চুয়াডাঙ্গায় গমের চাহিদা বাড়লেও ভুট্টা চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা

আহসান আলম, চুয়াডাঙ্গা
 | প্রকাশিত : ১৫ মার্চ ২০২৪, ১৬:৩৭

আগের তুলনায় গমের চাহিদা অনেক বেড়েছে, তবে দিন দিন গম উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছে চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা। আগামীতে গম উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গম আবাদে আশানুরূপ লাভবান হতে পারছেন না তারা। তাই গম আবাদের পরিবর্তে ভুট্টার দিকে ঝুঁকছেন জেলার কৃষক। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এই এলাকায় গমে ব্যাপক হারে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। কৃষি অফিস ২০১৭, ২০১৮-২০১৯ এই তিন বছর কৃষকদের গমের আবাদ থেকে নিরুৎসায়িত করা হয়। তখন থেকে কৃষকরা ভুট্টার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৩ বছর বন্ধ থাকার পর ২০২০-২০২১ অর্থবছর থেকে আবারো চাষিদেরকে গমের আবাদে উদ্বুদ্ধ করা শুরু হয়। তখন থেকে জেলায় সামান্য আকারে শুরু হয় গমের আবাদ। চলতি মৌসুমে গমের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা এক হাজার ৬৮ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫১ হেক্টর জমিতে, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৬৯০ হেক্টর জমিতে, দামুড়হুদা উপজেলায় ১৭০ হেক্টর জমিতে ও জীবননগর উপজেলায় ১৫৭ হেক্টর জমিতে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১০২৭ হেক্টর জমিতে।

এরমধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৬০ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় ৪৯৬ হেক্টর, দামুড়হুদায় ১৬২ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৩০৯ হেক্টর জমিতে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে জেলায় ১০০৭ হেক্টর জমিতে গমের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে সদর ৫০, আলমডাঙ্গায় ৪৫১, দামুড়হুদায় ২১৬ ও জীবননগর ২৯০ হেক্টর জমিতে। চলতি বছরেও জেলায় ১০০৭ হেক্টর এর মধ্যে অর্জন হয়েছে ৯৩২ হেক্টর। এর মধ্যে সদরে ৫০, আলমডাঙ্গায় ৪৩৯, দামুড়হুদায় ২২০ ও জীবননগর উপজেলায় ২২৩ হেক্টর জমিতে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কৃষক হাফিজুর রহমান জোয়ার্দ্দার ও রাজু আহম্মেদ জানান, তারা বারি ৩২ জাতের ৩৩ শতক করে গমের আবাদ করেছেন। গত বছর সমপরিমাণ জমিতে গমের আবাদ করেছিলেন। ১৬ মণ হারে ফলন হয়েছিল। তারা জানান, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন ভালো হবে।

তারা আরো জানান, বাজার মূল্য ভালো পেলে গমের আবাদ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে।

দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের কৃষক আবুল বাশার বলেন, তিনি প্রতিবছর গমের চাষ করতেন ২০১৭-২০১৭ অর্থবছরে তার আড়াই বিঘা জমিতে আবাদ করেছিলেন সে বছর খেতে ব্যাপক হারে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হলে পুরা খেত নষ্ট হয়ে যায় এতে তিনি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। পরে কৃষি বিভাগ থেকে কয়েক বছর গম চাষ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। পরে তিনি সে জমিতে ভুট্টার আবাদ করেন এতে সে ভালো লাভবান হয়। সেই থেকে একই ভাবে ভুট্টার চাষ করে আসছিল। চলতি বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি আড়াই বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছেন গম খুব ভালো হয়েছে ইতোমধ্যে গম ফুলে গেছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার এই গম চাষে ভালো লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।

একই উপজেলার নতুন বাস্তপুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম জানান, তিনি চলতি মৌসুমে ৪২ শতাংশ জমিতে বারি-৩৩ জাতের গমের আবাদ করেছেন। গম কাটার সময় হয়েছে। আশা করি ১৬ থেকে ১৮ মণ গম পাবো। অন্যান্য খেতের তুলনায় গমে সেচ কম লাগে। তিনি জানান, বর্তমানে পুরাতন গম ১৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। নতুন গম উঠলে দাম আরো কমে যাবে।

তিনি আরও জানান, ভালো বীজ ও শ্রমিক সংকট এবং অন্য ফসলের তুলনায় ফলন ও লাভ কম হওয়ায় গম চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন কৃষক। পাশাপাশি গমের তুলনায় ভুট্টায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় ভুট্টার দিকে ঝুঁকছেন কৃষক।

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার অভিজিৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ পাশের জেলাগুলোর গমখেতে ব্যাপকহারে ব্লাস্ট ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তখন থেকে কয়েক বছরের জন্য গমের চাষ বন্ধ রাখার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। এখন আবারো তাদেরকে গমের আবাদ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ২২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, চুয়াডাঙ্গায় ব্যাপক ভুট্টার আবাদ হওয়ায় গমের এরিয়া কিছুটা কমেছে। গত বছর শীত বেশি সময় থাকায় গমের আবাদ ভাল হয়েছিল। শীত দীর্ঘ হলে গমের ফলন ভাল হয়। চলতি মৌসুমে প্রায় ৯০ দিন শীত দেখা গেছে। আশা করছি চলতি মৌসুমে গমের উৎপাদন ভালো হবে। গমের উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৪.০৩ ম্যাট্রিক টন।

তিনি জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৩ হাজার ৭৫৫ দশমিক ৯৬ মেট্টিকটন গম উৎপাদন হবে আশা রাখি।

তিনি আরো জানান, যেকোনো ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে শীতের দৈর্ঘ্য একটা বড় বিষয়। গমের আবাদ বৃদ্ধির জন্য প্রণোদনা ব্যবস্থা থাকার পরও অতিরিক্ত আবাদযোগ্য জমি পড়ে না থাকায় গমের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে না চুয়াডাঙ্গায়।

(ঢাকা টাইমস/১৫মার্চ/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :