ভালো দাম পাওয়ায় খেত থেকে হালি পেঁয়াজের বাল্ব তুলে বিক্রি করছেন কৃষকরা

বাজারে মসল জাতীয় ফসল পেঁয়াজের দাম আকাশছোঁয়া। প্রতিমণ পেঁয়াজ ৩২শ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ নিয়ে হাটে গেলেই পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারছেন কৃষকরা। আর সেই সুযোগটি হাত ছাড়া করতে নারাজ পেঁয়াজ চাষে বিখ্যাত ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার চাষিরা। ভালো দামের আশায় কৃষকরা ক্ষেত থেকে হালি পেঁয়াজের ছোট ছোট বাল্ব (উত্তোলন অনুপযোগী) উত্তোলন করে বাজারে নিয়ে বিক্রি করে ফেলছেন। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। মাত্র তরতাজা হয়ে উঠছে চারাগুলো। চারার গোড়ায় নামতে শুরু করেছে পেঁয়াজের বাল্ব। যা এখনো উত্তোলনের উপযোগী হয়নি। কিন্তু উত্তোলন অনুপযোগী সেই পেঁয়াজের বাল্ব উঠাচ্ছেন চাষিরা।
পেঁয়াজ চাষিরা জানান, আরও একমাস পর পেঁয়াজ উত্তোলনের সময় হবে। বর্তমানে পেঁয়াজ খেত পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেকে। কেউ কেউ ভালো ফলনের আশায় এখনো খেতে সার এবং ওষুধ ছিটাচ্ছেন। কিন্তু বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি পেয়ে ভালো ফলন হওয়ার আগেই অনেক কৃষক তাদের খেত থেকে পেঁয়াজের গুটি উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন।
তারা আরও জানান, বর্তমানে প্রতিবিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ ফলন হচ্ছে। আর এই একবিঘা জমির পেঁয়াজ আগামী একমাস পর উত্তোলন করলে ৮০ থেকে ১০০ মণ ফলন হবে। কৃষকদের ধারণা আগামী একমাস পর পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। তাই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার সকালে সালথার হিংসপ্রতাব গ্রামের পেঁয়াজ চাষি জলিল মাতুব্বর বলেন, আমি দেড় বিঘা জমিতে হালি পেঁয়াজ চাষ করেছি। বর্তমানে পেঁয়াজের অনেক দাম পাচ্ছি। তাই জমি থেকে পেঁয়াজ উঠিয়ে ফেলছি। দেড় বিঘা জমিতে ১০০ মণের মতো পেঁয়াজ পেয়েছি। সব পেঁয়াজই বিক্রি করে দিয়েছি। তাতে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো পেয়েছি। এতে অনেক লাভ হয়েছে আমার।
মো. রহিছ মাতুব্বর ও জসিম মাতুব্বর নামে দুই সহোদর পেঁয়াজ চাষি বলেন, গত ৪-৫ দিনে আমরা চার বিঘা জমির পেঁয়াজ উত্তোলন করেছি। যদিও ফলন কম হয়েছে। তারপরও প্রতি বিঘায় ৫৫ থেকে ৬০ মণ করে পেঁয়াজ পেয়েছি। বাজারে প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৩৬শ থেকে ৩৮শ টাকা করে। চার বিঘার জমির পেঁয়াজ বিক্রি করে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা পেয়েছি। একমাস পর পেঁয়াজ উত্তোলনের মৌসুম শুরু হবে তখন বাজারে দাম কমে যাবে। সেই সময় এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারতাম না। তাই আগে ভাগে পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করেছি। অনেকে পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করে লাভবান হয়েছে বলে জানান তারা।
সালথা বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ হোসেল মাহমুদ বলেন, বর্তমানে বাজারে যে পেঁয়াজ আসছে তা ঘরে মজুদ করে রাখার মতো না। এগুলো ঘরে রাখলে পচে যাবে। তাই আমরা বাজার থেকে কিনে নগদই বিক্রি করে ফেলি। এখন প্রতিমণ পেঁয়াজ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে কিনছি।
তিনি আরও বলেন, দাম ভালো পেয়ে কৃষকরা এসব পেঁয়াজ বাজারে এনে বিক্রি করছে। দেশে চাহিদা থাকায় আমরাও বাধ্য হয়ে ক্রয় করছি।
সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার বলেন, বীজতলা থেকে উৎপাদিত চারা রোপণের পর পেঁয়াজের পুরো বাল্ব তৈরি হতে ১০০ দিন সময় লাগে। বর্তমানে ৬০ থেকে ৬৫ দিন চলছে। এখন পেঁয়াজের চারা বেড়ে উঠছে। পাতাগুলো এখনো তরতাজা। গোড়ে পেঁয়াজের বাল্ব নামতে শুরু করেছে মাত্র। বর্তমানে কোনোভাবেই হালি পেঁয়াজ উত্তোলনের সময় নয়। কীভাবে, কারা উত্তোলন করছে জানি না।
তিনি জানান, পেঁয়াজ উত্তোলনের উপযুক্ত সময় আরও একমাস পর। তখন পেঁয়াজের পাতা শুকিয়ে যাবে। পেঁয়াজের বাল্বগুলো পেকে অনেক বড় ও শক্তিশালী হবে। যা সারাবছর ঘরে রাখা যাবে।
(ঢাকাটাইমস/০১মার্চ/প্রতিনিধি/পিএস)

মন্তব্য করুন