লাভের স্বপ্নে লবণ চাষের প্রস্তুতি

ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার
 | প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৩

ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে লাভের স্বপ্ন নিয়ে লবণ চাষে মাঠে নেমেছে চাষিরা। কক্সবাজারে ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে ২০২৩-২৪ মৌসুমে প্রায় ২৫ দশমিক ২৮ লাখ মেট্রিক টন লবণ চাহিদার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এবারে মাঠে নেমেছে প্রায় ৩৯ হাজার ৪৮৭ জন লবণ চাষি। তবে চাষিদের ভয় এক জায়গায়, যদি বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করা হয় তাহলে তারা উৎপাদিত লবণের দাম পাবে না। এতে সব কিছু মাঠে মারা পড়বে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে কক্সবাজারের একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ খাত লবণ শিল্প।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একটি মধ্যস্বত্বভোগী ভুল বুঝিয়ে লবণ আমদানি করে দেশের চরম ক্ষতি করছে।

এদিকে এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লবণ চাষে ব্যাপক হারে মাঠে নেমে পড়েছে প্রান্তিক চাষিরা। এতে করে গত ৩০ অক্টোবর চলতি লবণ মৌসুমের পর হতে বাঁশখালী ও কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ৯৪০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধান কাটা শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে লবণ চাষের কর্মযজ্ঞ। এবার ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে মনে এক ধরনের শঙ্কা নিয়ে মাঠে নেমেছে হাজারো লবণ চাষি। ইতোমধ্যে অনেক এলাকা থেকে শ্রমিকরা প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক সামগ্রীসহ মাঠে আগমন করেছে। অনেকেই খতমে কোরআনের মাধ্যমে লবণ চাষের কাজ উদ্বোধন করেছেন। এবারের প্রথম লবণ উৎপাদন হয়েছে বাঁশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলায়। এই উপকূলীয় এলাকাগুলো ঘূর্ণিঝড় হামুন ও মিধিলির প্রভাবে ৪০-১০৬ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় লবণ উৎপাদন ও মাঠ প্রস্তুতিতে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। তবে এর আগে কয়েকটি এলাকায় পলিথিনে উৎপাদিত লবণ বিক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়।

সরেজমিনে সদরের চৌফলদণ্ডী ও টেকনাফের হ্নীলায় দেখা গেছে, চাষিরা কোমর বেঁধে নেমেছেন মাঠে। বিস্তীর্ণ এলাকায় রোদে প্রায় চাষিদের মুখে হাসি দেখা দিয়েছে, তবে অনেক চাষি ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশের লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্র হচ্ছে কক্সবাজার জেলা ও বাঁশখালী। এখানকার উৎপাদিত লবণ নিয়ে সারাদেশের মানুষ খাওয়ার পর বিদেশেও রপ্তানি করা যায়। কিন্তু সরকারকে একশ্রেণির দালাল ভুল বুঝিয়ে লবণ আমদানি করে দেশীয় লবণের ক্ষতি করছে।

দেখা গেছে, টেকনাফের কাটাখালী, লম্বাবিল, উনছিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া, নয়াপাড়া, নয়াবাজার, মিনাবাজার, ওয়াব্রাং, সিকদারপাড়া, নাটমুরাপাড়া, চৌধুরীপাড়া, রঙ্গিখালী, লেদা, মোছনীপাড়া, সাবরাং ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া, সিকদারপাড়া, নয়াপাড়া, কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ও চৌফলদণ্ডীসহ উপকূলীয় এলাকায় লবণ চাষিরা পুরোদমে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। তাদের একটাই দাবি দেশের লবণ দেশে যথেষ্ট উৎপাদন হয়। যাতে কোনো চক্র বিদেশি লবণ আমদানি করতে না পারে।

চৌফলদণ্ডী সিকদারপাড়া এলাকায় বিস্তীর্ণ লবণ চাষি শাহেদ উল্লাহ জানান, ঘূর্ণিঝড়ের আগে মাঠে নেমেছিলাম কিন্তু পানির কারণে মাঠ উপযোগী করতে পারিনি। এরপর ১০ দিন হচ্ছে মাঠে নেমেছি মাঠ প্রস্তুত প্রায় তবে খালে ও মাঠে লবণ পানি উপযোগী না হওয়ায় লবণ উঠতে আরো এক সপ্তাহ লাগবে।

অপর চাষি শরীফ জানান, তিনি ৪ জন চাষি নিয়ে ৭ কানি জমিতে মাঠ প্রস্তুত করতে মাঠে নেমেছেন ১৫ দিন হচ্ছে। এসব মাঠে লবণ উৎপাদন করতে আরো ৭ দিন লাগবে বলে জানান।

তার দাবি-দেশে প্রচুর লবণ উৎপাদন ও জমা রয়েছে এখনো। বিদেশ থেকে লবণ আমদানির ফলে দেশের এসব লবণ পড়ে থাকবে।

তাদের দাবি, লবণ চাষিদের সরকারিভাবে ঋণের পৃষ্ঠপোষকতা করলে ও ন্যায্যমূল্য দিলে এ খাতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে। সঠিক মূল্য নির্ধারণ করে কৃষকের মূখে হাসি ফোটানোর দাবি চাষিদের।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে ২৫ দশমিক ২৮ লাখ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ মৌসুম শুরুতে মাঠ পর্যায়ে লবণ মজুদ রয়েছে ১ দশমিক ৬০ লাখ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ মৌসুমে দেশে লবণের চাহিদা ২৩ দশমিক ৮৫ লাখ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ মৌসুমে মোট লবণ উৎপাদন ২২,৩২,৮৯০ মেট্রিক টন। ২০২১-২০২২ মৌসুমে জমির পরিমাণ ছিল ৬৩,২৯১.০০ একর। ২০২৩-২৪ লবণের মূল্য মণ প্রতি ৫২৬ টাকা ও মেট্রিক টন মূল্য ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ১৪৬ টাকা।

এছাড়া বৃহৎ লবণ কেন্দ্র রয়েছে, কুতুবদিয়ার লেমশিখালী, উত্তর নলবিলা, মহেশখালীর গোরকঘাটা, মাতারবাড়ি, ঈদগাঁওর গোমাতলি, সদরের চৌফলদণ্ডী, পেকুয়ার দরবেশকাটা, চকরিয়ার ডুলাহাজারা ও ফুলছড়ি, টেকনাফ, বাঁশখালীর পূর্ব বড়ঘোনায়।

লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় (বিসিক) কক্সবাজারের পরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. ইদ্রিস আলী জানান, নভেম্বর মাসের শুরু থেকে ধানের চাষ প্রায় শেষ। এরপর চাষিরা লবণ উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। বৃষ্টি না হলে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লবণ চাষিরা বেশ উপকৃত হবে। এ বছর লবণের ন্যায্যমূল্য পেয়ে প্রান্তিকের চাষিরা রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। গত বছরের চেয়ে এ বছর লবণের গড়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২৬ টাকা।

(ঢাকা টাইমস/২৪নভেম্বর/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :