ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোতে ২০ হাজার মানুষের পারাপার

জামালপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ১৩:৫৫ | প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩৪

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার জোড়খালি ইউনিয়নে যমুনার শাখা নদীতে সেতু না থাকায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচলের সময় মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়েও মিলছে না কোনো সমাধান। তবে মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প পাস হলেই সেতু নির্মাণে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার জোড়খালি ইউনিয়নে প্রায় ৩০ বছর আগে যমুনার একটি শাখা নদী ফুলারপাড়াসহ ১০টি গ্রামকে আলাদা করেছে। ওই নদীটি গ্রামের জনসাধারণ প্রথমে নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হয়েছে। পরে নিজস্ব উদ্যোগে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন।

এ ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে ফুলারপাড়া, জামিরা, পাটাদহ, কয়ড়া, চররৌহা, নান্দিনা, খলিশাকুড়িসহ দুইপাড়ের প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষ পারাপার হচ্ছে। প্রতিদিন দুইপাড়ের প্রায় ২০হাজার মানুষ ওই ভাঙা নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে।

ভাঙা নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে বয়স্ক মানুষ, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও রোগীসহ কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিয়ে যাতায়াত করে ওই এলাকার জনসাধারণ। একটি স্থায়ী সেতুর অভাবে ওই এলাকার জনসাধারন তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বাঁশের সাঁকোর ছাড়া ওই অঞ্চলের মানুষকে প্রায় ৩কিলোমিটার পথ ঘুরে বাজারে, ইউনিয়ন পরিষদে ও উপজেলা শহরে যাতায়াত করতে হয়। এতে সাধারণ মানুষকে গুনতে হয় বাড়তি টাকা।

একটি সেতুর অভাবে কৃষি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন দিকে পিছিয়ে আছেন ওই অঞ্চলের দরিদ্র মানুষগুলো। প্রায় ১৫০মিটারের ঝুঁকিপূর্ণ এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। স্থানীয় এলাকাবাসী ওই নদীর ওপর একটি স্থায়ী সেতুর দাবি জানান। এছাড়াও নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের দাবিতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে স্থানীয় এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়ড়া বাজারের অদূরেই ফুলারপাড়া এলাকা। কিছু পথ মাটির সড়ক দিয়ে যাওয়ার পরে যমুনার শাখা নদীটির ওপর বাঁশের একটি সাঁকো। ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ে মোটরসাইকেল, সাইকেল, ভ্যানসহ মানুষ হেঁটে যাতায়াত করে। এছাড়াও কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য মাথায় করে নিয়ে বাজারে যাতায়াত করেন ওই এলাকার কৃষক। এ বাঁশের সাঁকো দিয়ে বয়স্ক, শিক্ষার্থী ও রোগীসহ দুইপাড়ের মানুষ যাতায়াত করে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচন এলে স্থায়ী সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়। পরে আর তারা সেতু নির্মাণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেন না। বছরের পর বছর জনপ্রতিনিধিদের কাছে ঘুরেও সেতুর বিষয়ে মিলছে না কোনো সমাধান।

ফুলারপাড়া এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুল ওয়াদুদ বিদ্যুৎ জানান, আগে আমরা নৌকা দিয়ে চলচলা করেছি। নৌকা দিয়ে চলাফেরা করতে করতে পরে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। পনের বিশ বছর হয়ে গেছে। সাঁকোর মাঝে ভেঙে গেছে। এখন আমাদের স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

জামিরা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মো.মনিরুজ্জামান মনির বলেন, শিক্ষার্থীরা ভাঙা বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। অনেক সময় বই খাতা নদীতে পড়ে যায়। এ অঞ্চলের মানুষ এই সেতু দিয়ে মুমুর্ষ রোগীদের উপজেলা ও জেলা শহরে নিয়ে চিকিৎসা সেবা করতে পারে না। অনেক মুমুর্ষ রোগীকে চিকিৎসার জন্য তিন কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে নিয়ে যেতে হয়। সেতু না থাকায় এ অঞ্চলের বয়স্ক ও মুমুর্ষ রোগীদের যাতায়াত করতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। এ নদীর উপর দ্রুত একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

কৃষক আব্দুল করিম বলেন, ‘ভাঙা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে ফসল বাজার নিয়ে বিক্রি করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মাথায় করে কৃষিপণ্য বাজার নিয়ে যেতে হয়। সেতু না থাকায় এ অঞ্চলের কৃষক তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সঠিক সময়ে বাজার নিতে পারে না। ফলে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। এখানে একটি সেতু হলে আমাদের খুব উপকার হবে।

এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইলিশায় রিছিল বলেন, জামালপুর জেলাটি ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদী দ্বারা বেষ্টিত। যার ফলে এ জেলায় সেতুর চাহিদা অনেক বেশি। আমরা ক্রমান্বয়ে সবগুলো সেতুই বাস্তবায়ন করছি। জোড়খালি যে সেতুটির কথা বলা হচ্ছে। সেতুটি আমরা আন্ডার হান্ড্রেড মিটার প্রজেক্টে অন্তর্ভূক্তির জন্য পত্র প্রেরণ করেছি। প্রজেক্টটি পাস হলে আমরা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ প্রসঙ্গে জামালপুর স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সায়েদুজ্জামান সাদেক বলেন, সেতুটি অনুমোদনের জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প পাস হলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৭ আগস্ট/ ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :