কৃষক লীগে গৃহ বিবাদ

জাফর আহমেদ, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২২ জুন ২০২৩, ১১:২৬ | প্রকাশিত : ২২ জুন ২০২৩, ০৮:১১

সংগঠনের সভাপতি বলছেন, নেতৃত্বের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সাধারণ সম্পাদক বলছেন, ঢুকে পড়া কিছু ‘কাউয়ার’ কারণে দ্বন্দ্ব-বিবাদ হচ্ছে। আর নেতাকর্মীরা বলছেন, শীর্ষ নেতৃত্বের কমিটি বাণিজ্য, মাইম্যানের বলয়, সংগঠনে একক কর্তৃত্ব তৈরি করতে গিয়ে গৃহবিবাদে পুড়ছে কৃষক লীগ।

২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে তিন বছর মেয়াদী কমিটি পায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ। সমীর চন্দ সভাপতি আর উম্মে কুলসুম স্মৃতি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

নেতৃত্বে আসার পর কৃষক লীগকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ছিল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। সেভাবে তারা কাজও শুরু করেছিলেন। তবে ধারাবাহিকতা রাখতে পারেননি। কিছুদিন যেতেই কমিটি বাণিজ্য, তদবির বাণিজ্য, মাইম্যানের বলয় তৈরি, একক কর্তৃত্ব বজায় রাখাসহ নানা বিষয় নিয়ে বিবাদ শুরু হয়।

আরও পড়ুন >> খায়রুজ্জামান লিটনের হাতেই থাকল রাজশাহী সিটি

আরও পড়ুন>> সরকারের পদক্ষেপে রিজার্ভে স্বস্তি ফেরার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

এসব নানান বিষয় নিয়ে কৃষক লীগ নেতাদের মধ্যে চলে আসা দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব সম্প্রতি এক ঘটনায় আরও প্রকাশ্যে আসে। সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সুইটের মায়ের মরদেহ দেখতে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে যান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সেখানে উভয়ে মহানগরের এক নেতাকে নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়ান।

এক পর্যায়ে মহানগরের ওই নেতাকে কৃষক লীগের অফিসে ঢুকতে নিষেধ করেন সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে স্মৃতিকে বলতে দেখা যায়, ‘ও যদি অফিসে ঢুকে তাহলে গুলি করে দেবো।’

নেতাকর্মীরা বলছেন, দ্বন্দ্ব-বিবাদের কারণে সংগঠনের ঐক্য ও সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তাই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাদ দিয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়ার কাজে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

কৃষক লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণ সম্পাদক স্মৃতির সঙ্গে এক মন্ত্রীর ভালো সর্ম্পক থাকায় সংগঠনে তিনি প্রভাব খাটান। যেসকল নেতা তার কথা শোনেন না তাদের অনেকেই তিনি কৃষক লীগ করতে দেবেন না বলে যখন তখন হুমকি দেন।

অভিযোগ যত সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে:

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্মৃতির ভাই আমিনুল ইসলাম পাপুল ছিলেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার যুবদল নেতা। তাকে এই উপজেলার কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক করেছেন স্মৃতি।

তার আরেক ভাই কল্লোল মিয়া জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনিও এখন আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের রাজনতি করেন। এছাড়া তার বড় বোনের জামাই হাজী সেকান্দার পলাশবাড়ি উপজেলা জামায়াতের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

এছাড়া কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবু বক্কর নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘণের অভিযোগ এনেছিলেন।

পলাশবাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর অভিযোগে বলেছিলেন, সংসদ সদস্য হয়েও স্মৃতি নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান করে ভোটারদের তার পৌরসভার বাড়িতে ডেকে নিচ্ছেন। সেখানে স্মৃতির চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম সরোয়ার বিপ্লবের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এদিকে গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ি-সাদুল্যাপুর) আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতির আগের এপিএস মুহিবুল হাসান মুকিত জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলেও অভিযোগ ছিল। তবে নিজের বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর জন্য অন্য এক মুক্তিযোদ্ধাকে হুমকির ঘটনার জেরে প্রতিবাদের মধ্যে মুকিতকে এপিএস থেকে বাদ দেন এমপি স্মৃতি।

কৃষক লীগের নেতাদের অভিযোগ, রাজশাহী ও সাতক্ষীরা জেলা কৃষক লীগের কমিটি টাকার বিনিময় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্মৃতির বদৌলতে কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-প্রচার সম্পাদক নুরুল ইসলাম বাদশার বাবার নাম রাজাকারের তালিকায় আছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মী।

কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, তিনি একার স্বাক্ষরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কৃষক লীগের আহব্বায়ক আবুল হোসেনকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এছাড়া নিজেই সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি জেলা ও উপজেলার কমিটি দিয়েছেন।

যা বলছেন কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা:

জানা গেছে, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর ও সাধারণ সম্পাদক স্মৃতির মধ্যে আগে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। সমীর চন্দ অসুস্থ হলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান একজন সহ-সভাপতি। মূলত এরপর থেকেই সমীর-স্মৃতি দ্বন্দ্ব-বিবাদ শুরু হয়।

এছাড়া কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ সংগঠনের দায়িত্ব নিজের কর্তৃত্বে রাখতে চান বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এ কারণেই সংগঠনের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করে কাদা ছোড়াছুড়ি করছেন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা।

এদিকে কৃষক লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে খোদ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারাও বিব্রত।

দ্বন্দ্ব আছে দ্বন্দ্ব নেই, যা বললেন সমীর-স্মৃতি:

দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করছেন কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘দলের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব ও কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে এটা খুবই খারাপ। দলের মধ্যে কিছু কাউয়া ঢুকছে তারাই এসব করছে।’

‘যারা সংগঠনে ঢুকেছে এক বছরও হয়নি কিন্তু দলে এসেই বড় নেতা হতে চাচ্ছে তারাই এসব করছেন। যদি এসব কাউয়াদের বের না করা যায় তাহলে দলের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

তাহলে এই দ্বন্দ্ব নিরসন করার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না জানতে চাইলে কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি ঢাকা টাইমস বলেন, ‘এই বিষয়ে কথা বলতে চাই না। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’

অন্যদিকে কোনো দ্বন্দ্ব-বিবাদ নেই বলেই দাবি করছেন কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কিছু হয়ে থাকলে সেটা সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এই বিষয় নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।

(ঢাকাটাইমস/২২জুন/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

‘ভারতের কবল থেকে প্রকৃত স্বাধীকারের দাবিতে জনগণ নীরবে প্রস্তুত হচ্ছে’

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ: ঢাকা দক্ষিণের আ.লীগ নেতা রিয়াজকে ফের শোকজ

যুবদল সভাপতি টুকুকে কারাগারে প্রেরণের প্রতিবাদে নয়াপল্টনে বিক্ষোভ

সরকার অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে দমনপীড়নের খড়গ নামিয়ে এনেছে: মির্জা ফখরুল

শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আ.লীগ অঙ্গীকারবদ্ধ: ওবায়দুল কাদের

পথচারীদের মাঝে তৃতীয় দিনের মতো পানি ও স্যালাইন বিতরণ জাপার

মুক্তি দেওয়া হচ্ছে হেফাজতের মামুনুল হককে, আভাস দিলেন নেতারা

গোটা দেশের মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী: রিজভী 

উপজেলা নির্বাচন এখন উপজ্বালায় পরিণত হয়েছে: সালাম

তীব্র তাপপ্রবাহে জাপার পানি ও স্যালাইন বিতরণ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :