ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় কনস্টেবল মনিরুজ্জামানকে ছুরিকাঘাতে খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৩, ১৬:৪৩ | প্রকাশিত : ০৩ জুলাই ২০২৩, ১৬:০৬

রাজধানীর ফার্মগেটে ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান তালুকদার হত্যায় তিন ছিনতাইকারী সরাসরি জড়িত। ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় তারা মনিরুজ্জামানকে হত্যা করে। ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ধারালো চাকুটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন। ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মহিদ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান হত্যায় দুজন অভিযুক্তের নাম জানান। তারা হলেন- রাব্বি ও লিটন। বাকি একজনের নাম জানানো হয়নি।

মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘ফার্মগেট এলাকায় ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হয়েছেন পুলিশ সদস্য মনিরুজ্জামান। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই কনস্টেবল মনিরুজ্জামানকে খুন করা হয়েছে। ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে তাকে আক্রমণ করে তিন ছিনতাইকারী।

‘এসময় পুলিশ সদস্য মনিরুজ্জামান তাদের বাধা দেন। তাকে ছুরিকাঘাত করে মানিব্যাগ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয় তারা। পরে পশ্চিম দিক দিয়ে পালিয়ে যায় এবং মোহাম্মদপুর গিয়ে তারা পৃথক হয়ে যায়।’

অতিরিক্ত কমিশনার মহিদ উদ্দিন জানান, ঈদের আগে ১ হাজারেরও বেশি ছিনতাইকারীকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া গত ৪৮ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোট ১৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি।

শনিবার ভোর সোয়া চারটার দিকে ফার্মগেট সেজান টাওয়ারের সামনে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন মনিরুজ্জামান। তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এই ঘটনায় একইদিন রাতে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে ডিএমপির তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। সেখানে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘যেকোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর পুলিশ রাস্তাঘাট, মার্কেট, শপিংমল ও কোরবানির পশুর হাট কেন্দ্রিক নির্বিঘ্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়। তারপরও চূড়ান্ত নিরাপত্তা বলতে কোনো কিছু নেই। যদি থাকত, তাহলে হয়তো সারা বিশ্বে আলাদা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন হতো না।’

‘এবার ঈদে দুইটি বড় ঘটনা সবাইকে নাড়া দিয়েছে। ‌এরমধ্যে একটি ঘটনা হচ্ছে, ঈদের দিন রাতে হাতিরঝিল এলাকায় একজন সাংবাদিক ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে আহত হয়েছেন। আর অন্য আরেকটি হচ্ছে আমাদের একজন পুলিশ কনস্টেবল ছিনতাইকারীদের হামলায় ফার্মগেট এলাকায় নিহত হয়েছেন।’

অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘সাংবাদিককে আহত করার ঘটনায় জড়িত হামলাকারীদের আমরা শনাক্ত করে ফেলেছি। এ বিষয়ে খুব দ্রুতই আমরা সুসংবাদ দিতে পারব বলে আশা করি। কনস্টেবল মনিরুজ্জামানের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৩ ছিনতাইকারীকে গত ৪৮ ঘন্টায় আমরা গ্রেপ্তার করেছি। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটিও আমরা জব্দ করতে সক্ষম হয়েছি। এ ঘটনায় আরও কিছু কাজ আমাদের বাকি রয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের সরাসরি যারা জড়িত তাদেরকে আমরা গ্রেপ্তার করতে পেরেছি।’

মনিরুজ্জামানের হত্যাকান্ডের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডিএমপির এই অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘ঘটনার দিন ভোর রাতে কনস্টেবল মনিরুজ্জামান শেরপুর থেকে বাসে করে ঢাকায় আসে। ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার আগে সে ফার্মগেট ওই ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তা পারাপার হওয়ার জন্য। এ সময় তিন ছিনতাইকারীদের মধ্যে একজন প্রথমে কনস্টেবল মনিরুজ্জামানের রাস্তা অবরোধ করে এবং তার কাছে মানিব্যাগ চাই।

‘কিন্তু কিন্তু মনিরুজ্জামান তাদেরকে মানিব্যাগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তাদেরকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কিন্তু ছিনতাইকারী তিনজন হয় তিনি তাদের সাথে পেরে উঠেননি তিনি। তখন ছিনতাইকারীরা মনিরুজ্জামানের শরীরে একাধিক জায়গায় আঘাত করে তার মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এই এই ঘটনা ঘটিয়ে তারা মোহাম্মদপুর থেকে আরয়াও পশ্চিম দিকে চলে যায়। সেখান থেকে তারা আলাদা আলাদা হয়ে যায়। তাদেরকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে তাদের সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি না।’

এসময় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার নিহত মনিরুজ্জামানের বিষয়ে বলেন, ‘কনস্টেবল মনিরুজ্জামান প্রভিডেন্ট ফান্ডের ইন্টারেস্টের টাকা নিতেন না। তিনি খুব সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি ছিলেন। তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি যে বাংলাদেশ পুলিশে এ ধরনের কনস্টেবল আছে। তার বয়স মাত্র ৪০ বছর, এই সময় তাকে আমরা হারিয়েছি।’

(ঢাকাটাইমস/০৩জুলাই/এসএস/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :