আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস দিবসের স্বীকৃতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

মতিয়ার চৌধুরী
 | প্রকাশিত : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:১৩

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশের শহীদ দিবস ২১শ ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণাা করার পর থেকে দিনটি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এই বাংলাভাষাকে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কত প্রাণের আত্যাহুতি দিতে হয়েছে। আজকের আলোচনার বিষয় ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস দিবসের স্বীকৃতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ।

রাষ্ট্রভাষা আর মার্তৃভাষা এক জিনিষ নয়। ভাষাবিজ্ঞানীরা এভাবেই এর সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছেন মানুষ জন্মের পর মায়ের কাছ থেকে শুনে যে ভাষায় কথা বলতে শেখে তার নাম মাতৃভাষা। রাষ্ট্র পরিচালনার সুবিধার জন্যে সকলের বোধগম্য এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ট জনসংখ্যার ব্যবহৃত ভাষাকে সকলের মতামতের উপর গুরুত্ব প্রদান করে রাষ্ট্রপরিচালনার জন্যে শিক্ষা, অফিস-আদালতসহ রাষ্ট্রীয় কাজে যে ভাষার প্রচলন করা হয়- তার নাম রাষ্ট্রভাষা। বিশ্বের অনেক দেশেই একাধিক রাষ্ট্রভাষার প্রচলন রয়েছে। যেমন ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দি ও ইংরেজি, আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা, গ্রেটব্রিটেনে ইংরেজি এবং ওয়েলস।

২০০০ সালের পূর্ব পর্যন্ত আমরা বাঙালিরা এ দিনটিকে শহীদ দিবস (শোক দিবস) হিসেবে পালন করে আসছি। ভাষার জন্যে বাংলাদেশ এবং ভারতের আসমে রক্তপাতের ঘটনা ঘটেছে। তাই বিশ্ববাঙালির কাছে এ দিবসটির গুরুত্ব অসীম। কেননা ভাষার জন্যে বাঙালির আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ পৃথিবীর সব মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশের শহীদ দিবস ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে বিশ্বব্যাপী দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি আদায় করতেও আমাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, আছে আরো অনেক কথা। দুজন কানাডাপ্রবাসী বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার দাবিী তুললে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়। এই দুই কৃতি বাঙালি কানাডা থেকে বাংলাদেশ সরকারের সাথে যোগাযোগ করলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে এগিয়ে আসেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালায়ের উপাচার্য পরবর্র্তীতে লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদুর রহমান খানসহ ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইউনেস্কতে পাঠান। এই প্রতিনিধি দল ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে দুই সপ্তাহ অব¯’ান করে বিভিন্ন দেশের কুটনীতিকদের সাথে লবিং শুরু করেন। বাংলাদেশ সরকারের লবিংয়ের কারণে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ করে।

এখানে শেষ নয়, শেখ হাসিনাই প্রথম বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন, এই ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বাংলা‘র সঠিক ইতিহাস নিয়ে যেমন গবেষণা হ”েছ ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশে অন্যান্য ভাষার বিকাশেও কাজ হ”েছ। বিশেষ করে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের সুযোগ পা”েছ। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনা ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউিট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বের সব ভাষার গবেষণার সুযোগ করে দিয়েছেন।

১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত বাংলার মানুষ প্রতি বছর ১১ মার্চকে রাষ্ট্রভাষা দিবস হিসেবে পালন করেন। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন মুসলিম লীগের ঢাকা অধিবেশেনে উ”চারণ করেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। তার এই বক্তব্যের পর বাংলার মানুষ একই দাবির পক্ষে সংগঠিত হতে থাকে। এরই সূত্র ধরে ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। ১১ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি কালো পতাকা দিবস পালিত হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ডাক দেয়া হয় সাধারণ ধর্মঘটের। ওই দিন কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন ও প্রাদেশিক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ময়মনসিংহের নূরুল আমিন সারাদেশে ১৪৪ ধারা জারি করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা অমান্য করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবিতে পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আব্দুল জব্বার, আবুল বরকত, রফিক উদ্দিনসহ কয়েকজন। ২২ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। ঢাকায় পুলিশ মিছিলের ওপর গুলি চালালে ঘটনা¯’লে শহীদ হন শফিউর রহমান, আব্দুল আউয়াল ও আব্দুর রহিম। ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা সাঈদ হায়দারের নকশানুযায়ী ১১ ফুট দৈর্ঘ প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি শহীদ শফিউর রহমানের বাবা এর উদ্বোধন করেন।

লেখক: যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :