পর্যটন সম্ভাবনাময় চাঁদপুর শহর নান্দনিক করা হচ্ছে

মাজহারুল ইসলাম অনিক, চাঁদপুর
 | প্রকাশিত : ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:১৭

প্রাচীন বন্দর নগরী ও তিন নদীর মোহনায় গড়ে ওঠা চাঁদপুর জেলা সদরের পৌরসভায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়েছে এবং বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলমান।

প্রথম শ্রেণির পর্যটন সম্ভাবনাময় এই পৌরসভাকে নান্দনিক করে গড়ে তুলতে বর্তমান পৌর পরিষদ উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রেখেছেন।

বিশেষ করে মেয়র মো. জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে বর্তমান পরিষদ গত ৩ বছরে প্রায় ৭০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করেছেন।

আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত পৌরসভার ১০০ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র। নির্বাচনী মেয়াদের মধ্যেই সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে শহরকে নান্দনিক করে গড়ে তোলা হবে। সড়ক, ড্রেন, ওয়াকওয়ে, হরিজনদের বাসস্থান, পানি সংকট দূরীকরণসহ ইতোমধ্যে পরিকল্পনার বেশ কিছু কাজ দৃশ্যমান।

চাঁদপুর পৌরসভার প্রকৌশল শাখাসহ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পৌরসভার বর্তমান মেয়র ২০২০ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৬ মাসের সাড়ে ৭ কোটি টাকা বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছেন। বর্তমানে বেতন হালনাগাদ। বিদ্যুতের ৫ কোটি টাকা বকেয়া বিল পরিশোধ করে ব্যয় সংকোচন করেছেন। সবচাইতে বেশি বেহাল ছিল সড়ক ও ড্রেনেজ সমস্যার। নিজস্ব অর্থয়ানে ইতোমধ্যে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক, ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরো উন্নয়ন কাজ চলমান।

শহর ঘুরে দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ স্টেডিয়াম রোড, মিশন রোড, কালবাড়ী শপথ চত্বর, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক, কুমিল্লা সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, হাজী মহসীন রোড, জেএম সেনগুপ্ত রোডের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়ক, নিউ ট্রাক রোডসহ বেশ কয়েকটি সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান। একইসঙ্গে দুই পাশে ওয়াক ওয়েসহ সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ করা হচ্ছে এই প্রথম। সড়ক প্রশস্ত করণের কাজে প্রশংসিত হয়েছেন মেয়র।

শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের বাসিন্দা কবির হোসেন ঢাকা টাইমসকে জানান, মেয়র খুবই সাহসিকতার সঙ্গে শহরের সড়কগুলো প্রশস্ত করছেন। যানজট নিরসনে এই উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিগত কোনো মেয়রই সড়ক প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নিতে পারেননি।

শহরের ট্রাক রোড এলাকার বাসিন্দা মো. আলম জানান, রহমতপুর আবাসিক এলাকা, পালপাড়া, নাজির পাড়া ও ট্রাক রোডে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সড়ক প্রশস্ত করণসহ জনদুর্ভোগ কমাতে বর্তমান মেয়রের পরিকল্পিত কাজগুলো শতভাগ বাস্তবায়ন হলে সত্যিকারে নান্দনিক শহর হবে চাঁদপুর পৌরসভা। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কাজ দৃশ্যমান।

চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এ.এইচ.এম শামসুদ্দোহা জানান, বর্তমান মেয়র ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত খুবই গুরুত্ব দিয়ে কাজ সম্পন্ন করেছেন। পৌরসভার যেসব এলাকায় উন্নয়ন হয়নি এবং পিছিয়ে পড়া জনবসতি এলাকাগুলোর দিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৫ কিলোমিটার ড্রেন। ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর (হরিজন) জন্য নির্মাণ হয়েছে দুটি ৫ তলা ভবন। পানির সংকট নিরসনে উন্নয়ন কাজ হয়েছে ৪ কোটি টাকা। ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণ হয়েছে।

তিনি আরও জানান, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অর্থয়ানে শহরের অন্ধকার এলাকাগুলো এখন রাতের বেলায় আলোকিত। ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০টি সৌর বিদ্যুৎ বাতি লাগানো হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থয়ানে ইচলী ও ঘোড়ামারা আশ্রয়ণ কেন্দ্রে নির্মাণ হয়েছে রাস্তা ও ড্রেন। এতে ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি টাকা।

পৌরসভার নাগরিকদের জীবন মান উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাল্য বিয়ে রোধে ব্যাপক কাজ হয়েছে পৌরসভায়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প (এলআইইউপিসি) ইউএনডিপি কাজ করছেন। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ এবং কিশোরীদের শিক্ষা সহায়তা, গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করছে সংস্থাটি।

চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, দেশের চরম সংকটময় অবস্থা কোভিডের মধ্যে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। এরপর বিশ্বময় সংকট। পৌরসভার অনেক বছর আগ থেকেই যে সমস্যাগুলো ছিল- কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া, গ্র্যাচুইটি টাকা বকেয়া, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া, ঠিকাদারদের বিল বকেয়া। পৌরসভার অভ্যন্তরীণ এসব সমস্যা সমাধান করে একটি অবস্থানে আনতে প্রায় ৩ বছর সময় পার হয়েছে। ইতোমধ্যে পৌরসভার অপচয় রোধ করে আয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমাদের রাজস্ব আয় পূর্বে ছিল ২৫ কোটি টাকা। এখন সেটি বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ কোটি টাকা। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি অবশ্যই পৌরবাসী ভালোভাবে দেখবে। আমরাও এটাকে সাফল্য মনে করছি।

মেয়র বলেন, আমরা এখন যে কাজটি করছি সেটি হচ্ছে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন। আমাদের যে সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা তৈরি করা অর্থাৎ নান্দনিক শহর গড়ে তোলা, সেই কাজগুলোই করা হচ্ছে। এই পৌরসভার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে এগিয়ে যাব। ইতোমধ্যে প্রায় ৭০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে আমাদের ১০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হবে। এর আগে ১০-১৫ বছরে এত উন্নয়ন কাজ হয়নি। পিছিয়ে থাকা এবং উন্নয়ন হয়নি এমন এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে আমরা বেশি কাজ করেছি। কারণ সেসব এলাকার লোকজন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। সুবিধা না দিয়ে আমরা কর আদায় করতে পারি না। আশা করি সকলের সহযোগিতায় আমাদের পরিষদের মেয়াদের মধ্যেই নান্দনিক পৌরসভার কাজ সম্পন্ন হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩নভেম্বর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :