করোনাকালে নতুন দরিদ্র দেড় কোটি মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৭ মে ২০২৩, ২২:২২ | প্রকাশিত : ১৭ মে ২০২৩, ২২:১৩

দেশে দারিদ্র্য হার এখন ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের মহামারির সময় ৯ শতাংশের মতো নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। সরকারি হিসাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। এর ৯ শতাংশ অর্থাৎ দেড় কোটির বেশি মানুষ করোনাকালে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। চাকরি ও ব্যবসা হারিয়ে তারা এই দুর্গতিতে পড়েছেন। এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বুধবার সরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস আয়োজিত দুই দিনের ‘বিআইডিএস রিসার্চ এলামনাক ২০২৩’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

সংস্থার মহাপরিচালক বিনায়ক সেন জানান, পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ যে দারিদ্র্য হারের কথা বলা হয়েছে, তার প্রায় অর্ধেক বা ৯ শতাংশের মত নতুন দরিদ্র হয়েছে। এর আগে এরা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছিল।

সরকারি হিসেবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটি। এর ৯ শতাংশ, অর্থাৎ দেড় কোটির বেশি মানুষ মহামারীর ধাক্কায় অধোপতিত হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারী না হলে দেশের দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশের আশেপাশে নেমে আসতে পারত।

এসব নতুন দরিদ্র মানুষকে আবার দারিদ্র্যসীমার ওপরে তুলতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ রাখেন বিনায়ক। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বিআইডিএস প্রধান বলেন, তাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, চরম দরিদ্র পরিবারের ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ জানিয়েছে, মহামারী চলার সময় তাদের সন্তানদের শিক্ষা বন্ধ করতে হয়েছে।

শিক্ষা ও মানবিক পুঁজির বিকাশের ক্ষেত্রে শহরের দরিদ্র শ্রেণি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানান বিনায়ক। তাদের শিক্ষায় ফেরাতে বিশেষ শিক্ষা পুনরুদ্ধার কর্মসূচি চালু করাও পরামর্শ দেন তিনি।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিভিন্ন কর্মসূচি ঠিকমত বাস্তবায়নও দারিদ্র্য কমাতে বিশেষ অবদান রাখে বলে তিনি মনে করেন।

মহামারির সময় দেশে দারিদ্র্যের হার ৪২ শতাংশ হয়ে গিয়েছিল বলে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তার সমালোচনা করেন বিনায়ক সেন।

তিনি মনে করেন, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল করেছে তারা। আমাদের সমগোত্রীয় (গবেষণা প্রতিষ্ঠান) কেউ কেউ তাদের তখনকার ২০২০ এর কাজের ভিত্তিতে বলেছিল যে, দারিদ্র্য প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম ২০২০ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সারা দেশের ৮ বিভাগের ৬৪টি জেলার ৫ হাজার ৫৭৭টি পরিবারের ওপর একটি জরিপ চালিয়ে তখন দেশের দারিদ্র্য হার ৪২ শতাংশ হয়ে যায় বলে দাবি করে। সেটি দেশের গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়।

সেই প্রসঙ্গ টেনে বিনায়ক বলেন, ফ্যাক্ট অব দ্য মেটার হচ্ছে সেই সময় বাড়লেও সেটা শুধুমাত্র সাময়িক সময়ের জন্য। এটা ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বেড়েছিল। জুনের পর থেকে এটা কমে আসা শুরু হয়েছিল। এরপর কোভিডের ওমিক্রন, ডেল্টা (ধরনের বিস্তার) ইত্যাদি পার হয়ে ২০২২ সালের প্রথম দিক থেকেই দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক প্রবণতায় ফিরে আসতে শুরু করে।

বিনায়ক সেন বলেন, ২০১৯ এবং ২০২২ এর মধ্যে সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট কমেছে। একই সময়ে চরম দরিদ্র পরিবারের অনুপাতও ৩ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে গেছে।

মহামারির ধাক্কায় অনেক মানুষ আত্মকর্মসংস্থানে ঝুঁকেছে বলেও বিআইডিএস এর সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

বিনায়ক সেন বলেন, কোভিডের আগে থেকে যাদের আর্থিক সমস্যা ছিল এবং যাদের কাছে দুঃসময়ের জন্য অর্থ জমা ছিল, তারাই এই সুবিধাটা নিয়েছেন। ওই সময় বেসরকারি এবং সরকারি, দুই পক্ষই নিজস্ব উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অর্থায়ন করেছে। এতে তথ্য প্রযুক্তি এবং কৃষি সম্প্রসারণ প্রযুক্তি কাজে দিয়েছে।

২০২২ সালের শুরুতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে বলে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পমা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, কোভিডের সময় নানা প্রতিষ্ঠান নানা রকম তথ্য দিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছিল। তবে বিবিএস এর সর্বশেষ জরিপে যে দারিদ্র্য হার পাওয়া গেল তাতে দেখা যায়, আমরা সঠিক পথেই আছি।

দারিদ্র্য হার কমলেও সরকার বৈষম্য নিয়ে চিন্তিত বলে জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক সমস্যা হচ্ছে বৈষম্য। আমি মনে করি, এই বৈষম্য আমাদেরই সৃষ্টি। তাই আমরা নতুন সম্পদ সৃষ্টি এবং সেই সম্পদ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ন্যায়ভিত্তিক সুষ্ঠু বণ্টনের মাধ্যমে বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা যখন জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধির দিকে যাচ্ছিলাম তখনই কোভিড-১৯ এবং পরে ইউক্রেইন রাশিয়া যুদ্ধের আঘাত এল।

দারিদ্র্য বিমোচনে যত প্রকল্প রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়নে মধ্য মেয়াদী পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ গ্রহণের ওপরও জোর দেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৭মে/আরকেএইচ/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

ভূমধ্যসাগরে অন্ধকারে ভাসতে থাকা ৩৫ বাংলাদেশি উদ্ধার

হজ পালনে সৌদি আরব গেছেন ৩২ হাজার ৭১৯ বাংলাদেশি

এবার চতুর্থ শীর্ষ চূড়া লোৎসে জয় বাবর আলীর

সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ ও তার পরিবারের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

ঢাকাসহ ১২ অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আশঙ্কা, নদীবন্দরে সতর্কতা

দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু

রাত পোহালে ভোট, ১৫৭ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৬০৩ জন

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রশংসায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি

কিরগিজস্তানে ভালো আছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বিদেশে গিয়ে কাগজপত্র সত্যায়নের ঝামেলা আর থাকছে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :