় সাইক্লিং চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করেন।
জাতীয় পর্যায়ে অনন্য ক্যারিয়ারের অধিকারী এই তারকার অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার খুব সমৃদ্ধ হয়নি। এশীয় বা দক্ষিণ এশীয় পর্যায়েও উল্লেখযোগ্য কিছু জিততে পারেননি। সে জন্য লিনুরও আক্ষেপ কম নয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুব বেশি খেলার সুযোগ পাননি। বছরে একটি কি দুটি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েই দারুণ কিছু করাটা ছিল ভীষণ কঠিন। আর জাতীয় দলের খেলোয়াড় হিসেবে সে মানের কোচিংও পাননি। লিনু তাই উজ্জ্বল একান্ত নিজের প্রতিভায়।
২০০৫ সালে বাংলাদেশে ইউনিসেফের ক্রীড়াদূতও হয়েছিলেন লিনু। খেলা ছাড়ার পর নিজের প্রিয় ডিসিপ্লিন টেবিল টেনিসে সাংগঠনিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। টেবিল টেনিসে সহসভাপতির পর অ্যাডহক কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।
জোবেরা রহমান লিনু ১৯৬৫ সালের ৯ জুন চট্টগ্রামের কাপ্তাইতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শেখ আবদুর রহমান ছিলেন সরকারি প্রকেৌশলী। তাঁর মায়ের নাম আঁখি রহমান। কাপ্তাই স্কুল থেকেই তাঁর শিক্ষা জীবনের শুরু হয়। তারপর সিলেটে পড়াশোনা করেছেন বেশ কয়েক বছর। এসএসসি পাশ করেন নরসিংদী জেলা থেকে। ঢাকার লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রী পাস করেন। পরে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে মনোবিজ্ঞানে দ্বিতীয় বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন।
(ঢাকাটাইমস/০৬ফেব্রুয়ারি/এইচএফ/জেবি)

মন্তব্য করুন