দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনার নতুন ধরন, সতর্ক থাকার উপায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৪৯

নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে করোনাভাইরাস। ২০২০ সালের পর থেকে প্রতি বছর শীতের মৌসুম এলেই করোনার সংক্রমণ অন্য সময়ের চেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। এবার করোনার নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১ চোখ রাঙাচ্ছে। কোভিডের জন্য দায়ী ভাইরাসটি শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে রূপ পাল্টেছে। এর কয়েকটি ধরনও তৈরি হয়েছে। মাঝে কিছুদিন বিশ্বজুড়ে অমিক্রন ধরনের আধিপত্য দেখা গিয়েছিল।

ধারণা করা হচ্ছে, অমিক্রনের আরেক উপধরন বিএ.২.৮৬ ধরনের তুলনায় জেএন.১-এর স্পাইক প্রোটিনের অতিরিক্ত পরিবর্তনের কারণে সব অঞ্চলে জেএন.১ দ্রুত ছড়াচ্ছে। বিএ.২.৮৬ ধরন থেকেই জেএন.১-এর উৎপত্তি।

জেএন.১-এর আক্রান্তের সংখ্যার পাশাপাশি ঘটছে করোনার কারণে মৃত্যুও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও সতর্ক করা হচ্ছে এ বিষয়ে। করোনার নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১ এর উপসর্গগুলো কী কী, তা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা ইত্যাদি। তবে এই উপসর্গগুলো কিন্তু সাধারণ জ্বর-সর্দির ক্ষেত্রেই সাধারণ। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্টের লক্ষণগুলো হালকা থেকে মাঝারি হয়। যেমন- জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা ও মাথাব্যথা হতে পারে। সাধারণত চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে অবস্থার উন্নতিও হচ্ছে। খিদে কমে যেতে পারে। এর পাশাপাশি ক্রমাগত বমি বমি ভাব হতে পারে। জেএন.১ রূপের আরেকটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো চরম ক্লান্তি। অত্যধিক ক্লান্তি ও পেশীর দুর্বলতা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাও দেখা যেতে পারে, যা থেকে হজমের সমস্যা হতে পারে।

সংক্রমণ ও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সেগুলো হলো জনাকীর্ণ ও বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরতে হবে। কাশি বা হাঁচির সময় নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে। কোভিড এবং টিকার নতুন নতুন তথ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে। বিশেষ করে, যাঁরা সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছেন। অসুস্থ হলে বাড়িতে থাকুন। লক্ষণ দেখা দিলে রোগ শনাক্তের পরীক্ষা করতে হবে।

করোনাভাইরাস আমাদের নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। আর সেটা হলো রোগ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা। আমরা আগে থেকেই জানতাম যে প্রতিরোধ সব সময় প্রতিকারের চেয়ে ভালো। তবে এটাকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অথচ রোগমুক্ত থাকার প্রথম উপায় হচ্ছে প্রতিরোধ করা।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমাদের জীবনযাপনের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের খাবার আর তার ভেতরে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের একটি বিরাট ভূমিকা আছে। চিকিৎসকেরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যে খাদ্য উপাদানের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেন, সেটি হলো জিঙ্ক। এটি শরীরে অল্প পরিমাণে লাগে। তাই বলে একে মোটেও হেলাফেলা করা যাবে না। প্রত্যেকেরই উচিত রক্তে জিঙ্কের স্বাভাবিক মাত্রা যাতে বজায় থাকে, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা।

করোনাভাইরাস ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। ফুসফুসের মধ্যে টাইটোনিমোসাইড বা টি সেলে ভাইরাস বংশবিস্তারের জন্য উপযুক্ত স্থান। যখন শরীরে কোনো ভাইরাস ঢোকে, তখন প্রথমে আমাদের শরীরে থাকা বিভিন্ন কোষ সক্রিয় হয়ে ওঠে। আর এই কোষগুলোই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে, তাদের কোষ সক্রিয়তাও বেশি থাকে। আবার অনেক সময় ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে শরীর প্রচুর পরিমাণে কোষ ছাড়তে থাকে। এই অবস্থাকে শরীরে সাইটোকাইন স্ট্রম বলে। ফলে, শরীর আরও অসুস্থ হয়ে যায়। তখনই রোগীকে আইসিইউতে নিতে হয়। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রধান কার্যকর উপাদান হচ্ছে জিঙ্ক।

এ ছাড়া যারা একেবারে খেতে পারে না বা মুখে রুচি নেই, তাদের জিঙ্ক ওষুধ দেওয়া হয়। জিঙ্ক মুখের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে জিঙ্ক বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ট্যাবলেটের পাশাপাশি আমরা পেতে পারি মাংস, গরুর কলিজা, দুধ, ডিমজাতীয় খাবারে।

ফ্লু বা সর্দি-কাশি উপসর্গে জিংকের বেশ উপকারিতা রয়েছে। জিংক-সমৃদ্ধ খাবারগুলো হচ্ছে আদা, রসুন, ডাল, বিন্স, বাদাম, সামুদ্রিক মাছ ইদ্যাদি। বাজারে লজেন্স আকারে জিংক সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন ২-৩ ঘণ্টা পর পর।

শরীরে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না থাকে, তাহলে আমাদের প্রচুর পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খান। ফলের রসের পরিবর্তে গোটা ফল চিবিয়ে খেলে ভালো। এতে পুষ্টি সাথে ফাইবারও পাওয়া যাবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন, ৮ থেকে ১০ গ্লাস। ফাস্টফুড, তেল-চর্বি ও মসলা জাতীয় খাবার যতটুকু সম্ভব পরিহার করুন।

ভিটামিনস ও মিনারেল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন সির প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে টক জাতীয় ফল, যেমন- লেবু, কমলা, মাল্টা, আমড়া, জাম্বুরা ইত্যাদি। এ ছাড়াও বাজারে ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়, যা ফ্লু উপসর্গে আপনি দিনে ১-২ বার চুষে খেতে পারেন। তবে প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া ভিটামিন সি-এর কার্যকারিতা বেশি।

আমাদের দেহের নিজস্ব ইমিউনিটি সিস্টেম রয়েছে, যা অনেক ইনফেকশন ও রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে আর খালি পেটে পানি পান করলে সকল প্রকার ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। শুধু তাই নয় সকালে খালি পেটে পানি পানের ফলে, মাথা ব্যথ্য, শরীলে ব্যথা, হার্টের সমস্যা, বাতের সমস্যা, স্থুলতা, ইত্যাদি রোগে সফলতা পাওয়া যায়। পানি রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এছাড়া ত্বক উজ্জ্বল রাখে। খালি পেটে পানি পান করার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে।

ভিটামিন ডি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মানব দেহের রোগ প্রতিরোধী কোষ সমূহ ভিটামিন পেলে বেশ উদ্দীপিত হয়। আর ভিটামিন ডি হলো বিখ্যাত, যা আমরা সূর্যর আলো থেকে পেয়ে থাকি। ভিটামিন ডি এর অভাব ঘটলে হাড় গঠন হয় না। এছাড়া বারবার ইনফেকশন হতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হীনতা জনিত রোগ হতে থাকে। তাই রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করতে আমাদের ভিটামিন ডি এর অভাব দূর করতে হবে। ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার যেমন- দুধ, পনির, দই, মাখন, সামুদ্রিক মাছ, কাঠবাদাম, পালং শাক, ডিম, শুটকি মাছ ইত্যাদি খেয়ে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করা যায়। এ ছাড়াও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ডিমের কুসুম, মাছের তেল, ওমেগা, গরুর কলিজা, চিজ এগুলো খেতে পারেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভাত-ডাল-মাছের পাশাপাশি ভিটামিন ও মিনারেলের জন্য প্রতিদিন টাটকা আনাজ, ফল খেতে হবে।

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন আদা, হলুদ, গোলমরিচ এবং অন্যান্য মশলা। এতে ভিটামিন ও মিনারেল থাকে

মধুতে এমন কিছু জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান রয়েছে, যেমন হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড)। তাই ফ্লু উপসর্গে মধু বেশ উপকারী। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সাবধানে খেতে হবে।

প্রোবায়োটিকস যেমন দই, চিজ ইত্যাদি খাবারে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

অতিরিক্ত মানসিক চাপে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। তাই মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।

শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে শরীরচর্চা অপরিহার্য। বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন আমরা সবাই ঘরে অবস্থান করছি। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট এবং বাচ্চাদের অন্তর ১ ঘণ্টা শরীরচর্চা করা উচিত। ঘরে থেকে আপনি যা করতে পারেন হাঁটাহাটি, সাইক্লিং, ইয়োগা, ওয়েট শিফ্টিং, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা, এমনকি নফল নামাজ পরাও আপনার শরীর চর্চার উপায় হতে পারে।

ধূমপান, সরাসরি আপনার শ্বাসতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যেহেতু করোনা ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রের রোগ, এতে সংক্রমের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই ধূমপান বাদ দিন ও মদ্যপান পরিহার করুন।

শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট রাখতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার বিকল্প নেই। খাবার পরিমিত খান ও শরীরিকভাবে সচল থাকুন।

ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘণ্টা করে ঘুমনোর চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খুবই জরুরি।

ফুসফুসের সমস্যা এড়াতে গ্যাস-অম্বল না হয়, এমন খাবার খাওয়া উচিত। গলার সমস্যা কমাতে গরম পানি পান করুন। নিয়ম করে দিনে কয়েক বার গার্গল করতেই হবে। ফুসফুস ঠিক রাখতে জোরে শ্বাস নিয়ে নাক দিয়ে আস্তে ছাড়তে হবে। এক নিঃশ্বাসে কত সংখ্যা পর্যন্ত গুনতে পারা যাচ্ছে, তা দেখতে হবে।

করোনাভাইরাস রোগের সংক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচাতে চাই নিজের ও আশপাশের পরিবেশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। নির্দিষ্ট সময় পর পর হাত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্যবহার্য জিনিপত্র জীবাণুনাশক পদার্থ দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। দরজার হাতল, সুইচ, লিফটের বাটন জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার রাখুন ও মাস্ক ব্যবহার করুন।

(ঢাকাটাইমস/৬ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :