ডায়াবেটিস রোগে ম্যাজিকের মতো কাজ করে ডাল

বর্তমানে ডায়াবেটিস বেশ প্রচলিত একটি রোগ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মানুবর্তী জীবন এবং ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে কিংবা শরীর যদি ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয় তাহলেই দেখা দেয় ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ। চিকিত্সকের মতে, যেকোনও ধরনের ডাল ডায়াবেটিসের যম। টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ম্যাজিকের মতো কাজ করে বিভিন্ন ধরনের ডাল ও বিভিন্ন দানা শস্য। মসুর, ছোলা, মুগ, মটর, কলাই জাতীয় ডাল খেলে ডায়াবেটিস হামলা চালাতে পারে না। ডালে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। তাই এটি লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খাবার। ডাল খাওয়ার পর রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ার গতি কমে যায়। সপ্তাহে ১ দিন ডাল খেলেই ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ৩৩ % কমে যায়।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভাত, মাখন, আলুসিদ্ধ, ডিম খেয়ে যে কার্ব্রোহাইড্রেট প্রোটিন পাওয়া যায়, এক বাটি মসুর ডাল খেলেই সেই চাহিদা মিটে যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যতালিকায় তাই ডাল রাখতেই হবে। আর তা যদি কলাইয়ের ডাল হয়, তাহলে তো কথাই নেই। কারণ ডাক্তাররাই বলেন কলাইয়ের ডাল ডায়াবেটিস প্রতিরোধের মহৌষধ। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ এই কলাইয়ের ডাল।
মসুর ডাল যা সবচেয়ে বেশি খাই আমরা। অন্যান্য ডালের তুলনায় এটি তৈরি করা সবচেয়ে সহজ। মসুর ডালের গ্লাইসেমিক সূচক মাত্র ২৫। এতে কার্বোহাইড্রেট কম এবং ফাইবার বেশি। এছাড়াও এটি প্রোটিনের ভাণ্ডার। বিশেষজ্ঞদের মতে মসুর ডাল রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এতে আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ফাইবার সমৃদ্ধ এই ডাল আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা করতেও সহায়ক।
ছোলার ডালে সর্বনিম্ন গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৮। সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি এটি অত্যন্ত পুষ্টিকরও বটে। কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকার পাশাপাশি এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং প্রোটিন থাকে। এটি আপনার কোলেস্টেরল কম রাখে। এছাড়াও, এই ডালে উপস্থিত ফলিক অ্যাসিড আপনার শরীরকে রক্তাল্পতা থেকে রক্ষা করে নতুন লাল রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস রোগীরা মুগ ডাল খেলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। আসলে, এটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি রক্তে উপস্থিত গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে কাজ করে। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের দেহে যাতে ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক থাকে তাই মুগ ডাল খেতে বলা হয়। মুগডালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৪৩। আর তা সহজেই ইনসুলিনকে বার্ন করতে পারে। ফলে ডায়াবেটিস খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে। মুগ ডাল কার্বোহাইড্রেটের ধীর নিঃসরণ ঘটায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রার আকস্মিক স্পাইক প্রতিরোধ করে। এটি পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং কপারের মতো মাইক্রো এবং ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টে সমৃদ্ধ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিউলির ডালে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৪৩। এটি ইডলি এবং দোসার মতো জিনিস তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই ডাল খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা রক্তপ্রবাহে কার্বোহাইড্রেট নিঃসরণকে ধীর করে দেয়। এছাড়া এই ডালে উপস্থিত পটাশিয়াম রক্তনালীর অপ্রয়োজনীয় সংকীর্ণতা প্রতিরোধ করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

মন্তব্য করুন