প্রসবোত্তর পেটে গ্যাস? প্রশান্তি চান? জানুন উপায়

সাইখ আল তমাল, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৩ মার্চ ২০২২, ০৯:১১| আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২২, ০৯:১৫
অ- অ+

মা হওয়ার অনুভূতি যতটা আনন্দের ততটাই কষ্টকর গর্ভাবস্থা চলাকালীন সময়ে। গর্ভাবস্থায় নানা অসুবিধা পার করতে হয় একজন মায়ের। শিশু জন্মের পরেও অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম সমস্যা গ্যাস হওয়া। বাচ্চা জন্ম নেয়ার পর গ্যাসযুক্ত এবং ফুলে যাওয়া পাকস্থলি মোটামুটি সাধারণ ঘটনা।

প্রসবের পর গ্যাস হওয়ার লক্ষণগুলো হালকা, মাঝারি বা গুরুতর যাই হোক না কেন অস্বস্তি কমানোর কিছু উপায় রয়েছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই উপসর্গগুলোর কারণ কী এবং এর থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে কী করতে পারেন।

প্রসবোত্তর গ্যাস এবং পেট ফুলে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ

জন্ম দেওয়ার পরে মায়ের শরীর হরমোন এবং শারীরিকভাবে অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। শুধু তাই নয় মাতৃদেহের ক্রিয়াকলাপের মাত্রা পরিবর্তিত হতে পারে, খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন হতে পারে এবং প্রসবের পর ওষুধ ও অন্যান্য পরিপূরক গ্রহণ করার ফলে অন্ত্রের কাজে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। কিছু প্রধান কারণ নিম্নরূপ- কোষ্ঠকাঠিন্য

সি সেকশন সার্জারি অথবা সাধারণ প্রক্রিয়ায় প্রসব হলে প্রসবোত্তর গ্যাস এবং পেট ফুলে যাওয়ার জন্য প্রধান কারণ হল কোষ্ঠকাঠিন্য। কোষ্ঠকাঠিন্যকে প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হয় কেননা যখন অন্ত্র স্বাভাবিক ক্রিয়া করে না, তখন পরিপাকতন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। যার ফলে গ্যাস হয় এবং পেট ফুলে যায়। প্রসবোত্তর কোষ্ঠকাঠিন্য সাধারণত গর্ভাবস্থার পরে ডিহাইড্রেশন, ফাইবার কম খাওয়া এবং বসে থাকার কারণে ঘটে, এমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞ নার্স-মিডওয়াইফদের।

বিশেষজ্ঞরা আরো জানিয়েছেন গর্ভবতী নারীর শরীর শিশুর জন্মের পরে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় থাকে এবং হাইড্রেশনের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। মা যখন বুকের দুধ খাওয়ান তখন শরীরের হাইড্রেশনের প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে যায়।

সি-সেকশন সার্জারি

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, সি-সেকশন সার্জারির কারণে গ্যাস এবং পেট ফুলে যাওয়ার প্রবণতা বেশি হতে পারে।

ব্যথার ওষুধ

কখনো কখনো সি-সেকশন সার্জারির পরে বা সাধারণ প্রসবের ক্ষেত্রে শিশুর জন্মের পর যোনিপথে ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেকে ব্যথার ওষুধ খায়। ওষুধগুলো হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিতে পারে। যে কারণে এ জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আমেরিকান একাডেমি অফ ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানসের মতে, প্রসবের সময় যেকোনো ধরনের অ্যানেস্থেসিয়া বা প্রসবের পরে মায়ের জন্য দেওয়া ব্যথা উপশমের ওষুধগুলো অন্ত্রকে ধীর করে দিতে পারে। প্রসবোত্তর ব্যথা উপশমের জন্য বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে। এর মধ্যে অনেক উপায় অবলম্বন করলে অন্যদের তুলনায় গ্যাস এবং পেট ফুলে যাবার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে। তাই আপনার জন্য কোন পদ্ধতি উপযোগী হতে পারে সে বিষয়ে একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর পরামর্শ গ্রহণ করুন।

সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ

প্রসবের সময় প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হওয়া মায়েদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে প্রায়শই আয়রন সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। কিন্তু এ জাতীয় সাপ্লিমেন্ট পাচনতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। কারণ আয়রন হজমের অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে যার প্রভাবে ফোলাভাব এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। প্রসবের পর যদি এ জাতীয় সমস্যা কারো সাথে হয় তাহলে দায়িত্বে থাকা ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। যোনি/রেকটাল টিয়ারস এবং পেলভিক ফ্লোর ইনজুরি

অনেক সময় প্রসবের পরে যোনি বা মলদ্বার ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে যদি এপিসিওটমি হয় তাহলে স্বাভাবিক অন্ত্রক্রিয়াতে অস্বস্তি অনুভূত হবে এবং ভীতি কাজ করবে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস এবং ফোলাভাবের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এর ফলে যদি কারো ক্ষেত্রে সমস্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে তাহলে দেরি না করে অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

এর থেকে প্রতিকারের উপায়

প্রসবের পর গ্যাস হওয়া এবং পেট ফুলে যাওয়া থেকে পরিত্রাণের বেশ কিছু উপায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী উপশমের কিছু উপায় উল্লেখ করা হলো-

ব্যায়াম

শরীরের পাকযন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে হলে অবশ্যই কিছু ব্যায়াম করতে হবে। তবে যেহতু প্রসবের পর একজন মায়ের শরীরে অনেক পরিবর্তন হয় তাই ধীরে ধীরে কিছু ব্যায়াম করতে হবে। অবশ্যই হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করতে হবে। যেমন বাড়ির মধ্যে হাঁটাচলা বাড়ানো এবং স্বাভাবিক শারীরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া। পরে এ ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়ামের ধরন পরিবর্তনের দিকে আগাতে পারেন। কারণ ব্যায়াম বা স্বাভাবিক শারীরিক কার্যক্রলাপ চালানোর মাধ্যমে এ জাতীয় সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

হাসপাতালের বিছানায় থেকে যোগব্যায়াম

প্রসবোত্তর প্রথম কয়েক দিনে আপনি ব্যায়ামের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নাও পেতে পারেন। তাই হাসপাতালের বিছানায় যোগব্যায়াম শুরুর মাধ্যমেই আপনার সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের মাত্রা বাড়িয়ে দিন

যেহেতু কোষ্ঠকাঠিন্য প্রসবোত্তর সময়ে গ্যাস এবং পেট ফুলে যাওয়ার জন্য প্রধান কারণ, তাই প্রসবোত্তর মায়ের দেহের অন্ত্রগুলো সচল করতে এবং অস্বস্তিকর উপসর্গগুলো কমাতে তাদেরকে ফাইবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার দ্রুত হজম হয়। তবে শুরুতেই গ্যাসের জন্য ওষুধ না খেয়ে ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করে নেয়াই উত্তম। কারণ নবজাতককে মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হয়।

উষ্ণ তরল পানীয় এবং হিটিং প্যাড

উষ্ণ তরল পানীয় পান করা কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস এবং ফোলাভাব দূর করতে সাহায্য করার দুর্দান্ত উপায়। এর মধ্যে ভেষজ চা, স্যুপ, উষ্ণ পানিতে গোসল করা এবং হিটিং প্যাড ব্যবহার খুবই উপকারী উপায়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী, যদি প্রসবের পরে কোনো গ্যাস না হয়, বিশেষ করে অস্ত্রোপচারের পরে এবং পেটের শব্দ খুব শান্ত হয়, তাহলে তা পক্ষাঘাতগ্রস্ত অন্ত্রের জন্য হতে পারে। তাই সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলাই মায়ের স্বাস্থ্যের পক্ষে কল্যাণের।

(ঢাকাটাইমস/০২মার্চ/এসএটি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গাজায় ত্রাণপ্রার্থীসহ আরও ৮৬ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল বাহিনী
দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস, তাপমাত্রা কমতে পারে
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা মূল্যায়ন: বোমা হামলা ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ধ্বংস করতে পারেনি
ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া না করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, বুঝবেন যেভাবে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা