তীব্র গরমে ডায়রিয়া থেকে যেভাবে বাঁচবেন

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ জুন ২০২৩, ১০:২৯ | প্রকাশিত : ০৭ জুন ২০২৩, ১০:২৪

গরমের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে। সূর্য যেন তপ্তসীসা ঢেলে দিচ্ছে, গরমে প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। এই গরমে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষের অবস্থা বেশি খারাপ। খেটে খাওয়া মানুষের ত্রাহিদশা। ঘরে বাইরে গরমে সাধারণ মানুষের শরীরের বেহাল দশা। পিপাসা থেকে রক্ষা পেতে বাইরের অবিশুদ্ধ নোংরা পানি, ফলের জুসের আড়ালে রং মিশ্রিত ট্যাপের পানি, নোংরা আখ বা খেজুরের রস দিয়ে পিপাসা নিবারণ করছেন অনেকেই। এতে করে দেখা দিতে পারে ডায়রিয়া।

তাপমাত্রা বাড়লে বেড়ে যায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব। গরমের দিনে তাপমাত্রা বেশি থাকায় খাবার তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। রোগ-জীবাণু দ্রুত বিস্তার লাভ করে। সেই সাথে লোকজন পিপাসা মেটাতে বাইরের খোলা খাবার ও দুষিত পানি পান করেন। এতে বেড়ে যায় প্রাদুর্ভাব।

দিনে তিনবারের বেশি পাতলা পায়খানা হলে ধরে নিতে হবে ডায়রিয়ার লক্ষণ। ডায়রিয়া হলে শরীর প্রচন্ড দুর্বল হয়ে যায়। কারণ, পাতলা পায়খানার সাথে প্রচুর পরিমাণ পানি ও লবণজাতীয় পদার্থ বের হয়ে যায়। এতে শরীরে লবণের ঘাটতি ও পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। সময়মতো এসব ঘাটতি পূরণ করতে না পারলে মৃত্যুও হতে পারে।

সাধারণত অন্ত্রে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে ডায়রিয়া দেখা দেয়। আর ডায়রিয়ার জীবাণু দূষিত পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে মানুষের পেটে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির মল থেকে ডায়রিয়ার জীবাণুগুলো হাতের মাধ্যমে, তেলাপোকা বা মাছির মাধ্যমে, এমনকি অনেক সময় সরাসরি খাদ্য ও পানিতে সংক্রমিত হয়। এই দূষিত পানি বা খাদ্য গ্রহণ করলে অন্যরাও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ডায়রিয়ার মূল চিকিৎসা হলো শরীরে যে পানিস্বল্পতা ও লবণের ঘাটতি দেখা দেয়, তা পূরণ করাই এই সমস্যা সমাধান। পানিস্বল্পতা দূর করতে বেশি বেশি নিয়ম মেনে খাওয়ার স্যালাইন পান করতে হবে।

বেশি মাত্রায় ডায়রিয়া হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। কারণ রোগীকে শিরা পথে স্যালাইন ও অ্যান্টবায়োটিক দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তবে নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক হবে না। লোপিরামাইড জাতীয় ওষুধ খাবেন না। ওরস্যালাইনের পাশাপাশি রোগীকে সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে। সেই সাথে ডাবের পানি ও যেকোনো ফলের রস, ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, টকদই, মাঠা, লবণ-গুড়ের শরবত খাওয়াতে হবে। প্যাকেটজাত ফলের জুস বেশি খাওয়ানো ঠিক হবে না।

শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়ায় প্রকট আকার ধারণ করে। আমাদের দেশের অনেক শিশু ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়ে পানিস্বল্পতায় মারা যায়। আমাদের দেশের অপুষ্টির প্রধান কারণ ডায়রিয়া। যদি শিশুর অস্থিরভাব, খিটখিটে মেজাজ বা নিস্তেজ হয়ে যায়, চোখ গর্তে ঢুকে যায়, শিশুরা তৃষান্ত থাকে বা একেবারেই খেতে পারে না, শিশুর ত্বক টেনে ছেড়ে দিলে তা অনেক সময় পর আগের অবস্থায় ফিরে যায় তাহলে বুঝবেন আপনার শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। শিশুকে পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি পান করান। সেই সাথে শিশুর খাবার বিশুদ্ধ পানি দিয়ে বানাতে হবে ও থালা-বাসন ধুতে হবে।

প্রতিবার পায়খানার পর দুই বছরের কম ১০-২০ চামচ, দুই থেকে ১০ বছর ২০-৪০ চামচ ও ১০ বছরের বেশি যতটুকু পারে খাবার স্যালাইন খাওয়ান। একবারেই বেশি স্যালাইন খাওয়াবেন না। ১-২ মিনিট পর পর ১ চামচ করে স্যালাইন দিন। শিশু বমি করলে ১০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করে আবার খেতে দিন। সেই সাথে স্বাভাবিক খাবার দিতে ভুলবেন না। পরিবারে যেসব খাবার রান্না হবে সবই শিশুকে খাওয়ানো যাবে। কাঁচাকলা ডায়রিয়ার তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। নরম ভাতের সাথে কাঁচাকলা সিদ্ধ বা খিঁচুড়ির সাথে কাঁচাকলা খেতে দিন। তবে চর্বি জাতীয় খাবার কম খাওয়ানো ভাল। ৬ মাসের কম হলে বুকের দুধের সাথে স্যালাইন দিন। সারা দিনে ছয়বারের বেশি খাবার দিন অল্প অল্প করে।

খাবারে তেল দিতে ভুলবেন না। ১৫ দিনের জন্য জিংক ট্যাবলেট খেতে দিন। তবে খুব বেশি পরিমাণে পানির মতো পায়খানা হলে, বার বার বমি হলে স্যালাইন না খেতে পারলে, জ্বর থাকলে, পায়খানার সাথে রক্ত গেলে ও ডায়রিয়ার মেয়াদ ১৪ দিনের বেশি হলে হাসপাতালে ভর্তি করতে ভুলবেন না।

ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়

বাইরের রেস্টুরেন্ট-এ খাবেন না। রাস্তার পাশে তৈরি ফলের জুস খাবেন না। বাসি খাবারকে না বলুন। খাবার তৈরির সময় ফুটানো পানি দিয়ে রান্না করুন। পানি অবশ্যই ফুটিয়ে পান করবেন। বেশি করে তরল ও পানীয় পান করুন। মাছির হাত থেকে খাবারকে রক্ষা করুন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন। হাতের নখ ছোট রাখুন। খাবার আগে অবশ্যই ভালো করে হাত ধুয়ে নিন।

মলত্যাগে স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করুন । মাছি বসা বাইরের খোলা খাবার, শরবত বা ফলের রস এবং বাসি-পঁচা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে ।

বেশিক্ষণ রান্না করা খাবার বাইরে রেখে দিলে তাতে রোগজীবাণু বৃদ্ধি পায় দ্রুত। গরম গরম খাবার খাবেন। বাড়তি খাবার ঠান্ডা করে রেখে দিন ফ্রিজে। তবে খাওয়ার সময় ভালো করে গরম করে খাবেন।

পাত্রে রাখতে হবে পরিষ্কার পানি। টিউবওয়েলের নিরাপদ পানি কিংবা ফোটানো পানি ঠান্ডা করে পান করুন। চুলায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পযর্ন্ত পানি ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। তবে প্লাস্টিকের বোতলে বা জগ ব্যবহার না করাই ভালো। ফুটানো পানি ঠান্ডা হলে কাচের জার,বোতল বা মাটির কলসে রাখুন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়া হলে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রথমে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে দিনে আট থেকে ১০ গ্লাস তরল খাবেন। প্রতিবার টয়লেটে যাওয়ার পর এক কাপ পরিমাণে তরল খাবার খাওয়া উচিত।

‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন’-এর তথ্যানুযায়ী ডায়রিয়া হলে উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত খাবার যেমন– কলা, আলু ও ফলের রস খাওয়া যাবে। পিনাট বাটার, চমড়াছাড়া মুরগি বা টার্কিও ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

ডায়রিয়ার চিকিৎসায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগী তরল ও ইলেকট্রোলাইট প্রতিস্থাপনে ভালো হয়ে যায়, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের খুব একটা প্রয়োজন হয় না। ডায়রিয়া প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সচেতনতাই প্রধান। কঠিনভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চললে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।

(ঢাকাটাইমস/০৭ জুন /আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :