জয়েন্টের ব্যথা দূর করার প্রাকৃতিক ভেষজ উপায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর ২০২২, ০৯:১৯

মানুষের খুব সাধারণ একটি অসুখ হলো জয়েন্টের ব্যথা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জয়েন্টের ব্যথা কিংবা বাতের ব্যথা জাঁকিয়ে বসে। উঠতে বসতে গাঁটে গাঁটে ব্যথা হয়। যন্ত্রণার জোটে সারারাত ঘুমোতে পারেন না। প্রদাহ এতটাই বেড়ে যায় যে সহ্য করা যায় না। আর শীতকাল আসলেই এ সমস্যা আরো বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে পেইন রিলিফ জেল আর পেইনকিলার খাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

জয়েন্টের ব্যথায় সমস্যা অনেক কারণে হতে পারে। অনিয়মিত জীবনযাপন, বংশগত, অন্য বিভিন্ন রোগের প্রভাবে। এছাড়া জয়েন্টে ব্যথার জন্য অনেক কারণ দায়ী যেমন স্ট্রেন, অস্টিওআর্থারাইটিস, গাউট, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, আঘাত, মচকে যাওয়া, প্রদাহ ইত্যাদি। জয়েন্টে ব্যথা সাধারণত হাঁটু, গোড়ালি, নিতম্ব, কাঁধ, আঙ্গুল, ঘাড় ইত্যাদিতে হয়। শুধু বেশি বয়সের মানুষই নন, কমবয়সীরাও বাতের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে।

ব্যথায় পেইন কিলার খাওয়া অবশ্যই ক্ষতিকর। এই সব ওষুধের প্রতিক্রিয়া এতটাই মারাত্নক যে তা কিডনি বা লিভারের ক্ষতি করে। তাই অসুস্থতা বা আঘাত থেকে ব্যথায় আর ওষুধ নয়, দারস্থ হোন কিছু প্রাকৃতিক উপায়ের। তাহলে ক্ষতিকর কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হবে না, আবার ব্যথা থেকে মুক্তিও মিলবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাকৃতিক ব্যথানাশক ব্যবহারে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এতে একদিকে যেমন ব্যথা সেরে যায়, তেমনি স্বাস্থ্য থাকে ভালো। জেনে নিন জয়েন্টের ব্যথা দূর করার হাতের নাগালে থাকা প্রাকৃতিক ভেষজ উপায়:

আদা ও হলুদ

জয়েন্টে ব্যথা হলে আদা ও হলুদ দিয়ে তৈরি ভেষজ চা খেতে পারেন। এই দুটিরই প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আদা, হলুদ চা বানাতে একটি পাত্রে ২ কাপ পানি ফুটিয়ে নিন। এতে আধা চা চামচ আদা গুঁড়ো এবং হলুদের পেস্ট দিন। এটি ১০ ​​মিনিটের জন্য ফুটতে দিন এবং তারপর এটি একটি কাপে ফিল্টার করুন। স্বাদ অনুযায়ী এতে মধু যোগ করুন এবং দিনে দুবার খান। ব্যথায় আরাম পাবেন।

অলিভ অয়েল

অলিওক্যানথাল নামক একটি উপাদান ভার্জিন অলিভ অয়েলে থাকে, যা জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে কার্যকর। সালাদ, পাস্তা, সবজি ইত্যাদি তৈরিতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। আপনি অলিভ অয়েল দিয়ে জয়েন্টে ম্যাসাজ করতে পারেন, যাতে জয়েন্ট টিস্যু শিথিল হয়।

গরম তেল

গরম তেল মালিশ করলে ব্যথা, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এই ক্ষেত্রে আপনি রসুনের তেল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও তিলের তেল, সরিষার তেল, ক্যাস্টর অয়েল হল এমন কিছু তেল যা রান্নাঘরে সহজে পাওয়া যায় এবং এগুলো আপনি ব্যথা উপশমের জন্য জয়েন্টে লাগাতে পারেন।

রসুন

রসুন তেল মালিশের পাশাপাশি খালি পেটে রসুন খান। রসুনে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য, যা জয়েন্টের ব্যথা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন খালি পেটে পানির সঙ্গে এক খোয়া রসুন খান। এর সাহায্যে জয়েন্টের ব্যথার সমস্যা ছাড়াও গ্যাস, ফোলা ইত্যাদি সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন।

গাজরের রস

গাজরের রস পান করলে জয়েন্টের ব্যথাও উপশম হয়। গাজরের রস টেন্ডনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি জয়েন্টের ব্যথা কমায়। নিয়মিত গাজরের রস পান করলে জয়েন্টের ব্যথা কমে যায়।

পেঁয়াজ

আপনার ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ অন্তর্ভুক্ত করুন। পেঁয়াজ একটি প্রদাহরোধী খাবার। এতে ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পেঁয়াজেও সালফার কমপ্লেক্স রয়েছে, যা ব্যথার কারণ এনজাইমগুলিকে বাধা দেয়।

হলুদ ও গোলমরিচ

গবেষণায় জানা গেছে, হলুদ এবং গোলমরিচ দুটিই শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। হলুদে কারকুমিন নামে এক ধরনের উপাদান থাকে যার ওপর এর উপকারিতা অনেকটাই নির্ভর করে। কিন্তু কারকুমিন নিজে থেকে শরীরে ভালোভাবে মিশে যেতে পারে না। সেক্ষেত্রে গোলমরিচের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কারকুমিন পুরোপুরি শরীরে মিশে যায়। গোলমরিচের মধ্যে পাইপারিন নামের এক ধরনের উপাদান পাওয়া যায়। কারকুমিন ও পাইপারিন একসঙ্গে স্বাস্থ্যের সুরক্ষা করে। এই দুটি মসলা একসঙ্গে হজম ক্ষমতা বাড়ায়। এমনকি ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। তাই শরীরে সামান্য ব্যথা হলে হলুদ ও গোলমরিচ একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতেও কারকুমিন ও পাইপারিনের জুড়ি নেই।

এপসম লবণ

এপসম লবণের সাথে হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখলে হাড় এবং জয়েন্টের ব্যথা পাশাপাশি পেশীর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আর্থ্রাইটিসের ব্যথা হ্রাস করে। পাঁচ লিটার পানিতে দুই কাপ এপসম সল্ট মিশিয়ে তাপ দিন। লবণ মিশ্রিত এ পানি কুসুম গরম পানিতে রূপ নিলে আক্রান্ত জয়েন্টকে ভেজান অথবা সেখানে গরম সেঁক দিন। নিমিষেই ব্যথা দূর হয়ে যাবে।

আঙ্গুর

আঙ্গুর ফলের রসে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর উপাদান আছে। রোজ এক কাপ করে খেতে পারলে ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।

আনারস

এতে প্রচুর পরিমাণে ব্রোমেলেইন আছে, যা রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর পাশাপাশি পেশিতে টান ধরা এবং প্রদাহ কমায়। বিশেষ করে ইনফ্লমেটরি ডিজিজ আর্থ্রাইটিস-এর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

লবঙ্গ

লবঙ্গ এক ধরনের মিষ্টি এবং মশলাদার ঔষধি যা খাওয়ার পর ব্যথা উপশম করতে পারে। মাথা ব্যথা, বাত এবং অন্যান্য প্রদাহ এবং দাঁত ব্যথার চিকিৎসার জন্য লবঙ্গ ব্যবহার করে। মাথা ব্যথা ও মাথা যন্ত্রণা কমায়: ধোঁয়া, রোদ এবং ঠান্ডার জন্য শ্লেষ্মা বেড়ে নানা ধরনের মাথা ব্যথা বা মাথার রোগ দেখা দিতে পারে। মাথা ব্যথা কমাতে লবঙ্গের উপকারিতা অপরিসীম।

আদা

রোজ একটু করে আদা চিবিয়ে খেতে পারলে শুধু আর্থ্রাইটিস নয়, সব ধরনের ব্যথা থেকেই মুক্তি মিলবে।

মাছের তেল

এর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মাথা, পিঠ, স্নায়ু ও রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমায়।

সূর্যালোক

ভিটামিন-ডি এর মাত্রা কমে গেলে শরীরে খুব ব্যথা হয়। সেই ব্যথা কমাতে পারে সূর্যের আলো। কারণ এত প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে, যা ঘাটতি মিটিয়ে ব্যথা কমায়।

হাড়ের ঝোল

হাড়ের ঝোল আজকের ডায়েটে জনপ্রিয়তার বাইরে চলে যেতে পারে তবে এটি লজ্জাজনক। এটি কেবলমাত্র কোনও প্রাণীর কম অপচয় হওয়াই নয়, এটি পশ্চিমা ডায়েটে কোলাজেন, প্রোলিন, গ্লাইসিন এবং গ্লুটামিন যুক্ত করে এখন মূলত এই সমালোচনামূলক উপাদানগুলির অভাব রয়েছে। হাড়, মজ্জা এবং ত্বক দিয়ে তৈরি হাড়ের ঝোল খুব স্বাদযুক্ত এবং এতে প্রচুর পুষ্টি থাকে যা ব্যথা হ্রাস করতে পারে।

অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা মাংসপেশীর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে। এমনকি ব্যথার স্থানে অ্যালোভেরা জেলের ক্রিম লাগালে ব্যথা কমে যায়। অ্যালোভেরায় মিনারেল, অ্যামিনো অ্যাসিডসহ নানা ধরণের পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। যা হাড় ও মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে।

তাপ এবং বরফ

প্রথমে আপনার ব্যথার জায়গায় বরফ লাগান। এটি কেবল ফোলা এবং প্রদাহকে হ্রাস করে না, এটি অঞ্চলটি স্তব্ধ করে দেয়। বরফ পোড়া রোধ করতে সক্ষম। ৩০ মিনিট বরফ লাগিয়ে আক্রান্ত স্থানটি ঘরের তাপমাত্রায় ফিরে আসতে দিন এবং তাপ প্রয়োগ করুন। একবার প্রদাহ ঠাণ্ডা দ্বারা হ্রাস পেয়েছে, উত্তাপ শক্ত হয়ে যায় এবং বেদনাদায়ক অঞ্চলে সংকোচিত পেশীগুলো শিথিল করে।

(ঢাকাটাইমস/১২ নভেম্বর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :