সন্তানের সঙ্গে পিতা-মাতার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন

সাইদুর রহমান শাহিদ
 | প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:১১

পরিবারে একটি শিশু জন্মলাভ করার পর থেকে পিতা মাতার আদরযত্ন আর ভালোবাসায় বড় হতে থাকে। পিতা-মাতাই শিশুদের জীবনে তখন পরম আপনজন। শিশুর আনন্দ-বেদনা, দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ সবকিছুতেই পিতা-মাতা অত্যন্ত আন্তরিকতা আর মমতার সাথে সেসবে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

ধীরে ধীরে শিশুরা বড় হতে থাকে। প্রথমে বসতে শিখে, তারপর হামাগুড়ি দিতে শিখে। এভাবে একসময় শিশুরা হাঁটতে শিখে যায়, দৌড়াতে শিখে যায়। শিশুর হাতেখড়ি হবার পর শুরু হয় বিদ্যালয়ে গমনের পালা। বিদ্যালয়ে সহপাঠীরা তখন তাদের বন্ধু হয়ে ওঠে। একসঙ্গে দৌড়ঝাঁপ, খেলাধুলা, আর নিত্যদিনের মেলামেশায় তারা একে অপরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে তারা নিজের ভালো লাগা, খারাপ লাগা, আনন্দ আর বেদনার অনুভূতি একে অপরের মাঝে ভাগাভাগি করতে শুরু করে।

শিশুরা স্বভাবতই কৌতূহলী। অজানাকে জানার আগ্রহ তাদের মাঝে ব্যাপকভাবে লক্ষণীয়। চারপাশে কি কি ঘটছে, কেন ঘটছে এসব জানার আগ্রহও শিশুদের মাঝে ব্যাপক। বর্তমান সময় বিবেচনায় দেখা যায় শিশুদের পিতা-মাতা কর্মজীবন নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। একটি শিশু চাইলেও তার আগ্রহকে, তার কৌতূহলকে পিতা-মাতার কাছে প্রকাশ করতে পারে না। এর মূল কারণ পিতা-মাতার ব্যস্ততা।

মা-বাবার ব্যস্ততাই শিশুর মাঝে তাদের সঙ্গে একধরনের দূরত্ব তৈরি করে। এ দূরত্ব শিশু ও পিতা-মাতার মধ্যকার ঘনিষ্ঠতার মাঝে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। যার ফলে অজানাকে জানার অদম্য কৌতূহল শিশুরা তাদের পিতা-মাতার কাছে প্রকাশ করতে পারে না। এমনকি তারা তাদের জীবনের লক্ষ্য, সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে পিতা-মাতার কাছে পরামর্শও গ্রহণ করতে আগ্রহ পায়না। এ সমস্যা আরও ঘনীভূত হয় কৈশোরকালে, কিশোর কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালে। বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর কিশোরীরা কৈশোর থেকে তাদের যৌবনে পদার্পণ করে। জীবনের সেই বিশেষ পর্যায়ে কিশোর কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক বেশ কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে। সেই পরিবর্তন সম্পর্কে তারা অনবগত থাকে। তখন তারা প্রায়ই ভীত এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। সে পর্যায়ে তাদের সাথে পিতা-মাতার ঘনিষ্ঠতার প্রয়োজন। যেন কিশোর কিশোরীরা পিতা-মাতার সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে পারে, তাদের নিকট পরামর্শ গ্রহণ করতে পারে।

জীবনের পরিণত পর্যায়েও সন্তানদের সঙ্গে পিতা-মাতার ঘনিষ্ঠতা প্রয়োজন। বিশেষত জীবনের লক্ষ্য নির্ণয়, ক্যারিয়ার গঠন, পেশা নির্বাচন, সঙ্গী নির্বাচন ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে পিতা-মাতার মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ প্রয়োজন হয়। সন্তানের সঙ্গে পিতা-মাতার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ না হলে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমবয়সীদের মতামত কামনা করে এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণও করে ফেল। আর সেসব গৃহীত সিদ্ধান্ত অনেকসময় সন্তানদের অকল্যাণ বয়ে আনে। এর মূল কারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাস্তবজ্ঞান আর অভিজ্ঞতার অভাব।

একইভাবে আপনার সন্তানেরা অনেকসময় নানা বিষয়ের প্রতি কৌতূহলী হয়ে সে কৌতূহল মেটাতে বন্ধুবান্ধব অর্থ্যাৎ সমবয়সীদের পরামর্শ গ্রহন করে। তাতে তারা মাদকাসক্তি ছাড়াও নানাবিধ বদঅভ্যাসে আসক্ত হয়ে যায়। আবার কিছু কিছু ব্যাপারে সমবয়সীদের অপরিপক্ব এবং ভুল ব্যাখার কারণেও আপনার সন্তান বিভ্রান্ত হতে পারে। কাজেই আপনার সন্তানের সার্বিক কল্যাণ বিবেচনায় আপনাদের উচিত সন্তানদের সময় দেয়া এবং তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা।

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের শিক্ষার্থী

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :