অনিশ্চয়তা কাটিয়ে সেই কুন্ডুবাড়ী মেলা শুরু

অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে চার স্তরের নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী কুন্ডুবাড়ী মেলা। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সকালে শুরু হওয়া মেলা চলবে আগামী শনিবার পর্যন্ত। আড়াই শ বছর ধরে এই মেলা প্রতি বছর কালীপূজা ও দীপাবলি উপলক্ষে আয়োজিত হয়ে আসছে।
মাদারীপুরের কালকিনিতে মেলা উপলক্ষে উপজেলার ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে কুন্ডুবাড়ি পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উভয় পাশে এক কিলোমিটার জুড়ে দোকানপাট বসেছে।
এবার মেলা আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। মেলায় অশ্লীলতা, চাঁদাবাজি, মাদক, জুয়াসহ ৯টি অভিযোগ এনে কিছু মানুষ মেলা বন্ধ ঘোষণা করেছিল। এ ঘটনায় পুরো জেলাসহ সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে মেলার বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এবং কালকিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস কার্যালয়ে আলেম সমাজ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সাথে কয়েক দফা সভা করে প্রশাসন। সবার সম্মতিতে তিন দিনের মেলার অনুমোদন দেয় জেলা প্রশাসন।
তবে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে এ মেলার ইজারা বাতিল করা হয়। মেলার এলাকায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব নেয় প্রশাসন।
এদিকে মেলাস্থল পরিদর্শন করেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল সেনানিবাসের কর্নেল তারিক মাহমুদ, লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার দাশ, মেজর মো. মুনতাসীর মামুন গৌরব, ক্যাপ্টেন আবু আমিন, কালকিনি থানার ওসি মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর প্রমুখ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি পৌর এলাকার গোপালপুরের কুণ্ডুবাড়িতে ১৭৮৩ সালের নভেম্বরে দীপাবলি ও শ্রীশ্রী কালীপূজা উপলক্ষে দীননাথ কুণ্ডু ও মহেশ কুণ্ডু এই মেলার প্রবর্তন করেন। তাই কুন্ডুদের বংশের নামানুসারে এই মেলা নামকরণ করা হয় কুণ্ডুবাড়ির মেলা।
দীপাবলির পরের দিন এই অঞ্চলের বিভিন্ন কালি প্রতিমা জড়ো করা হতো। এর মধ্যে যাদের প্রতিমা সেরা হতো তাদের পুরস্কার দেওয়া হতো। সেই সময় চিত্তবিনোদনের জন্য পুতুলনাচ, কবিগান, জারিগান, পালাগান, নৌকাবাইচের আয়োজন করা হতো। কালের বিবর্তনে পালাগান, জারিগান, নৌকাবাইচ বন্ধ থাকলেও নাগরদোলার আয়োজন এখনো আছে।
বর্তমানে শুধু কুণ্ডুবাড়ি জুড়ে নয়, প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেলা বসে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত দোকানি বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন। কাঠের বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্রের জন্য এই মেলা বিখ্যাত। মেলায় মাদারীপুর ছাড়াও ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, যশোর, নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা তাদের মাটির, বাঁশের ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন মালামাল ট্রাকযোগে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন।
মেলায় আসা সমীর নামের এক কাঠ ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা গত ৫৫ বছর ধরে এই মেলায় আসবাবপত্র নিয়ে আসছি। এ মেলায় কাঠের আসবাবপত্র বেশি বিক্রি হয়। ক্রেতাদের চাহিদা বুঝে বিভিন্ন ডিজাইনের আসবাবপত্র মেলায় নিয়ে আসি। অনেক কাঠের দোকান বসেছে মেলায়।’
মেলাস্থলে ঘুরতে আসা বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী বলেন, দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ এ মেলা দেখতে অনেক দূর থেকে এসেছেন তারা। এত বড় মেলা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না।
মেলার আবেদনকারী স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘চলতি বছরে একটু সমস্যার মুখোমুখী হলেও আমরা মেলার অনুমোদন পেয়েছি, তাই প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। দীপাবলি ও শ্রীশ্রী কালীপূজা উপলক্ষে আমাদের পূর্বপুরুষরা মাত্র চার একর জমির ওপর এই মেলার আয়োজন করেন। পরে ধীরে ধীরে এই মেলা আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ বছর মেলাকে কেন্দ্র করে সার্বক্ষণিক চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’ প্রতি বছর মেলায় ৮-১০ কোটি টাকার পণ্যসামগ্রী বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার দাশ জানান, পূজা উদযাপন কমিটি, সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মেলা পরিচালিত হচ্ছে। মেলায় আগত দোকানি, দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করছে প্রশাসন।
(ঢাকাটাইমস/৩১অক্টোবর/মোআ)

মন্তব্য করুন