প্রতিদিন যে নিয়মে হাঁটলে শরীরের ওজন ঝরবে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩১ জুলাই ২০২৩, ০৯:১৩

সুস্বাস্থ্যের জন্য উৎকৃষ্ট ব্যায়াম হলো হাঁটা। যান্ত্রিক জীবনে অলসভাবে সবার সময় কাটে। এতে করে শরীরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেকে শরীরচর্চা করার সময় পান না। ওজন কমানো কিংবা চনমনে থাকা—প্রতিদিন কিছুটা সময়ের জন্য হাঁটা জরুরি। হাঁটলেই শরীর থাকবে সুস্থ। ওজনও থাকবে নিয়ন্ত্রণে। নিয়ম করে যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ে হাঁটতে পারেন, তা হলে বেশি সুফল পাবেন। রোজ হাঁটলে শুধু শরীর ভাল থাকে তা নয়, ভাল থাকে মন, আয়ুও বাড়ে। হাঁটাহাঁটি করলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়। মন এবং মস্তিষ্ক দুই-ই ফুরফুরে হয়। চিকিৎসকদের মতে, কয়েক পা হাঁটার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সুস্থতার চাবিকাঠি।

প্রতিদিন নিয়মিত মাত্র ১৫ মিনিট হাঁটলেই বেশ কিছু উপকার পাওয়া যায়। এমনটাই বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, রোজ ১৫ মিনিট হাঁটলেও আয়ু ৩ বছর পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

দুপুরের খাবার বা রাতের খাবার খাওয়ার পর ১৫ মিনিট হাঁটলে রক্তে শর্করা মাত্রা কম হতে পারে। এমনকী, যারা প্রত্যেকদিন ৪৫ মিনিট করে সকালে হাঁটছেন, তারা যদি একটানা অতক্ষণ না হেঁটে প্রত্যেকটা মিলের পর ১৫ মিনিট করে হাঁটতে পারেন, তা হলে বেশি উপকার পাবেন।

প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যেকদিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করা উচিত। কিন্তু অনেকেই সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারেন না। ওজন ঝরানোর জন্য শুধু ১৫ মিনিট হাঁটলে চলবে না। তবে যে ক্যালোরিগুলো এমনি ঝরবে না, সেগুলো ঝরানোর জন্য ১৫ মিনিটও যথেষ্ট। তবে এইটুকু শরীরচর্চার যদি রোগা হতে হয়, তা হলে হাঁটার পাশাপাশি লো-ক্যালোরি ডায়েটও করতে হবে। জেনে রাখুন, এই অল্প সময় হাঁটলেও আপনার কী কী উপকার হতে পারে।

হার্ট ভালো থাকে

চিকিৎসকদের মতে, প্রতি সপ্তাহে মাত্র আড়াই ঘণ্টা হাঁটলেই নাকি হার্টের অনেক সমস্যার সমাধান হয়। অর্থাৎ, দিনে যদি মাত্র একুশ মিনিট হাঁটাহাঁটি করেন, তা হলে আপনার হার্ট তো ভাল থাকবেই, সেই সঙ্গে হৃদ্‌রোগের আশঙ্কাও কমবে। নিয়ম করে হাঁটাহাঁটি করলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

ডায়াবেটিসের হাত ধরেই জন্ম নেয় আরও অনেক শারীরিক সমস্যা। তাই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে রেহাই পাবেন অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে। চিকিৎসকেরা বলছেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে হাঁটার ভূমিকা অপরিসীম। তবে ডায়াবেটিস থাকলে হাঁটতেও হবে নিয়ম মেনে। প্রথমে ধীর গতিতে শুরু করতে হবে। তিন থেকে পাঁচ মিনিট ধীরপায়ে হাঁটার পর গতি বাড়াতে হবে। মাঝারি গতিতে পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর্যন্ত হাঁটতে হবে। টাইপ টু-র ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এ ভাবে হাঁটাহাঁটি স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ ভাল।

মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি করে

এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে তিনবার এক ঘণ্টা দ্রুত হাঁটেন তাদের মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যারা শিক্ষা সেমিনারে অংশ নেয় তাদের তুলনায় ভালো। অন্যান্য গবেষণা দেখায় যে শারীরিক ব্যায়াম, যেমন হাঁটা, বয়স্ক নারীর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, নিয়মিত হাঁটার ফলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে এই সুবিধাগুলো পাওয়া যায়। তাই যখন হাঁটা-চলা করবেন, তখন আপনার মস্তিষ্কও ভালোভাবে কাজ করতে শুরু করবে।

মন ভালো থাকে

গবেষণায় দেখা গেছে,ব প্রতিদিন হাঁটলে তা স্নায়ু প্রক্রিয়া ঠিক রাখে, যা আপনার রাগ এবং আক্রমণাত্মক আচরণকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। শীতকালে রোদে হাঁটা মনের জন্য আরো ভালো যা আপনাকে বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি দেয়। সর্বোপরি হাঁটতে বের হলে আপনি আশেপাশের মানুষের সাথেও দেখা, সাক্ষাৎ ও গল্প করতে পারেন; যা মনের জন্য অনেক ভালো।

