আতঙ্ক ছড়াচ্ছে প্রাণঘাতী ছত্রাক ক্যানডিডা অরিস

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৫২

বিশ্বজুড়ে নতুন আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে ক্যানডিডা অরিস। ছত্রাক প্রজাতির ক্যানডিডা অরিস হতে পারে প্রাণঘাতীও। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ বাড়ছে ক্যানডিডা অরিসের। অবিলম্বে প্রতিহত না করা গেলে এই ছত্রাক সংক্রমণ মহামারির আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্যানডিডা অরিসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

চলতি বছর প্রথম ক্যানডিডা অরিস সংক্রমিত রোগীর সন্ধান মেলে গত ১০ জানুয়ারি, ওয়াশিংটনে। তারপর গত সপ্তাহে আরও তিনজনের এই প্রাণঘাতী ছত্রাকে সংক্রমিত হওয়ার খবর মেলে। এছাড়া হাসপাতালের যেসব রোগী ফিডিং টিউব, শ্বাস নেয়ার টিউব বা ক্যাথেটার ব্যবহার করেন তাদের দেহে প্রায়শই এই ছত্রাক পাওয়া যায়।

সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)র তথ্যানুসারে, ক্যানডিডা অরিসে সংক্রমিত হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে, এমনকি রক্তপ্রবাহের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়ায়। এর ফলে দেহের বিভিন্ন অংশে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। কানেও সংক্রমণ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যানডিডা অরিস ছোঁয়াচে। অর্থাৎ কেউ এই ছত্রাকে সংক্রমিত হলে তার সংস্পর্শে আসা অন্য ব্যক্তিও সংক্রমিত হতে পারেন। তাই এতে সংক্রমিত ঝুঁকিপূর্ণ রোগীকে আলাদা থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এমনকি যে রোগীর পরিচর্যা করবে, তাকেও গ্লাভস ও গাউন পরতে হবে।

উল্লেখ্য, ক্যানডিডা অরিসের প্রথম খোঁজ মেলে ১৫ বছর আগে জাপানে। তারপর গত কয়েক বছরে এই ছত্রাকের সংক্রমণ অতিরিক্ত হারে বেড়ে যায়। ২০২২ সালে এই ছত্রাকে সংক্রমিত হয়েছিল ২ হাজার ৩৭৭ জন, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ৫৩ গুণ।

সিডিসির তথ্য অনুসারে, মোট ৪০টি দেশে প্রাণঘাতী ভাইরাস ক্যানডিডা অরিসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে। যেভাবে এই ছত্রাকের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, এটা গোটা বিশ্বের জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে সিডিসি ও ডব্লিউএইচও।

ক্যানডিডা অরিস সংক্রমিত রোগীদের আলাদা একটি ঘরে থাকা উচিত। ঘরটি নিয়মিত জীবাণুনাশক সামগ্রী দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। রোগী ও পরিচর্যাকারীকে বারবার অ্যালকোহল-ভিত্তিত স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুতে হবে। রোগীর থেকে পরিচর্যাকারীর মধ্যে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়, সেজন্য পরিচর্যাকারীকে গ্লাভস এবং গাউন পরতে হবে। যেভাবে এই ছত্রাকের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, এটা গোটা বিশ্বের জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে সিডিসি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।

২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ৬০ জন রোগী ক্যানডিডা অরিসের সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ দপ্তর জানিয়েছে, ধীরে ধীরে বিশ্বের অনেক দেশেই ক্যানডিডা অরিসের সংক্রমণের খবর মিলছে। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশেই এই ছত্রাকের সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে গ্রিসে এই সংক্রমণের খবর মেলে।

ডিএনএ পরীক্ষায় পাওয়া যায় যে, ক্যানডিডা অরিসের ছত্রাক রোধী ওষুধ প্রতিরোধক জিনের সাথে সি. আলবেনিয়ান্সের জিনের বেশ মিল রয়েছে। তার মানে হচ্ছে, ওষুধ প্রতিরোধী জিনগুলো এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতিতে ছড়িয়ে পড়েছে।

গবেষণায় জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্যানডিডা অরিস ছত্রাক বেশি তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে বাধ্য হওয়ায় এর সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে।

বেশিরভাগ ছত্রাকই কম তাপমাত্রায় মাটিতে বসবাস করতে পছন্দ করে। কিন্তু বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায়, উচ্চ তাপমাত্রার সাথে খাপ-খাইয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে ক্যানডিডা অরিস। ফলে মানুষের দেহে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ায় তাদের জন্য মানব দেহে বেঁচে থাকা সহজ।

সাধারণত যারা চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন হাসপাতাল কিংবা নার্সিংহোমে কাটান, তারাই ক্যানডিডা অরিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি থাকেন। যেসব রোগীরা ক্যানডিডা অরিসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগের মধ্যেই ফ্লুকোনজলের মতো সাধারণ ছত্রাক রোধী ওষুধ আর তেমন কাজ করছে না বলে প্রতিপন্ন হয়েছে। এখনই সতর্ক না হলে সারা বিশ্বের জন্য ক্যানডিডা অরিস ছত্রাক ভয়ংকর মহামারি আকার ধারণ করবে।

(ঢাকাটাইমস/৫ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :