১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সিইসি কে ছিলেন? জানলে আপনিও অবাক হবেন

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:৪২| আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:৩৯
অ- অ+

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে দেশের নানান মহলে আলোচনা এখন তুঙ্গে। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য কমিশন গঠন করা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে সার্চ কমিটি। নতুন কমিশনে জায়গা পেতে জোর চেষ্টাও চালাচ্ছেন অনেকে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ বাকি পদে আসতে চেষ্টায় সাবেক বিচারপতি, সাবেক আমলাদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, পেশাজীবী নেতারাও আছেন। অন্যদিকে নিরপেক্ষ ইসি গঠন হবে না এই আশঙ্কায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটভুক্ত দল ছাড়া বিএনপি অন্য দলগুলোরও খুব বেশি আগ্রহ নেই এ নিয়ে।

এমন বাস্তবতায় পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তানের ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনামলে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। তবে ওই নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে যিনি দায়িত্বে ছিলেন তার পরিচয় অনেকেরই অজানা।

সিইসির দায়িত্বে থাকা বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ১৯৮২ সালে জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। সময়ের পরিক্রমায় তৎকালিন সিইসি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদেও আসীন হয়েছিলেন।

যেভাবে সিইসির দায়িত্ব পান আব্দুস সাত্তার:

জেনারেল ইয়াহিয়া নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দেয়ার পর প্রথমেই নির্বাচন কমিশন গঠনে উদ্যোগ নেন। সেই কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে।

১৯৬৯ সালের ২ জুলাই এই কমিশনের যাত্রা শুরু হয়। এই পদে ছিলেন ১৯৭২ সাল পর্যন্ত। পরে আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বাধীন কমিশন সারাদেশে ৫০০ রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেয়। ১ হাজার ৪০০ সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রায় ৩০ হাজার প্রিসাইডিং ও প্রায় তিন লাখ পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়।

শুধু তাই নয়, নির্বিঘ্নে ভোট দেয়ার সুযোগ তৈরিতে নির্বাচনকালীন শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মোতায়েন করা হয় ১ লাখ ১০ হাজার আনসার সদস্য। নির্দেশনা অনুযায়ী সড়কে টহলে রাখা হয়েছিল সেনাবাহিনীর সদস্যদের।

রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী : বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে ৭০ সালের ওই নির্বাচনে অংশ নেয় ২৪টি রাজনৈতিক দল। ৩০০ আসনে ১ হাজার ৯৫৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও অনেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়। মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে ১,৫৭৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে লড়াই করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৭০ আসনে প্রার্থী দেয়। এর মধ্যে ১৬২টি আসন পূর্ব পাকিস্তানে এবং বাকিগুলো পশ্চিম পাকিস্তানে। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ছিল ১৫১। পাকিস্তান পিপলস পার্টি মাত্র ১২০ আসনে প্রার্থী দেয়। তার মধ্যে ১০৩টি ছিল পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে। পূর্ব পাকিস্তানে তারা কোনো প্রার্থী দেয়নি।

পিএমএল (কনভেনশন) ১২৪ আসনে, পিএমএল (কাউন্সিল) ১১৯ আসনে এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাইয়ুম) ১৩৩ আসনে লড়াই করে। জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগ পায় ১৬০ আসন।

আর পাকিস্তান পিপলস পার্টি ৮১ আসন পায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১৪ আসনে বিজয়ী হওয়া ছাড়া বাকি দলগুলো হাতে গোনা কয়েকটি করে আসনে জিতে। প্রাদেশিক নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ২৮৮টিতে জয়লাভ করে।

এক নজরে বিচারপতি আবদুস সাত্তার:

তথ্য অনুযায়ী, আব্দুস সাত্তার ১৯০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুরের দাড়কা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৮ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম এ এবং ১৯২৯ সালে বি এল ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি কলকাতা জজকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন।

১৯৪১ সালে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে তিনি কলকাতা করপোরেশনের কাউন্সিলর (১৯৩৯), কলকাতা ইম্প্রুভমেণ্ট ট্রাইব্যুনালের অ্যাসেসর মেম্বার (১৯৪০-৪২) এবং কলকাতা করপোরেশনের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (১৯৪৫) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ভারত বিভক্তির পর আব্দুস সাত্তার ঢাকায় এসে (১৯৫০) ঢাকা হাইকোর্টে আইন পেশায় কাজ শুরু করেন। পরে ১৯৫৩ সালে এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে কৃষক-শ্রমিক পার্টি গঠিত হলে তিনি তাতে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং আই. আই চুন্দ্রিগড়ের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন ১৯৫৭ সালে।

পরবর্তিতে ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা হাইকোর্টের এবং ১৯৬৮ সাল থেকে একবছর পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। বিচারপতি সাত্তার ১৯৭৩ সালের শেষদিকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসার পর বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি বাংলাদেশ জীবনবীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান, সংবাদপত্র বেতন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল’ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সেরও চেয়ারম্যান ছিলেন।

১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের বিশেষ উপদেষ্টা নিযুক্ত হন আব্দুস সাত্তার। দায়িত্ব দেওয়া হয় আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। ১৯৭৭ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন।

পরবর্তিতে জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জাগদলের আহ্বায়ক ছিলেন বিচারপতি সাত্তার। জাগদল বিলুপ্ত করে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত বিএনপির সহ-সভাপতি পদে যোগদান করেন সাবেক এই বিচারপতি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হলে দায়িত্ব নেন দেশের ভাররপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির। ওইবছরই তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পরের বছর বিএনপির চেয়ারম্যান হন।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার। ১৯৮৫ সালের ৫ অক্টোবর ঢাকায় মারা যান এই রাষ্ট্রপতি।

(ঢাকাটাইমস/১৬ফেব্রুয়ারি/বিইউ/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পুলিশকে জনবান্ধব ও মানবিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সংস্কারের বিকল্প নেই
সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাড়ালে কেউ ব্যাংকে টাকা রাখবে না: অর্থ উপদেষ্টা 
পুরনো খেলায় নতুন প্লেয়ার হতে আসি নাই: নাহিদ ইসলাম  
৩০ বল ধরে বাউন্ডারি নেই,পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফিরলেন পারভেজ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা