ভিশনস্প্রিং ও ব্র্যাকের যৌথ উদ্যোগে দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে ২০ লক্ষ নিকট দৃষ্টিত্রুটির মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:৩৫ | প্রকাশিত : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:৩০

ভিশনস্প্রিং ও ব্র্যাক হেলথ, নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন প্রোগ্রামের (এইচএনপিপি) যৌথ উদ্যোগ ও অর্থায়নে পরিচালিত রিডিং গ্লাসেস ফর ইমপ্রুভড লাইভলিহুড (আরজিআইএল) কর্মসূচীর আওতায় ২০ লক্ষ নিকট দৃষ্টিত্রুটির মানুষ তাদের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন।

এই সাফল্য উদযাপনের লক্ষ্যে ভিশনস্প্রিং এবং ব্র্যাক সোমবার ঢাকায় অবস্থিত ব্র্যাক সেন্টারে এক জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে এই কর্মসূচীর সাথে জড়িত স্বাস্থ্যকর্মী, কর্মী ও বিতরণকারীদের বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ও আইএপিবি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কান্ট্রি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ এএইচএম এনায়েত হোসেন, উগান্ডার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শক ডাঃ উপেনথায়ো জর্জ, ভিশনস্প্রিং-এর প্রতিষ্ঠাতা জর্ডান ক্যাসালো এবং ব্র্যাকের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ মুশতাক রাজা চৌধুরী। বক্তারা তাদের বক্তব্যে আরজিএলের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভিশনস্প্রিং-এর সিইও এলা গুডউইন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক শামেরান আবেদ এবং ভিশনস্প্রিং-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মিশা মাহজাবীন।

২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করা আরজিআইএল প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিলো, ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাথমিক চক্ষু সেবা সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করে, মানুষের সেবায় কাজে লাগানো। সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে যারা নিকট দৃষ্টিত্রুটির এবং এর ফলাফলে যাদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, তাদের চশমা বিতরণের মাধ্যমে স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে এই প্রোগ্রাম বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। কার্টিয়ার, ওয়ারবি পার্কার এবং ন্যাশনাল ভিশনের অর্থায়নে এই কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে আশাতীত সাফল্য পাওয়ার প্রেক্ষিতে উগান্ডা এবং জাম্বিয়াতেও এখন এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এই প্রোগ্রামে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিকট দৃষ্টিরত্রুটির (প্রিসবায়োপিয়া) সমস্যায় আক্রান্ত মানুষদের শনাক্ত করতে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। শনাক্তদের স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে চশমা বিতরণ করা হয়। চশমা বিতরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীরা বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষা, চিকিৎসার সুযোগ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে স্বল্প আয়ের মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

প্রোগ্রামটি চালু হওয়ার শুরুর দিকে বয়সজনিত নিকট দৃষ্টিত্রুটির সমস্যা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাহায্য ছাড়া কেবলমাত্র স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্বারা সমাধানের বিষয়টি বিতর্ক তৈরি করেছিলো। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ থাকলেও বর্তমানে তিনটি দেশে প্রায় ১০ হাজার স্বাস্থকর্মী ১ কোটি মানুষের চোখ পরীক্ষা করেছেন এবং এরমধ্যে নিকট দৃষ্টিত্রুটির সমস্যায় আক্রান্ত ২০ লক্ষ মানুষকে চশমা বিতরণের মাধ্যমে প্রোগ্রামটি পরিচালনা করছেন। এছাড়াও জটিল সমস্যায় আক্রান্তদের উচ্চ চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। গত বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের অনলাইন মডিউলে আরজিআইএল মেথডকে অন্তর্ভূক্ত করেছে।

ভিশনস্প্রিং এর সিইও এলা গুডউইন বলেন, ‘ষোলো বছর আগে আমরা কেবলমাত্র বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে লক্ষ মানুষের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে এবং চশমা বিতরণের কার্যক্রমকে সহজ করতে এই প্রোগ্রামটি শুরু করি। আজ আমরা এই লক্ষ্য অর্জন করেছি এবং তার জন্য আমরা গর্বিত। আমরা এই কার্যক্রমকে আরও লক্ষ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমরা আগ্রহভরে তাদের সাথে একসাথে কাজ করতে রাজি আছি, যারা এই লক্ষ্য অর্জনে প্রস্তুত।’

ব্র্যাক হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন প্রোগ্রামের (এইচএনপিপি) ডিরেক্টর ডাঃ মোরশেদা চৌধুরী বলেন, ‘সম্পদের অপ্রতুলতা স্বত্বেও কার্যকর একটি জনস্বাস্থ্যনীতি প্রয়োগের সফল উদাহরণ এই প্রকল্প। এই সমস্যাগুলো সাধারন মানুষের জীবনযাত্রার মান বাধাগ্রস্ত করে, উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত করে। অথচ দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীরাই এই ধরনের সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে সক্ষম। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে জনস্বাস্থ্যের মান উন্নয়নে বিভিন্ন মাইলফলক অর্জন করেছে। বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জনস্বাস্থ্য বিষয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে।’

ভিশনস্প্রিং সম্পর্কে :

প্রান্তিক ও সম্ভাবনাময় জনগোষ্ঠীকে চশমার ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করতে ২০০১ সালে যাত্রা শুরু হয় ভিশনস্প্রিং-এর। যাত্রার শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিলো দারিদ্রের ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের স্বল্পমূল্যে চশমা প্রদানের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, শিক্ষা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জীবনযাত্রা মান উন্নয়ন করা।

২০২১ সালের হিসেবে, ভিশনস্প্রিং ৮৭ লক্ষ মানুষের স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছে, যাদের দৈনিক আয় ৪ ডলারের কম ছিলো এবং এর মাধ্যমে এই জনগোষ্ঠীর জন্য ১৮ কোটি ডলার আয়ের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করেছে। এই উদ্ভাবনী সাফল্যের নিমিত্তে ভিশনস্প্রিং অর্জন করেছে দারুণ সব স্বীকৃতি। সামাজিক উদ্যোগের জন্য অর্জন করেছে স্কোল অ্যাওয়ার্ড। এছাড়াও ড্রেপার রিচার্ডস কাপলান, অ্যাস্পেন ইনস্টিটিউট এবং শোয়াব ফাউন্ডেশন থেকে সামাজিক উদ্যোক্তা ফেলোশিপ। এছাড়াও বিশ্বব্যাংক, ডিউক ইউনিভার্সিটি, ফাস্ট কোম্পানি এবং ট্রিবেকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ বিশ্বের আরও অনেক সংস্থা থেকে সম্মাননা অর্জন করেছে ভিশনস্প্রিং।

ব্র্যাক সম্পর্কে :

১৯৭২ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। প্রতিষ্ঠার পর আজ পর্যন্ত সারাবিশ্বজুড়ে ১০০ মিলিয়ন এরও বেশি মানুষের বৈষম্য ও দারিদ্র দূর করে তাদের সম্ভাবনাময় মানবশক্তিতে রুপান্তর করেছে।

ব্র্যাক তার নেতৃত্বের দক্ষতা, সঠিক পদক্ষেপ ও দীর্ঘমেয়াদী সুফল প্রদানের সক্ষমতার জন্য সুপরিচিত। ব্র্যাক প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, দূর্গম এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠী এবং আফ্রিকা ও এশিয়ার দূর্যোগ পরবর্তী সমস্যা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের বিষয়ে ব্র্যাকের বিভিন্ন উদ্যোগ কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। ব্র্যাক সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচী, মানবিক সাহায্য, সামাজিক উদ্যোগ, ব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্র্যাক দক্ষিণাঞ্চলে জন্ম নেওয়া একটি সংস্থা, যা তার দক্ষতা প্রমাণের মাধ্যমে বৈশ্বিক উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ব্যায় সাশ্রয়ী কর্মসূচী ও ফলপ্রসূ কর্মসূচী বাস্তাবায়নের কারণে জেনেভার সংবাদ সংস্থা ও এনজিওদের দ্বারা কয়েকবছর ধরে বিশ্বের নাম্বার উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে ব্র্যাক। ৫০টিরও বেশি দেশের সরকার ও উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রধান কার্যক্রম দারিদ্র বিমোচনে শিক্ষা কার্যক্রম প্রোগ্রামটিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। শিশুদের নিরাপদ শৈশব নিশ্চিত করতে ব্র্যাক হাতে নিয়েছে টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচী। এর আওতায় রয়েছে ব্র্যাক প্লে ল্যাব, ব্র্যাক হিউম্যানিটারিয়ান প্লে ল্যাব। যেখানে খেলার মাধ্যমে শিশুরা শিখবে এবং শেখার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে। এই কার্যক্রম ধারবাহিকভাবে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৩জানুয়ারি/এমএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :