টাকা নিয়ে গেলেও বিদেশি ক্রিকেটারদের কেউ দরজা খোলেননি: তাসকিন

দেখতে দেখতেই এখন পর্যন্ত দশটি আসর শেষ হয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল)। এখন চলছে ১১তম আসর। তবে প্রত্যেক আসরের যেনো সৃষ্টি হয় নতুন নতুন বিতর্ক। বিতর্ক আর বিপিএল যেনো একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। এবারের আসরেও তার ব্যতিক্রম হয়নিনতুন নতুন সব বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে এবারের আসর।
তবে রবিবার (২৬ জানুয়ারি) রংপুর রাইডার্স বনাম দুর্বার রাজশাহীর ম্যাচে যে নাটক দেখা গেল, তা হার মানিয়েছে বিপিএলের আগের আসরের নাটকীয়তাকে। পারিশ্রমিক না পাওয়ায় এদিন ম্যাচ বয়কট করেছেন রাজশাহীর বিদেশি ক্রিকেটাররা। উপায় না পেয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে কোনো বিদেশি ছাড়া মাঠে নেমেছে তাসকিন আহমেদের দল।
বিপিএলের বাইলজ বলছে, কোনো দলকে মাঠে নামতে হলে সর্বনিম্ন দুজন বিদেশি করা খেলোয়াড় নিতেই হবে। তবে রাজশাহীর কাছে সেই সুযোগও ছিল না। কারণ, পারিশ্রমিক না পাওয়া বিদেশি ক্রিকেটাররা কোনো কথাই শুনতে রাজি ছিলেন না। বারবার অনুরোধ করা হলেও হোটেল রুমের দরজাই নাকি খোলেননি তারা। ফ্র্যাঞ্চাইজির অনুরোধে শেষ মুহূর্তে দেশি খেলোয়াড়দের নিয়েই মাঠে নামতে অনুমতি দেয় বিসিবি।
পারিশ্রমিক জটিলতা এবং মাঠের বাইরের অসংখ্য ঝামেলা নিয়েও অবশ্য দৃঢ়তা দেখিয়েছেন রাজশাহীর দেশি খেলোয়াড়রা। বোলারদের নৈপুণ্যে লো স্কোরিং ম্যাচে টেবিল টপারদের হারিয়েছে তারা। তবে তাতে ফ্র্যাঞ্চাইজির অপেশাদারিত্ব ঢাকা পড়েনি একটুও।
অসাধারণ নৈপুণ্যে দলকে ম্যাচ জেতানোর পাশাপাশি আজ বিপিএলের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ডও নিজের করে নিয়েছেন তাসকিন। নিজের এবং দলের সাফল্যে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ শেষে অনেক প্রফুল্ল ছিলেন রাজশাহীর কাপ্তান। তবে সংবাদ সম্মেলনে এসে রীতিমতো প্রশ্নবাণের মুখেই পড়তে হয়েছ তাকে।
তবে স্বভাবসুলভ হাসি নিয়েই দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর কথা জানালেন তাসকিন, 'আজকে দিনের শুরু থেকেই অনেক নাটক দেখেছি। আমি যতটুকু জানি, শেষের দিকে নাকি টিম ম্যানেজমেন্ট টাকা নিয়েও বিদেশি খেলোয়াড়দের দরজায় কড়া নেড়েছে। কেউ নাকি দরজাই খোলেনি। শেষ মুহূর্তে তো শুধু দেশি খেলোয়াড়রাই ছিলাম। শুরুতে কিছুটা হতাশ ছিলাম। তবে দলের সবার প্রচেষ্টায় দিনশেষে একটা সাফল্য এসেছে।'
ম্যাচের ৩-৪ ঘণ্টা আগেও গুঞ্জন ছিল, পারিশ্রমিক জটিলতার কারণে নাকি রাজশাহীর পুরো দলই মাঠে আসবে না। তবে ২ ঘণ্টা আগে রাজশাহীর সাবেক অধিনায়ক এনামুল হক বিজয় এক পোস্টে জানান, সবকিছু ঠিক আছে এবং তার দেয়া ছবিতে ইঙ্গিত ছিল পাওনা পারিশ্রমিক পেয়ে যাওয়ারও। ম্যাচশেষে তাসকিনও জানান, পারিশ্রমিক পেয়েছেন।
তবে রাজশাহীর পারিশ্রমিক নিয়ে নয়ছয় তো আসরের শুরু থেকেই। আর ম্যাচ খেলতে পুরো দলের মাঠে না যাওয়ার গুঞ্জনটাও যে শুধু গুঞ্জন না সেটাও অনেকটা স্পষ্ট তাসকিনের কথায়। সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহীর অধিনায়ক জানান, বিসিবির কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েই নাকি মাঠে গিয়েছিলেন তারা।
তিনি বলেন, 'মাঠে যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে শুনি বিদেশি খেলোয়াড়রা কেউ যাবে না। তখন আমাদের বোর্ড থেকে ফোন করে বলা হয়, ''তোমরা আসো, অন্তত খেলো।'' ফারুক সাহেব (বিসিবি প্রধান) আমাদের বলেছেন, ''টাকা না দিলে বিসিবি দিবে, তোমরা মন দিয়ে খেলো।'' বিদেশি খেলোয়াড়দেরও ফোন করা হয়েছিল, তাদেরও বলা হয়েছিল, পেমেন্ট ইস্যু না, ক্লিয়ার হয়ে যাবে। এরপরেও তারা আসেনি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি তাদের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা বলেছে টাকা না দিলে আমরা খেলব না। আমার আর কী করার। আমিও তো খেলোয়াড়ই। পরে আমরা বোর্ডের কাছে অনুরোধ করেছি শুধু দেশীয় খেলোয়াড় নিয়ে খেলার সুযোগ দিতে। আমাদের জন্যও বিষয়টা তেমন সুখকর ছিল না। তবে আমাদের জন্যও তো নিজেদের প্রমাণ করার মঞ্চ এটাই। ম্যাচটা জিতে স্বস্তি পেয়েছি।'
পরের ম্যাচগুলোতেও বিদেশি খেলোয়াড় ছাড়াই খেলবেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তাসকিন বলেন, 'হোটেলে গিয়ে জানতে পারব। আশা করি, ম্যানেজমেন্ট যদি তাদের টাকা দিতে পারে এবং তারা যদি আসে তাহলে দলের জন্য ভালো হবে। অন্তত ২-৩ জন বিদেশি খেলোয়াড় হলেও দলটা আরও শক্তিশালী হবে।'
গতকাল সকাল থেকেই অবশ্য আলোচনায় ছিল দুর্বার রাজশাহীর অপেশাদারিত্ব। পারিশ্রমিক নিয়ে নয়ছয় তো ছিলই, তার ওপর টুর্নামেন্টের মাঝে হুট করে আজ হোটেল পরিবর্তন করেছে দলটি। গুঞ্জন উঠেছে, হোটেলেও নাকি পাওনা বিল পরিশোধ করতে পারেননি রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজি। তবে তাসকিন বলছেন ভিন্ন কথা।
তাসকিন বলেন, 'আমাদের জন্য এটা নতুন এক্সপেরিয়েন্স, ম্যাচের দিন হোটেল পরিবর্তন। আমাদের নাকি বুকিং দেয়া ছিল শেরাটনে। কিন্তু ওয়েস্টিনে ছিলাম। শেরাটনে বুকিং দেয়ায় নাকি ওয়েস্টিনের সব রুম বুক হয়ে গেছে। পরে আমরা হোটেল পরিবর্তন করলাম'
(ঢাকাটাইমস/২৭ জানুয়ারি/এনবিডব্লিউ)

মন্তব্য করুন