সাভারে লোডশেডিং গরমে হাঁসফাঁস

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২৩, ১২:০৪

‘প্রচন্ড গরম। সূর্যের তাপ বাড়ছে। দিনের বেলায় বাইরে বেরোনো মুশকিল। ফ্যান চালিয়ে যে একটু শান্তির নিঃশ্বাস ফেলবো তারও উপায় নেই। রাতের বেলা ঘণ্টাখানেকের জন্য বিদ্যুৎ গেলেও আবার ফিরে আসে। কিন্তু দিনের বেলা তো ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না।’ ঢাকার সাভার পৌরসভার ছায়াবিথী এলাকার বাসিন্দা শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম নওরীন এভাবেই লোডশেডিংয়ের কারণে ভোগান্তির কথা বলছিলেন।

ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বৃ্হস্পতিবার (১ জুন) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ২ থেকে ৩ ঘন্টার মতো বিদুৎ সরবরাহ ছিলো আর বাকি পুরো সময়টাই লোডশেডিং। আর সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দুই দফায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিলো কেবল ঘন্টা দুয়েক। বাকিটা সময় বিদ্যুৎবিহীন ছিলো ওই এলাকা।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) দিবাগত রাত ১২টা থেকে শুক্রবার (২ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত কয়েকদফা লোডশেডিং হয়। যেখানে রাত ১২টা থেকে ১২ টা বেজে ৫০ মিনিট পর্যন্ত, রাত ১২ টা ৪৫ মিনিট থেকে রাত ২ টা এবং রাত সাড়ে ৩ টা তিন দফায় ৮টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন ছিলো ওই এলাকা। মাঝে অল্প কিছু সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিলো।

সাভারের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ঈদুল ফিতরের পর মাঝখানে কয়েকদিন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের তেমন কোন ঝামেলা না থাকলেও গত দুইদিন থেকে লোডশেডিংয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের। এলাকাভেদে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে লোডশেডিং মোকাবেলা করছেন সাভারের বাসিন্দারা।

আড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে প্রচণ্ড গরমে শিশু থেকে বয়স্ক সবার জীবন অতিষ্ট। সারাদিন কিছুক্ষণের জন্য এসে বেশিক্ষণ সময় চলে যায়। ৮ থেকে ১০ বার বিদ্যুৎ যায় আসে। গভীর রাত পর্যন্ত থাকে না। রাত দুইটা, তিনটার সময় এসে আধা ঘণ্টা থেকে আবার চলে যায়। আবার ১ থেকে ২ ঘন্টা পর এসে কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়। গত কয়েকদিন যাবৎ এভাবেই চলছে। রাতে এক ঘন্টার জন্যও ঘুমাতে পারি না ফ্যানের বাতাসে। প্রচন্ড গরমে ছটফট করতে থাকি।

আশুলিয়ার আনারকলি এলাকার বাসিন্দা ফার্মেসী ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, সাভারের কলমা এলাকায় আমার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান সেখানে সারাদিনই ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা পোহাতে হয় আধাঘন্টার জন্য বিদ্যুৎ আসলে আবার মিনিমাম দুইঘন্টার লোডশেডিং থাকে। গতকাল (১ জুন) সন্ধ্যার পর লোডশেডিংয়ের এই যন্ত্রণায় বাধ্য হয়ে বাসায় চলে এসে দেখি এখানেও একই অবস্থা। সারারাতে ৪ থেকে ৫ বার লোডশেডিং হয়েছে প্রতিবারই প্রায় দেড় থেকে দুইঘন্টা লোডশেডিং দেওয়া হয়।

আশুলিয়ার ডেন্ডাবর এলাকার বাসিন্দা রাকিব হাসান বলেন, ‘রাতের বেলা লোডশেডিং কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে হলেও দিনের বেলা গরমের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে যে পরিমাণ লোডশেডিংয়ের মধ্যে পড়তে হচ্ছে, তা আসলে ভীষণ কষ্টের।’

তিনি আরো বলেন গতকাল (১ জুন) সকাল থেকে বিকেল অবধি অর্ধেক বেলাই লোডশেডিং ছিলো। সন্ধ্যায় মাগরিবের আযানের সময় কারেন্ট গিয়ে রাত ৯ টায় আসে। এরপর আবার রাত ১২ টা থেকে ১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত লোডশেডিং ছিলো। তারপর আবার আজ (২ জুন) সকাল ৮ টা থেকে এখন সাড়ে ৯ টা বাজে এখনো লোডশেডিং চলছে।

এদিকে লোডশেডিংয়ের বিষয়টি গত দুইদিনে বেড়েছে বলে স্বীকার করেছেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. খাদেমুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গতকাল সাভার-ধামরাই অঞ্চলে ২৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ছিলো ১৮০ মেগাওয়াট। আমাদের ঘাটতি ছিলো ৮০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে এই অঞ্চলের বেশ কিছু ফ্যাক্টরি গ্রীড থেকে সরাসরি একটা অংশ টেনে নেয়।’

এদিকে ধামরাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, গত কয়েকদিন যাবৎ অসহনীয় লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হয়েছে তাঁদের। ধামরাই পৌরসভার লাকুড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাজিউল হাসান পলাশ বলেন, ‘সকাল থেকে বিকেল অবধি প্রায় আধা বেলাই লোডশেডিং থাকে। সন্ধ্যার পর থেকেও একই অবস্থা। বেশিরভাগ সময়ই লোডশেডিং ছিলো।’

একই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ বার বিদ্যুৎ যায়। প্রতিবার ১ ঘন্টা থেকে দেড় ঘন্টা লোডশেডিং ছিলো। রাতের অবস্থা আরো ভয়াবহ।’

আরও পড়ুন: পুকুরের পানিতে ডুবে দেড় বছরের শিশুর মৃত্যু

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর ধামরাই আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আল মাহমুদ ফয়সাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় বিদ্যুৎ না পাওয়ায় আমাদের বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হয়।’

(ঢাকাটাইমস/০২জুন/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :