শেরপুরে প্রাচীন মসজিদের কষ্টি পাথরের ফলক চুরির কিনারা হয়নি ৩ মাসেও

শেরপুরে অবস্থিত প্রায় ৪২০ বছরের পুরনো ঘাগড়া খান বাড়ি মসজিদের চুরি যাওয়া মহামূল্যবান কষ্টি পাথরের ফলকটি গত তিন মাসেও উদ্ধার হয়নি। এ ঘটনায় জড়িত চোর চক্রটিকে আইনের আওতায় এনে ফলকটি উদ্ধার করে যথাস্থানে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। অন্যদিকে ফলকটি উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ বিভাগ।

জানা যায়, শেরপুর জেলা শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের ঘাগড়া লস্কর গ্রামে মোঘল স্থাপত্যকলার অনুপম নিদর্শন ঐতিহাসিক খান বাড়ি মসজিদটির অবস্থান।

সরেজমিনে গেলে স্থানীয় হাজী মোতালেব মিয়া বলেন, মোঘল শাসনামলের ১৬০৪ সালে এই মসজিদটি নির্মিত হয়। এর গায়ে যেসব নিদর্শন পাওয়া গেছে সে অনুসারে বক্সার বিদ্রোহীদের নেতা হিরোঙ্গী খাঁর বিদ্রোহের সময় মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালিন সময়ে আজিমোল্লাহ খান ৫৮ শতাংশ জমি মসজিদটির জন্য ওয়াকফ করে দেন। এরমধ্যে ৪১ শতাংশ জমি জুড়ে রয়েছে কবরস্থান। পর্যায়ক্রমে এটি প্রাচীন স্থাপত্য হিসেবে দেখভালের জন্য ২০০৫ সালে যাদুঘর ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এর দায়িত্ব নেয়। কিন্তু স্থায়ীভাবে মসজিদটিতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কোন জনবল নিয়োগ করা হয়নি।

মাওলানা আকবর আলী বলেন, ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অফিস থেকে মাঝে মধ্যে লোকজন এসে মসজিদের খোঁজখবর নিতেন। এছাড়া মসজিদের খাদেম ও ইমাম সাহেব থাকতেন মসজিদের বাইরে। খান বাড়ির উত্তরাধিকারী কামরুজ্জামান খান ও আফজাল হোসেন খানের ছেলেরা মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ঘটনার দিন গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতের কোন এক সময় কে বা কারা মসজিদের প্রধান দরজার উপরে বাঁধাই করা কষ্টিপাথরের মহামূল্যবান ফলকটি চুরি করে নিয়ে যায়। ওই ফলকটিতে আরবি ভাষায় মসজিদের প্রতিষ্ঠাকাল এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খোদাই করে লেখা ছিল।

স্থানীয় হোসেন মোল্লা, আসগর আলী ও কেরামত মিয়া বলেন, ১৯ ডিসেম্বর ভোরে ফজরের সময় নামাজ পড়তে এসে এলাকার মুসল্লিরা দেখেন কষ্টিপাথরের ফলকটি আর নেই। মসজিদের ওই মূল্যবান ফলকটি চুরি যাওয়ার ঘটনায় গ্রামবাসীর মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর আহমদ মিয়া বলেন, কষ্টি পাথরের ওই ফলকটির বর্তমান বাজারদর প্রায় কোটি টাকা। প্রায় ৪২০ বছরের পুরনো এই মসজিদে চুরির ঘটনায় গ্রামবাসী হতবাক। তিনি দ্রুত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার এবং মসজিদের মহামূল্যবান কষ্টিপাথরের ফলকটি উদ্ধার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

আবেদ আলী নামে একজন বলেন, চুরির ঘটনা জানার পরপর ১৯ ডিসেম্বর সকালে মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ময়মনসিংহের যাদুঘর ও প্রতœতত্ত¡ বিভাগকে বিষয়টি অবহিত করে। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ থেকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ফিল্ড অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। পরবর্তীতে তিনি ঝিনাইগাতী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

প্রতœতত্ত¡ বিভাগের ফিল্ড অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ফলকটি উদ্ধারের জন্য আমরা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।

ঝিনাইগাতী থানার ওসি বছির আহমেদ বাদল বলেন, মসজিদের নাম ফলকটি উদ্ধারের জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে।

এ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভূঁইয়া বলেন, চুরি হওয়ার বিষয়টি থানা পুলিশ দেখভাল করবে। তারপরও আমার তরফ থেকে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে ।

(ঢাকাটাইমস/২১মার্চ/এআর)