আয়ু বাড়ায়

হাঁটা-চলা আপনার জীবনীশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যারা প্রতি সপ্তাহে মাত্র ১০ থেকে ৫৯ মিনিট হাঁটাহাঁটি করেন, অলস ব্যক্তিদের তুলনায় তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ১৮% কম। এর মাধ্যমে হার্টও ভালো থাকে।

উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। ওষুধ খেয়ে, খাওয়াদাওয়ায় নিয়ম মেনেও সব সময়ে বশে রাখা যায় না উচ্চ রক্তচাপ। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, নিয়ম করে যদি হাঁটা যায়, তা হলে রক্তচাপের মাত্রা অনেকটাই বশে রাখা সম্ভব। হাঁটলে রক্তচাপ কমে। এমনকি, অনেকের ওষুধ খাওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না।

শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

যে নিয়মে হাঁটলে, দিনে কতটা হাঁটলে তা ওজন ঝরাতে সাহায্য করে, এটা না জানলে পণ্ডশ্রম! বাজার-দোকান, অফিস, কেনাকাটা ইত্যাদিতে হেঁটে গেলেই উপকার পাবেন, না কি ঘড়ি ধরে নির্দিষ্ট গতিতে হাঁটলে তবেই মিলবে সুফল?

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাঁটার জুড়ি মেলা ভার। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস চর্বি কমাতে সাহায্য করে। চিকিৎসকরা রোগা হওয়ার পর্বে হাঁটার পরামর্শ করে দেন। কিন্তু কাজটা অতটাও সহজ নয়। রীতিমতো ঘাম ঝরিয়ে দ্রুত পায়ে একই গতিতে হাঁটা, ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই হাঁটার সময়ে গতি কমালে চলবে না। তবে রোজ যদি কিছুটা সময় হাঁটাচলা করা যায়, তা হলে শরীর এমনিতে অনেক হালকা থাকবে।

একটানা হাঁটাতেই লুকিয়ে সুফল। টুকটাক খুচরো হাঁটায় শরীরের কলকব্জা ভাল থাকে ঠিকই, কিন্তু তাতে ওজনের হেরফের হয় না। ফিটনেসবিদদের মতে, লক্ষ্য রাখতে হবে সেকেন্ডে দু’পা হাঁটা। অত হিসাব কষতে না পারলে অন্তত ১৫-২০ মিনিটে দেড় কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারলে ভাল। অনেক সময়ে নিয়মিত হাঁটাহাটি করেও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। হাঁটার সময়ে কোন ভুলগুলো এড়িয়ে চলবেন, রইল হদিস।

অতিরিক্ত কোনও কিছুই ভাল না। সময় ধরে হাঁটার চেষ্টা করুন। খুব বেশি ক্ষণ হাঁটলে পেশিতে চোট, পেশিতে টান এমনকি হাড়ের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

পোষ্যকে সঙ্গে করে বা দলবেঁধে গল্প করতে করতে না হাঁটাই ভাল। এতে হাঁটার গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। মোবাইল কানে নিয়ে হাঁটলে হাঁটার উপকারিতা আসে না, কথা বলতে গিয়ে হাঁপিয়ে গিয়ে বেশি হাঁটা যায় না।

মাথায় একগাদা চিন্তা নিয়ে হাঁটবেন না। হাঁটা একটা নেশা। অভ্যাসের মতো রুটিনে ঢুকিয়ে নিয়ে দেখুন, মন্দ লাগবে না। কিন্তু প্রথম প্রথম একঘেয়ে লাগলে মোবাইলের হেডফোন কানে লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে হাঁটুন। এতে এমন কিছু হরমোন ক্ষরিত হবে, যা দুশ্চিন্তা কমায়। তবে বড় রাস্তায় গেলে কানে হেডফোন গুঁজে হাঁটার সময়ে সচেতন থাকুন।

হাঁটার সময়ে পরার জন্য জুতো খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পায়ে আরাম দেয়, এমন জুতো পরে হাঁটুন। হাত বা পিঠে খুব বেশি ভার বইবেন না তখন। এতে ক্লান্ত হবেন তাড়াতাড়ি।

হাঁটাহাঁটি করার সময়ে শরীর থেকে ঘাম ঝরে। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে বেশি করে জল খান। শরীরে জলের ঘাটতি হলেই বিপদ। ডিহাইড্রেশনের সময়ে হাঁটলে অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। পেশিতে টান ধরবে। ফলে হাঁটার প্রক্রিয়া ব্যহত হবে।

(ঢাকাটাইমস/৩১ জুলাই/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :