ফেনী মুহুরী সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প
৫৬২ কোটি টাকা নয়ছয়, কাজে আসছে না প্রকল্প

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫৬২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অর্থায়নে প্রকল্পটি নয় ছয় করে বাস্তবায়ন করা হলেও কৃষকরা বলছেন কোনো কাজেই আসছে না এই প্রকল্প। বরং কৃষকের খরচ বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি। সঠিকভাবে কাজ না করে শত শত কোটি টাকা হরিলুটের অভিযোগ রয়েছে বলে জানান অনেকে। মাঠে আংশিক অবকাঠামো থাকলেও স্কিমগুলো কেন অকেজো হয়ে আছে তার কোনো জবাব নেই কর্তৃপক্ষের।
গত বছরের আগস্টে বিপর্যয়কর বন্যায় ফসলের এই মাঠে বুক পরিমাণ পানি থাকলেও এখন শুকিয়ে চৌচির। পানির অভাবে কৃষক আবাদ করতে পারছে না ধান-ফসল।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে কয়েক দফার বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে প্রকল্পটি। পুনরায় স্কিমগুলো মেরামত করে সেচের আওতায় আনার জন্য কাজ চলমান।
জানা যায়, কৃষকের এমন দুরবস্থা নিরসনে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ৫৬২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অর্থায়নে আওয়ামী সরকার মুহুরী সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিলেন। বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে প্রিপেইড মিটার ব্যবস্থায় ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের মাধ্যমে খাল থেকে জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করা হবে। কৃষক কম দামে পানি পাবেন। কিন্তু মাঠে গিয়ে দেখা যায় উল্টো চিত্র। অবকাঠামোর অস্তিত্ব ঠিক থাকলেও পানি সরবরাহের অধিকাংশ স্কিমই অকেজো। কোথাও বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার নেই, আবার কোথাও নেই মিটার।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে ফেনীতে মুহুরী সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। মাঝে করোনার কারণে বছর দুয়েক কাজ বন্ধ থাকে। ২০২৪ সালের জুনে কাজ শেষ হয়।
৫৩৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের পরিকল্পিত ৫৩৪টি স্কিমের মধ্যে চালু হয় মাত্র ১৩০টি। যেগুলো চালু হয়েছিল সেগুলোর সিংহভাগ এখন অকার্যকর।
ফেনীর পাঁচটি উপজেলা ও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু হয় এই প্রকল্প। কিন্তু তার ধারেকাছেও পৌঁছানো যায়নি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ হাজার হেক্টর জমিও আসেনি সেচের আওতায়।
ফেনী সদর উপজেলার কালিদহের কৃষক কবির আহম্মদ বলেন, কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে কাজ করছে, কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না, উঠছে না পানি।
বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে প্রিপেইড মিটার ব্যবস্থায় ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের মাধ্যমে খাল থেকে জমিতে সেচের পানি সরবরাহ পদ্ধতি চালু করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ফেনীতে মুহুরী সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়।
পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশন বলছে, কৃষক এখনো প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন না। আট শতাধিক পাম্পের বেশির ভাগ অকেজো। কর্তৃপক্ষ কাজ না করে বন্যার অজুহাত সামনে এনেছেন। অপরদিকে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন দ্রুত সেচব্যবস্থা সচল করতে না পারলে প্রভাব পড়বে আবাদে।
মুহুরী সেচ প্রকল্প পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাইন উদ্দিন কামরান বলেন, কাগজে-কলমে আট শর বেশি পাম্প থাকলেও দেড় শর বেশি পাম্প কখনোই চালু ছিল না। কর্তৃপক্ষ আগস্টের বন্যাকে ক্ষতির জন্য দায়ী করলেও প্রকল্পে লুটপাটের কারণেই এমন দশা।
কালিদহ এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু তৈয়ব বলেন, আগস্ট মাসের বন্যায় কৃষক ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সরকারিভাবে সার-বীজ ও প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, কিন্তু পানির অভাবে অনেক কৃষক সবজিসহ ধান চাষাবাদ করতে পারছেন না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষে কিছু স্কিম চালু হয়েছিল। কৃষক সুফলও পেতে আরম্ভ করেছিলেন। কিন্তু গত বছরের আগস্ট মাসের বন্যা পুরো প্রক্রিয়াকে এলোমেলো করে দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপক মাত্রায়। সেসব মেরামত করে চালুর চেষ্টা চলছে।
(ঢাকাটাইমস/৯ফেব্রুয়ারি/মোআ)

মন্তব্য করুন