বধিরতা দূর করতে যেসব নিয়ম মেনে চলবেন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৪৫

মানবদেহের কান গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। পঞ্চইন্দ্রীয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে শ্রবণশক্তি। কান দিয়ে আমরা শুনি অথচ গুরুত্ব দেই কম। আমরা মনে করি বর্তমানে ভালো শুনতে পাচ্ছি বলে কোনো সমস্যাই হচ্ছে না বা হবে না। কিন্তু শব্দদূষণজনিত বেশ কিছু কাজ আমরা প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি সেগুলোর কিছু দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং এর ফলে আমাদের অন্তঃকর্ণের বিশেষ এক ধরনের কোষ ধ্বংস হয়ে শ্রবণের স্থায়ীভাবে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কানের সমস্যা থেকে অনেক সময় বধিরতা হতে পারে।

শ্রবণক্ষীণতা ও বধিরতা মানুষকে সমাজে অগ্রহণযোগ্য করে ফেলে। শিশুর ভাষা শিক্ষা, লেখাপড়া ও সামাজিক যোগাযোগের জন্য স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি অপরিহার্য। বধিরতার কারণে বিপুলসংখ্যক কর্মক্ষম মানুষ কর্মহীন জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

বধিরতা সমস্যা মূলত হয় জন্মগত কারণে অথবা বিভিন্ন রোগ বা সমস্যার কারণে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মধ্যকর্ণের প্রদাহ, আঘাতজনিত সমস্যা, উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে সৃষ্ট বধিরতা। শব্দ দূষণের মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার শব্দে হেডফোন দিয়ে গান শোনা, উচ্চমাত্রার হর্ন বাজানো, লাউডস্পিকারের শব্দ ইত্যাদি। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে তারা কানে ঠিকমতো শুনতে পারে কিনা।

গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় উচ্চ ভলিউমে গান শোনা শ্রবণশক্তি কমিয়ে দেয়; তরুণ প্রজন্মের জন্য যা অশনিসংকেত। তাই অবশ্যই হেডফোনে গান শোনার সময় বিরতি দিয়ে এবং ভলিউম কমিয়ে অর্থাৎ ডিভাইস ভলিউম ৬০% পর্যন্ত রেখে গান শোনা উচিত।

একনাগাড়ে জোরালো শব্দের কারণে অন্তঃকর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। তাই উচ্চ শব্দের কলকারখানার শ্রমিকদের ক্ষেত্রে কাজের সময় ইয়ার প্লাগ ব্যবহার এবং নিয়মিত স্ক্রিনিংসহ বিশেষ নজর দেওয়া সময়ের দাবি। গাড়িচালকদের অযথা হর্ন বাজানো থেকে বিরত থাকা উচিত। অপ্রয়োজনীয় শব্দদূষণরোধে প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা উচিত।

বয়স বাড়লে বিভিন্ন রকম শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। এই সময়ে শ্রবণশক্তিও হ্রাস পেতে থাকে। তবে এর তীব্রতা সবার জন্য সমান নয়। শ্রবণশক্তি কখনো ধীরে খারাপ হয়, কখনো আকস্মিক প্রভাবেও কেউ কেউ হারাতে পারেন শ্রবণশক্তি। কিন্তু শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে পুষ্টি এবং খাদ্যাভ্যাসের কি কোনো যোগ রয়েছে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো একটি নির্দিষ্ট খাবার খেলে বা না খেলে তার প্রভাব শ্রবণশক্তির উপর পড়ে কি না, তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। কিন্তু সাধারণভাবে পটাশিয়াম, জিঙ্ক এবং ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার শ্রবণশক্তি ভালো রাখতে সহায়তা করে, কাজেই খাদ্যাভ্যাসে এই ধরনের উপাদানগুলো না থাকলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা বেশি বলে মনে করেন কেউ কেউ।

একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, পশ্চিম দুনিয়ার প্রচলিত বেশ কিছু খাবারের সঙ্গে ইডিওপ্যাথিক বা আকস্মিক বধিরতার যোগ রয়েছে। এই খাবারগুলোর মধ্যে মূলত প্যাকেটজাত এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার, চর্বিযুক্ত মাংস এবং অতিরিক্ত চিনিসমৃদ্ধ খাবারের কথা বলা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, এই ধরনের খাদ্যাভ্যাস হঠাৎ শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকি কিছুটা হলেও বাড়িয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে, জাপানে প্রচলিত খাবারদাবার শ্রবণশক্তি ভালো রাখতে সবচেয়ে উপযোগী বলেও মত গবেষকদের।

বয়স বাড়লে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল রোগের শারীরিক সমস্যাগুলোর পাশাপাশি কানে কম শোনারও একটা সমস্যা দেখা দেয়। তবে কানে কম শোনার নেপথ্যে থাকতে পারে অপুষ্টি এবং পর্যাপ্ত খাওয়াদাওয়ার অভাব। কিছু প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে, যেগুলো সঠিক পরিমাণে শরীরে প্রবেশ না করলে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। জেনে নিন বয়সকালে বধিরতার আশঙ্কা দূর করতে প্রতিদিন যেসব খাবার খাবেন।

শ্রবণশক্তি ভালো রাখে দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবারে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, ডি, ই, কে-র মতো উপাদান। এ ছাড়া অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, খনিজ পদর্থে সমৃদ্ধ পনির, টোফু নিয়ম করে বার্ধক্যে খেলে বধিরতার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। তাই এই ধরনের খাবার যত বেশি খাবেন, বার্ধক্যে কানে কম শোনার ঝুঁকি কম থাকবে।

শ্রবণশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। বয়সজনিত শ্রবণশক্তি যাতে দুর্বল না হয়ে যায়, তার জন্য ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড অত্যন্ত কার্যকর। সামুদ্রিক মাছ, আখরোট, চিয়া বীজ, তিসি বীজ, ডিম এবং মাছের তেলে এই উপাদান থাকে।

শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি হলে বয়সজনিত বধিরতার আশঙ্কা বেড়ে যায়। কাঁচা মুগ, ছোলা, কাবলি ছোলার মতো খাবার থেকে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক পাওয়া যায়। জিঙ্কের ঘাটতি কমাতে খেতে পারেন দুধ, ডিম, দই।

চকোলেটে ভরপুর পরিমাণে জিঙ্ক রয়েছে। কানের সংক্রমণ দূর করা থেকে বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমানো— সব কিছুতেই ডার্ক চকোলেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়া, এই চকোলেটে থাকা ম্যাগনেশিয়াম কানের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে।

কানে কোনো কিছুই ঢোকানো যাবে না। এমনকি কান পরিষ্কার করার জন্য কাঠি, মুরগির পালক বা কটন বাড ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। খৈল জমে কান বন্ধ ভাব হলে বা কানের মধ্যে বাইরের কোনো বস্তু প্রবেশ করলে অপসারণ করতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৪ অক্টোবর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :