দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব বিভাগ উন্মুক্ত থাকা উচিত

অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হালিম
 | প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৫০

নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আগামী বছর থেকে বিভাগ বিভাজন ছাড়াই পড়াশোনা করবে। নতুন যে কোনো বিষয় নিয়েই সংশয় থাকে। এটা স্বাভাবিক। সংশয়ের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এখন সংশয়ের জায়গাটা হলো বিজ্ঞান শিক্ষা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে কি না? আমরা আগেও মাধ্যমিকে অভিন্ন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়নের কথা বলেছি। কারণ গ্রামাঞ্চলে বিজ্ঞান শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়ার জন্য শিক্ষার্থীও খুব কম পাওয়া যায়। তবে এই দৃশ্যের বিপরীত অবস্থানে রয়েছে শহরগুলো। শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। এমনকি কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধুই বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীই ভর্তি করানো হয়। সাইকোলজিকাল মোটিভেশনের জন্য অভিভাবকেরাও সন্তানকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ানোর জন্য মরিয়া থাকেন।

সন্তান বড় হয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে এটা তাদের প্রত্যাশা। নবম ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়লে পরবর্তী সময়ে সব দিক উন্মুক্ত থাকবে এমন বদ্ধমূল ধারণা তাদের মধ্যে থাকে। অথচ জ্ঞানের চর্চা সব বিভাগেই হতে পারে। তাই সবার জন্যই সব বিভাগ উন্মুক্ত থাকা উচিত। এই নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। ফলে প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত যে স্তরভিত্তিক শিক্ষাক্রম নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আগে বিজ্ঞান বিভাগে সবকটি বিষয় বিস্তারিত পড়ানো হতো তাই অনেকের সংশয় থাকতে পারে বিজ্ঞান শিক্ষা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে কি না? এই বয়সেই বিস্তৃত পরিসরে জ্ঞান আরোহণের জন্য স্পেশালাইজড এডুকেশনে যাওয়ার সুযোগ নেই।

ফলে শিক্ষার্থীর জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব রকম পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখন আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থী নিজেকে জানতে পারবে। এভাবে সে জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারেও পরিণত হবে। তখন একাদশে গিয়ে অভিভাবকের সঙ্গে নিজের আগ্রহের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারবে। কিন্তু আগে আগ্রহের পথটাই রুদ্ধ করে দেওয়া হতো। এখন অন্য স্কুলগুলোও তাদের খুব বেশি বিজ্ঞান শিক্ষার্থী নেই এমন হীনম্মন্যতায় ভুগবে না।

তাই এই শিক্ষাক্রম আগে প্রয়োগ করে দেখতে হবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একমুখী শিক্ষা বিদ্যমান। এর সঙ্গে আরও দুটি শ্রেণি যুক্ত হয়েছে। এটা খুব বেশি পার্থক্য তৈরি করছে না। এখন শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার শঙ্কাও কম। এছাড়া সব ধরনের জ্ঞান নিয়ে সে একাদশে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে। তখন যদি কোনো শিক্ষার্থীর জীবিকার প্রয়োজন পড়ে সে জানতে পারবে কোন বিষয়ে তার দক্ষতা কেমন। ফলে সাধারণ শিক্ষা না নিয়ে কারিগরি শিক্ষার দিকে নিজেকে জেনে-বুঝে ধাবিত করতে পারবে।

তবে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকের প্রতিও নজর দিতে হবে। বেতন-ভাতাসহ ভালো আর্থিক জোগান দিতে হবে। শিক্ষকের প্রাপ্ত সম্মান ও আর্থিক সঙ্গতি ভালো থাকলে পাঠদানে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে উৎসাহ পাবেন।

লেখক: ড. মো. আবদুল হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :