১৭ দফা ইশতেহার দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী

ব‌রিশাল ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ জুন ২০২৩, ১৭:৩৭

বরিশাল নগরীকে দুর্নীতি, দুঃশাসন, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত উন্নত এবং নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ১৭ দফা ইশতেহার দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।

বরিশাল সিটির মেয়র নির্বাচিত হলে নিজে খাদেম হয়ে নগরীর সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ১৭ দফা ইশতেহারের প্রতিটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার কথাও জানিয়েছেন হাতপাখা প্রতীকের এই প্রার্থী।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরীর বান্দরোডের এক‌টি রেস্তোরাঁয় এ ইশতেহার ঘোষণা করেন চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ফয়জুল করিম।

এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্ব ও পরবর্তী বহু ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী বরিশাল শহর। কীর্তনখোলা নদীর তীরে মোঘল আমলে এ শহর গড়ে ওঠে। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় ২০০২ সালে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়া বরিশাল নগরী আজও অবহেলিত।

বরিশাল নগরী বর্তমানে যেন আবর্জনা ভরা, যানজট, মশক ও জলাবদ্ধতার শহরে পরিণত হয়েছে জানিয়ে মুফতি ফয়জুল বলেন, হাসপাতালগুলোতে এখনো উন্নত চিকিৎসা অনুপস্থিত। সন্তানদের জন্য নেই সুষ্ঠু শিক্ষা ও সুন্দর বিনোদনের ব্যবস্থা।

তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে ইভটিজিং ও চাঁদাবাজির উৎপাত। নগরীর অধিকাংশ শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। ভাঙাচোরা সড়ক, নালার অপ্রতুলতা, জলাবদ্ধতা, সুপেয় পানির অভাব, ডাস্টবিনের সঙ্কট, ল্যাম্পপোস্টের অধিকাংশ লাইট নষ্ট থাকার কারণে নগর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

কুরআনের সূরা রা'দ-এর ১১ নং আয়াতের বরাতে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন না করে।

মুফতি ফয়জুল বলেন, মনে রাখবেন ভোট একটি পবিত্র আমানত। এটাকে যথেচ্ছা প্রয়োগ করা আমানতের খেয়ানত।

তিনি বলেন, কাউকে ভোট দেওয়া কোনো আবেগ বা দলীয় বিষয় নয়; বরং এটি একটি নৈতিক বিষয়। তাই বুঝে-শুনে, চিন্তা-ভাবনা করে ভোট দিতে হবে। ভোট পাওয়ার যোগ্য তিনিই যার দ্বারা দুর্নীতি হবে না, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠিত হবে না, সমাজে জুলুম ছড়িয়ে পড়বে না, মানুষের কোনো প্রকার ক্ষতি হবে না, মানুষ তাঁর অধিকার ফিরে পাবে। দল-মত, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে এমন ব্যক্তিকে ভোট দেওয়া প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের একান্ত কর্তব্য।

মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার করে বলেছেন, নির্বাচিত হলে নির্বাচনী ১৭ দফা ইশতেহারের প্রতিটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন।

ফয়জুল করীমের ১৭ দফা হলো-নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। নগরীর ভিক্ষুকদের অসহায়ত্ব দূরীকরণ ও জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ নগরীতে কেউ অনাহারে থাকবে না।

নগরবাসীর জন্য নিরাপদ বাসস্থান ও কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে বলেন, বাসার হোল্ডিং ট্যাক্স ও সকল ধরনের লাইসেন্স ফি সহনশীল পর্যায়ে আনা হবে। স্বল্প খরচে কোনো প্রকার বিড়ম্বনা ছাড়াই নতুন বিল্ডিং প্লান পাশ করা হবে। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ সব ধরনের নাগরিক সেবা সহজ করা হবে। হকারদের জন্য স্বতন্ত্র হকার্স মার্কেট নির্মাণ করা হবে। নগরীতে টেকসই ও উন্নত রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করা হবে। নদী ভাঙন রোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। শহরের সবুজায়ন ও শোভা বর্ধন করতে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। পয়:নিষ্কাশনের জন্য আধুনিক মানের ড্রেন নির্মাণ ও খাল খনন করা হবে। পরিকল্পিত ইউটিলিটি টানেল ও সুয়ারেজ লাইন নির্মাণ করা হবে। সুইসগেইট ও পানি নিষ্কাশন পাম্পের মাধ্যমে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন করা হবে।

নগরীর জনবহুল এলাকায় পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথকভাবে আধুনিক মানের পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। নগরীর বর্ধিত এলাকার রাস্তা, পানি, বিদ্যুৎসহ সকল নাগরিক সুবিধা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রদান করা হবে। ভোলা থেকে বরিশালে গ্যাস সংযোগ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। নগরীর প্রতিটি রাস্তায় সড়কবাতির ব্যবস্থা করা হবে। পথচারীদের নিরাপদে যাতায়াতের জন্য ফুটপাতগুলো প্রশস্ত করা হবে। নগরীর যানজট নিরসনে আধুনিক ট্রাফিক সিগনাল বসানো হবে। মোড়গুলোতে আইল্যান্ড ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। রাস্তাঘাটের অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে বছরের শুরুতে নগরীর সাথে সম্পৃক্ত সকল সংস্থার সাথে সমন্বয় সভা করে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করা হবে।

সিটি কর্পোরেশনে মসজিদ, মন্দির ও গির্জাভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষা চালু করা হবে। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রম চালু করা হবে। নগরীর বেকার জনশক্তির কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কম্পিউটার, আউটসোর্সিং ও বহুমুখী কারিগরি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা হবে। পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় পরিছন্নতাকর্মীর মাধ্যমে ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে। প্রতিটি এলাকায় ঢাকনাসহ ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিদিন সূর্যোদয়ের পূর্বেই সকল ধরনের বর্জ্য নিরাপদ দূরত্বে নির্দিষ্ট স্থানে অপসারণ করা হবে। নগরীর ধুলাবালি দূরীকরণ ও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করা হবে। ক্ষতিকারক কীট ও মশা নিধনের লক্ষ্যে পরিবেশবিদদের পরামর্শে মহল্লাভিত্তিক মশক ও কীট নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে ।

ফয়জুল করীম বলেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে দীর্ঘদিনের জমে থাকা জঞ্জাল, সীমাহীন অনিয়ম, বহুবিধ দুর্ভোগ, মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি নগরবাসীকে বিষিয়ে তুলেছে। নগরজীবনে স্বস্তি, শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার জন্য আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলম, কেন্দ্রীয় ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক ও বরিশাল জেলা সভাপতি মুফতী সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের, কেন্দ্রীয় মহিলা ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দিন।

(ঢাকাটাইমস/০৮জুন/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :