মাঠে-ঘাটে ভাঁটের সৌরভ

এস কে সরকার, নিয়ামতপুর (নওগাঁ)
 | প্রকাশিত : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৩

কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতের বুড়ি বিদায় নিয়েছে। এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। হিমশীতল প্রকৃতি যেন ফিরে পেয়েছে জীবনের ছোঁয়া। কোকিলের কুহুতান আর বাহারি ফুলের সৌরভে মেতে উঠেছে বসন্তের বাউলা বাতাস।

শিমুল পলাশের ভিড়ে সুবাশ ছড়িয়ে যাচ্ছে ভাঁটফুল। নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার রাস্তার দুই পাশে, ঝোপঝাড়ে, পুকুরপাড়ে, পতিত জমিতে থোকায় থোকায় ফুটতে শুরু করেছে ভাঁটফুল।রাতের আঁধারেও ফুলটির মধুগন্ধ ভেসে বেড়ায় চারপাশে। এটি একটি বুনোফুল। অঞ্চলভেদে এ ফুল ভাঁট, ভেটি, ভাইট, বনজুঁই বা ঘেটু নামে পরিচিত।

ভাঁটের বৈজ্ঞানিক নাম Clerondendron viscosum। ভাঁট গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। গাছের প্রধান কাণ্ড খাড়া, সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। পাতা ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। ডালের শীর্ষে পুষ্পদণ্ডে ফুল ফোটে। পাপড়ি সাদা, তাতে বেগুনি মিশেল আছে। ভাঁট মিয়ানমার ও ভারতীয় প্রজাতি।

বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত 'বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা নওগাঁ' বইয়ে লেখা আছে নওগাঁ অঞ্চলে প্রতিবছর চৈত্র মাসের ১ তারিখ থেকে চৈত্র মাসের সংক্রান্তি পর্যন্ত একমাস ধরে প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় বালিকারা একত্র হয়ে বসনবুড়ির পূজা করে। পূজার পুরোহিত ওই বালিকারা। বসনবুড়ির কোনো মূর্তি নেই। এর প্রতীক স্বরূপ আটিয়া/ বিচি কলার গাছকে পূজা করা হয়। বাড়ির পেছনে কোনো স্থান পরিষ্কার করে গোবর দিয়ে মুছে একটি মাঝারি আকৃতির বিচি কলার গাছ পুঁতে দিয়ে তার গোড়াতে মাটি দিয়ে বেদী তৈরি করতে হয়। পূজার ফুল হিসেবে জঙ্গলে ফুটে থাকা ভাঁটফুলসহ আকন্দ ফুল, কাঁটাগর ফুল, কাঠমল্লিকা ফুল, করবী ফুল, দই নাচুনী (ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ), ভূঁই ওকরা (ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ) ব্যবহৃত হয়। মূলত বসন্তকালে জঙ্গলে যেসব ফুল ফুটে সে সব ফুলই দেবীর পূজায় ব্যবহৃত হয়।

গত কয়েকদিন আগে উপজেলার ভাবিচা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন কিশোরী ঝুড়িতে ভাঁটফুল নিয়ে বসনবুড়ির পূজা করছে।

কিশোরী পূরবী সরদার, বৈশাখ সরদার জানালো, তারা পথের ধারে, ঝোপঝাড়, পুকুরপাড় থেকে এই ভাঁটফুল ফুল সংগ্রহ করেছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তারা এইফুল তুলে পূজা করে।

নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যার প্রভাষক মো. মোদাচ্ছের হক বলেন, পলাশ, শিমুলের মতো বিশালত্ব না থাকলেও ভাঁট ফুলের সৌরভ বসন্তজুড়েই রাঙিয়ে যায় বন। কবির মনকে করে তোলে আরও কাব্যময়। ভাঁট ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। সাধারণত চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত প্রায় সারা দেশেই ভাঁটফুলের সুবাস ও সৌন্দর্য আমাদের মাতিয়ে রাখে। এটি গ্রামবাংলার অতিপরিচিত একটি বুনো ফুল।

(ঢাকাটাইমস/৮এপ্রিল/এআর/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :