পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা: বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করার সম্ভাবনা

ড. মো. জাকির হোসেন
 | প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২৩, ১২:৩১

প্রকৃতি হলো সরলতায় পূর্ণ এক যৌগিক আশ্রয়। ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে প্রকৃতির এই সরলতাকে মানুষ তার প্রয়োজনে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছে। ব্যবহারের অন্যতম ও আদিম উপায় হলো কৃষি। কৃষি মানুষের উপকারের পাশাপাশি প্রকৃতির অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে কাজ করে আসছে সেই আদিম যুগ হতে। পরিবেশ বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায়ও কৃষির ভূমিকা ব্যাপক।

একটি দেশের সম্পদ বলতে মানবসম্পদ, প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদ, কৃষি ও জলজসম্পদ প্রধান। মানুষের দৈনন্দিন জীবন, জীবনের চাহিদা, খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্পের কাঁচামাল, সরবরাহসহ অর্থনীতির বড় অংশ হলো কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য। একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি খাতের ভুমিকা অপরিসীম।

বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কৃষিখাতের উপর নির্ভরশীল। বিবিএস-এর প্রভিশনাল হিসাব অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষি খাতের অবদান ১১.৫০ শতাংশ। শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কৃষি খাতের পরোক্ষ অবদান রয়েছে। এছাড়া দেশের মোট শ্রমজীবীর ৪০.৬০ শতাংশ (লেবার ফোর্স সার্ভে ২০১৬-১৭ এর তথ্যানুযায়ী) প্রত্যক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি পুষ্টি সমস্যা সমাধান, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সর্বোপরি দেশের অভ্যন্তরীণ মোট উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

কৃষি পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ

লাল সবুজের পতাকা বহনকারী বাংলাদেশ আমাদের চেতনা, এ দেশ আমাদের ভক্তি ভালোবাসার উৎসস্থল। এ দেশটি ছোট এবং ঘনবসতিপূর্ণ হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০ বছরে সীমিত সাধ্য নিয়ে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে গৌরবোজ্জ্বল অগ্রগতি হয়েছে। মহামারী করোনায় যেখানে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল, সেখানে বাংলাদেশ লক্ষণীয়ভাবে ভালো করার চেষ্টা করেছে।

এ ক্ষেত্রে আমাদের কৃষি ও কৃষিজাতপণ্য উৎপাদন, বিতরণ ও প্রয়োজনীয় সরবরাহের কারণে মানুষের খাদ্য ও খাদ্য নিরাপত্তায় বিরাট সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে। আমাদের দেশে উৎপাদিত কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক টেকসই ও সমৃদ্ধ। উৎপাদনের দিক থেকেও বিশ্বের সেরা দশের মধ্যে আমাদের অনেক কৃষিপণ্য রয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে পাঁচ কোটি ২৬ লাখ টন ধান উৎপন্ন হয়। আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম ও পেঁয়ারা উৎপাদনে অষ্টম।

মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম ও রপ্তানীতে দ্বিতীয়। ইপিবির তথ্য থেকে জানা যায়, দেশের ৪৭৯টি প্রতিষ্ঠান ১৪৪টি দেশে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি করছে। এ দেশের প্রাণ আরএফএল, স্কয়ার, বিডি ফুডের মতো অনেক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি বাজার বড়। কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের অভ্যন্তরীণ বার্ষিক বাজার ৫০ হাজার কোটির বেশি। কাজ করছে এ খাতে ২০ লাখ শ্রমিক। ২০০০ সালের পর থেকে এ খাতের রপ্তানি শুরু হয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত, এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতেও রপ্তানি দ্রুত বেড়ে চলেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি হয় মাত্র ৫৫ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে ১০৩ কোটি ডলার আয় এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ শতাংশের বেশি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে প্রায় ২১ কোটি ডলার। তাছাড়া ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ৬৭৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের কৃষিপণ্য রপ্তানি করেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কৃষিতে ভর্তুকি কমানোর জন্য নানামুখী চাপে রয়েছে। উন্নত দেশগুলো কৃষিপণ্যে ভর্তুকি কমালে বৈশ্বিক কৃষি পণ্যের ১১ লাখ কোটি ডলারের ঈপ্সিত বাজারে অন্যান্য অনেক দেশ প্রবেশের সুযোগ পাবে। উন্নত দেশের কৃষি বহু আগেই বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর হয়েছে। বাংলাদেশ এখন খোরপোষ কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরের অভিমুখী। তাই এখন থেকেই সে প্রস্তুতি প্রয়োজন।

পাট রপ্তানিতে সম্ভাবনা

দেশে এক সময় পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির ছিল সোনালি ইতিহাস। অর্জন হতো প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। পাট পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাট উৎপাদিত হয়েছে ৮৪ লাখ বেল এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৯০ লাখ বেল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৯৫ লাখ বেল। নতুন বছর ২০২৩ সালের প্রথম এবং বর্তমান সরকারের ১০৮তম মন্ত্রিসভা বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে বিবেচনার নির্দেশ দেন। পাট খাতকে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেক্ষাপট রচনায় একদিকে বাধ্যতামুলক পণ্য প্যাকেজিং আইন-২০১০ এবং অন্যদিকে পাটকে কৃষিজাত পণ্য ঘোষণাটি হবে অনেক কার্যকর ও দুর্বার এবং কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ।

কৃষিপণ্যের মতো পাটেও সহজ শর্তে কম সুদে ঋণ পাওয়া যাবে। সেইসঙ্গে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় পাটেও তা পাওয়া যাবে। ফলে কৃষক পাট চাষে বেশি আগ্রহী হবে এবং পাট চাষে মুনাফা বৃদ্ধি পাবে। ডি মিনিমিস হলো- বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কৃষি চুক্তির (এগ্রিমেন্ট অন এগ্রিকালচার) মাধ্যমে বাংলাদেশে শুধু ধান ও গম উৎপাদনে ২০ শতাংশ মূল্য সহায়তা দেয়া হতো এবং অনির্ধারিত এএমএসগুলোয় প্রাধান্য পেত সার আমদানিতে। বাংলাদেশ এখন পাটের ক্ষেত্রেও সে সুবিধা কাজে লাগাতে পারবে।

এতদিন পাট পণ্য উৎপাদন শিল্পজাত পণ্য উৎপাদনের আওতাভূক্ত ছিল। ফলে পাট সেক্টর থেকে সুফল পাওয়ার সুযোগ আমরা হারিয়েছি। এই ঘোষণা না হওয়ার কারণে এতদিন ডব্লিউটিও-এর ডি মিনিমিস পলিসির সবুজ বাক্সের সুফল থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। তারপরও আমাদের সর্বমোট রপ্তানির প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ আমরা শুধু কাঁচা পাট রপ্তানির মাধ্যমে করছি।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, কৃষিজাত পণ্যের খাতায় নাম ওঠায় পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে আসবে বিপ্লব। প্রতি বছর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের হিসেবে যুক্ত হবে অন্তত ৩০০ কোটি ডলার। শুধু ইয়ার্ন ইনপুটের বাজারকে মাথায় রাখলেই বিশ্ব বাজারের সাপ্লাই চেনে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। পাশাপাশি আমরা জানি, তিন শ্রেণির পণ্যকে জিআই মর্যাদা দেয়া হয়, যা কৃষি, হস্তশিল্প ও প্রাকৃতিকভাবে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পণ্য হতে হবে।

পাট এতদিন শিল্প পণ্য হওয়ায় জিআই মর্যাদা পাওয়া কঠিন ছিল। পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করায় পাট পণ্য জিআই মর্যাদা পাওয়া সহজ হবে। জিআই সনদ পেলে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে সুবিধা হয়। সনদ পেলে রপ্তানিতে সুবিধা পাওয়া যায়। বিদেশিরা জানবে পণ্যটি বাংলাদেশের ওই নির্দিষ্ট এলাকার। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়। কৃষিক্ষেত্রে কার্বন ফার্মিংয়ের ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য উন্নত দেশগুলো কাজ করছে। পাট পরিবেশবান্ধব এবং অধিক কার্বন সিকুয়েস্ট্রেশন সমৃদ্ধ হওয়ায় কার্বন ফার্মিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থ আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হবে। আগামীদিনে বাংলার পাট আবার করবে বিশ্বমাত।

পাটবান্ধব নীতিসমূহ

পাটের আবাদ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বিদেশে পাট রপ্তানির অফুরন্ত সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য পরিকল্পিত চাষাবাদ, কৃষকদের বিশেষভাবে ভালো ফলনের ক্ষেত্রে সহায়তা ও প্রয়োজনীয় প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে অবারিত সুযোগ:

১। বর্তমানে কৃষিতে বিনিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিবছরই কৃষি ও পল্লীঋণ নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৩০.৫৫ লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিকে প্রায় ২৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লীঋণ প্রদান করা হয়েছে।

২। বর্তমান সরকার সিআইপি কার্ডের মতো কৃষিখাতে অবদানের জন্য চালু করেছে এআইপি কার্ড।

৩। নিরাপদ কৃষিপণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করা, কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থায় সহায়তা করার জন্য জাতীয় কৃষি বিপণন নীতি-২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে। কৃষি উপকরণ বিপণনকে সহজীকরণ ও আধুনিকায়ন, কৃষিপণ্যের গুদাম ও সংরক্ষণাগার ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন এবং কৃষি বিপণন অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। কৃষির উন্নয়নের মাধ্যমে যুব উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেকারত্ব হ্রাসে পদক্ষেপ নেয়া হবে। ই-এগ্রিকালচার মার্কেটিংয়ে সহায়তা দেয়া হবে।

কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে নারী ক্ষমতায়নেরও সুযোগ তৈরি করা হবে। কমিউনিটিভিত্তিক, চুক্তিভিত্তিক ও গ্রুপভিত্তিক বিপণন জোরদার করা হবে। কৃষি পণ্যের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এরকম মোট ১৯টি বিষয় নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করায় পাট চাষীগণ এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারবেন।

৪। এ ছাড়াও বর্তমান সরকার জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষি খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল ও নতুন ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

৫। কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বর্তমান সরকার ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছে। এক কোটি ৬৫ লাখ কৃষক পরিবার কৃষি প্যাকেজের সুফল পাচ্ছে। তিন লাখ ১৪ হাজার কৃষি ফার্ম সহজে ঋণ প্রাপ্তি ও আট হাজার কোটি টাকার কৃষি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম সুবিধা পাচ্ছে। পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করায় পাট চাষীরা এর আওতাভুক্ত হবে।

৫। গ্রামীণ অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর নতুন শাখা খোলার ক্ষেত্রে শহর ও পল্লী অঞ্চলের জন্য ১৪১ অনুপাত নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাংক উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, ব্যাংক-এমএফআই পার্টনারশিপ এবং কন্ট্রাক্ট ফার্মিং সুবিধার মাধ্যমে কৃষি ও পল্লীঋণ পাচ্ছে।

৬। কৃষি ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। রেয়াতি সুদে ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কৃষিঋণ প্রদানের জন্য তহবিল গঠন করা হয়েছে।

৭। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর প্রধান লক্ষ্য হলো দারিদ্র বিমোচন, ক্ষুধা মুক্তি ও সুস্বাস্থ্য অর্জন। সে লক্ষ্যে সরকার সব প্রকার শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে জাতীয় কৃষি নীতি-২০১৮ প্রণয়ন করেছে।

৮। সরকার কর্তৃক গৃহীত অষ্টম পঞ্চবার্ষিক (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৫) পরিকল্পনায় খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখার লক্ষ্যে কৃষিখাতে বৈচিত্রতা আনার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধিকরণের পাশাপাশি মৎস্য, ফলমূল, সবজি ও দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানির প্রতি অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছে। এখন এর সঙ্গে কৃষিপণ্য হিসেবে পাট যুক্ত হলো।

৯। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে সরকার পাট ও সমজাতীয় ফসলের উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। ইতোমধ্যে পাট ও পাটসহ ৫০০ ফসলের ক্ষতিকর ছত্রাকের জন্মরহস্য উন্মোচন বিশ্বে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রকাশ করেছে। যার ফলে, কৃষকদের মধ্যে চাষাবাদের নতুন নতুন উদ্ভাবনী ধারণা প্রদান, উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ সরবরাহ, এলাকাভিত্তিক জলবায়ু ও পরিবেশ উপযোগী ফসলের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের কর্মসূচী সম্ভব হচ্ছে।

পাট আমাদের নিজস্ব সম্পদ। এই সম্পদকে কাজে লাগানোর সুযোগ এখন। পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০-এর সফল বাস্তবায়নে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বছরে পাট ব্যাগের চাহিদা ১০ কোটি থেকে বেড়ে ৭০ কোটি হয়েছে। পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করায় পাট থেকে ১০০ ধরনের পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশে ও বিদেশে যে বড় বাজার রয়েছে, সেটিকেই আমাদের ধরে রাখার জন্য পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা, বিশ্বের বুকে আমাদের আবার মাথা উঁচু করার অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এ ঘোষণা কারও কাছে হাত পেতে বা ভিক্ষা করে নয়; নিজেদের মর্যাদা নিয়ে বিশ্বসভায় চলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্তের নামান্তর।

লেখক: প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পরিকল্পনা শাখা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :