সোনারগাঁয়ে পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ, ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় পুলিশের নির্যাতনে ৫৫ বছর বয়সি এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তার পরিবারের। পরে তাকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয় বলে জানা গেছে।
সোমবার বিকালে উপজেলার জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের বুরুমদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গ্রামে নিহত নুরুল ইসলামের একটি পোল্ট্রি ব্যবসা ছিল বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানান।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে৷ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালায়, পুলিশকে দেখে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
এদিকে নিহতের মেয়ে মিথিলা আক্তার জানান, গতকাল বিকালে সোনারগাঁ থানাধীন তালতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপপরিদর্শক ইলিয়াস আহমেদ এক কনস্টেবলকে নিয়ে তাদের বাড়িতে আসেন৷ দুজনেই সাদা পোশাকে ছিলেন৷ তারা এক লাখ টাকা দাবি করেন, না দিলে ওই এএসআই তাকে চলমান রাজনৈতিক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়৷
“আমরা ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়েছিলাম, কিন্তু প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এএসআই ইলিয়াস আমার বাবাকে হাতকড়া পরিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমার বাবা বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। এরপর তারা আমার বাবাকে কিলঘুষি ও লাঠি দিয়ে মারধর করে। একপর্যায়ে বাবা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে চলে যায়।”
আহত নুরুল ইসলামকে পরিবারের সদস্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পাঁচ কন্যার জনক এই বৃদ্ধের তিন বছর আগে ওপেন-হার্ট সার্জারি হয়েছিল। তিনি একজন অসুস্থ ব্যক্তি হওয়ায় পুলিশ নির্যাতন সহ্য করতে পারেননি, বলেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা৷
মিথিলা বলেন, ‘আমার বাবা ইনহেলার ও পানি চেয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ তা নিতে দেয়নি। আমার বাবা যদি ইনহেলার নিতে পারতেন তাহলে তিনি মারা যেতেন না। পুলিশ আমার বাবাকে হত্যা করেছে, এর বিচারের জন্য প্রয়োজনে আদালতে যাব।’
স্থানীয়রা জানান, নুরুল ইসলামের মৃত্যুর খবর শুনে আবারও পুলিশ তার বাড়িতে আসে। এরপর বিক্ষুব্ধ স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাদের অবরোধ করে।
পরে বন্দর ও সোনারগাঁ সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন ও সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনকে শান্ত করেন।
জামপুর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির জানান, ঘটনা শুনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাও ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন৷
চেয়ারম্যান বলেন, ‘মৃত পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ তাকে ঘুষি ও মারধর করেছে, যেহেতু সে হার্টের রোগী ছিল সে অত্যাচার সহ্য করতে পারেনি৷”
তবে তালতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক সাইফুল ইসলামের দাবি, মাদক সংক্রান্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়।
‘পুলিশ মাদক উদ্ধারের জন্য তার বাড়িতে গিয়েছিল। কিছুই না পেয়ে তারা স্থান ত্যাগ করেন। হৃদরোগী হওয়ায় পুলিশের ভয়ে তার মৃত্যু হতে পারে।’
‘সাদা পোশাকে’ অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘কখনও কখনও প্রয়োজনে সাদা পোশাকে পুলিশ অভিযান চালায়।’
ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত কোনো মামলা আছে কিনা এবং এর আগে কখনো তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি এ পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘আমি এ স্টেশনে নতুন৷ বিস্তারিত জেনে বলতে পারবো৷’
এদিকে সোমবার রাত থেকে এ প্রতিবেদক সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি৷ তবে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
এদিকে, ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়েছে বলে জানান পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম।
(ঢাকাটাইমস/০৭নভেম্বর/এআর)